বুধবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৪ ১৪৩১

শামীমের ওসমানের শপথ কাজে আসেনি

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : শপথ করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান। তবে আদতে তার সেই শপথ উপেক্ষিত হয়েছে। উল্টো প্রশাসন, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজ তার এই বক্তব্যের পর আরো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। 

 


প্রশাসনকে ইঙ্গিত করে শুক্রবার তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের এক পথসভায় শপথ করে বলেছিলেন কেউ গেম খেলার চেষ্টা করলে কিংবা তার নেতাকর্মীদের ফুলের আঁচড় দেয়ার চেষ্টা করলে ১ সেপ্টেম্বর থেকে নারায়ণগঞ্জ দাউ দাউ করে জ্বলবে। এছাড়া তিনি প্রশাসনের ব্যক্তিদের ইঙ্গিত করে বলেন, ‘প্রশাসনের ব্যক্তিরা এখন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হতে চান। 

 


তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছে, নারায়ণগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ায় তারা নারায়ণগঞ্জের অশান্ততার রূপ দেখেননি। নারায়ণগঞ্জে তার নেতাকর্মীদের টার্গেট করে নারায়ণগঞ্জে বিশেষ ষড়যন্ত্র চলছে।’

 

তবে শামীম ওসমানের ওসব কথার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার রাতে তার ছেলে অয়ন ওসমানের ছেলের সম্বন্ধী মিনহাজ উদ্দিন ভিকিকে এক সিএনজি ড্রাইভারকে মারধরের মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।   

 


তবে শামীম ওসমানের সব কথার উত্তর যেন পাওয়া গেলো রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চাষাঢ়ায় রাইফেল ক্লাবে পুলিশের ই-ট্রাফিকিং কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। 

 


এদিন পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি যেন প্রধান অতিথি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সামনেই সব উত্তর দিলেন। 

 


জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কারো বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথা বলবোনা। নিজে কাজ করে দেখাবো আমি কারো পকেটের কিংবা ব্যক্তির লোক নই। তিনি বলেন, আপনি যদি মাদক না সেবন করেন, আপনার ভাই যদি মাদকের ব্যবসা না করেন তাহলে তো আর এসপি সাহেবের ধরা লাগেনা। আর এসপি সাহেব ধরলেই অমুকের আত্মীয় হয়ে যাবে।’  

 


পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ একটি সুন্দর শহর হবে। এখানে ‘আর কোন সাত খুন হবেনা। আর কোন ত্বকী হত্যা হবেনা। আমরা সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। নারায়ণগঞ্জের মানুষ বিচার দিতে পারতো না! বিচারের দরজা বন্ধ ছিলো কিন্তু এখন আপনাদের জন্য সেই দরজা খোলা হয়েছে।আমরা ফ্লাট উদ্ধার করে দিচ্ছি, ভূমি উদ্ধার করে দিচ্ছি, ফ্যাক্টরি উদ্ধার করে দিচ্ছি। পুলিশ প্রশাসনের সকলেই এখন আপনাদের প্রতি স্বোচ্চার আছে। আমরা কোন দলবাজিতে জড়াতে চেষ্টা করছিনা।’ 

 

নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘আমরা এসপি হারুনের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব চাই। নারায়ণগঞ্জে কে আগুন জ্বালাবে? আগুন জ্বালালে ফায়ার ব্রিগেডও আছে। ফায়ার ব্রিগেড আগুন নিভিয়ে দেবে। কোন সমস্যা নেই। কারো কাছে মাথা নত করেতে চাই না আমরা। কারো হুমকির কাছে পুলিশ যেন মাথা নত না করে। পুলিশ একসময় পুলিশ ছিল। 

 


পুলিশ এখন জনগণের বন্ধু। জনগণের কাছাকাছি এসে প্রমাণ করতে হবে পুলিশ কোন গডফাদারের না। পুলিশ কোন সন্ত্রাসীর না। এছাড়া তিনি সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ব্যবহৃত অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান। তিনি বলেন, আমরা আর বঞ্চিত হতে চাই না। সন্ত্রাসমুক্ত নারায়ণগঞ্জ চাই। 

 


এই নারায়ণগঞ্জে সাতখুন দেখেছি, পাঁচখুন দেখিছি, বর্বরতা দেখেছি, অসভ্যতা দেখেছি, গডফাদারের রাজত্ব দেখেছি। গডফাদারের সন্ত্রাস মুক্ত নারায়ণগঞ্জ দেখতে চাই।’

 


মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, ‘প্রেসক্লাবের সভাপতি এড.মাহবুবুর মাসুম যখন বক্তব্যে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বললো তখন খুব হাতেতালি পড়লো। আসলে কথাগুলো খুব যুক্তিযুক্ত। 

 


তিনি বলেন, পুলিশ মাদকসহ ব্যাবসায়ীদের ধরবে আর তদবীর হবে ছেড়ে দেওয়ার তাহলে কিভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণ হবে। আইনশৃঙ্খলা উন্নতির লক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম করে সফলতা পাওয়ায় নারায়ণগঞ্জবাসীর আস্থা অর্জন করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।’ 

 


রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমপি শামীম ওসমানের পাশ থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত বিতর্কিত না সরে যান ততক্ষণ পর্যন্ত তার কোন হুঙ্কারই কাজে আসবেনা। শামীম ওসমানের কর্মী হিসেবে পরিচিত কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান, টেনু গাজী, মীর হোসেন মীরু নানা সুস্পষ্ট অপরাধে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। 

 


এছাড়া শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু, কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, মতিউর রহমান মতি, আরিফুল হক হাসান, আলী হোসেন আলাসহ আরো অর্ধডজন সমর্থকের বিরুদ্ধেও পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। অপরদিকে নারায়ণঞ্জের হারানো ভাবর্মূর্তি পুনরুদ্ধারে প্রশাসন অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করছে। জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন  তারা। 

 


এখন বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের অধিকাংশ যদি শামীম ওসমানের সমর্থক হন তাহলে এখানে কি  করার থাকতে পারে প্রশাসনের। নানা অপরাধে শামীম ওসমানের স্বজনরাও জড়িয়ে পড়ছেন। গেলো সপ্তাহে এতিম ভাইবোনের জায়গা উদ্ধার করে দেয় এসপি। 

 


যেটির সাথে শামীম ওসমানের কর্মী যুবলীগ নেতা শাহাদাৎ হোসেন সাজনু ও তার দুই বন্ধুর সংশ্লিষ্টতা পান এসপি। শামীম ওসমানের খুব কাছের নেতাকর্মী ও স্বজনরা যদি নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তবে প্রশাসন নির্বিকার হয়ে বসে থাকতে পারেনা।

 

আর ঠিক একারণে শামীম ওসমানের শপথের উল্টোপিঠে প্রশাসন, অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিগণ ও নাগরিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এমনটি নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে খুব বিরল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। 
 

এই বিভাগের আরো খবর