রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১

সাইফুল্লাহ বাদলের অপকর্মের সহযোগীরা পালিয়েছে

হাবিবুর রহমান

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২৪  

 

 

# মামলার পূর্বে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে বাসায় ছিলেন বাদল

 

ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সংগঠিত বিভিন্ন অপকর্মের মূল হোতা হচ্ছেন কাশীপুরের ইউপি ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম. সাইফুল্লাহ বাদল। তাছাড়া তিনি সাবেক ‘গডফাদার’ খ্যাত সাংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত থাকায় পুরো  ফতুল্লা জুরে অপরাধীদের মাফিয়া ডন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে উঠেছিলেন এই সাইফউল্লাহ বাদল। চাদাঁবাজ, ভুমিদস্যুতা, মাদককারবাড়ি, কিশোর গ্যাং, ঝুট সন্ত্রাসী, থানায় প্রভাব বিস্তার সহ সকল স্তরে তার আধিপত্য বিস্তার রয়েছে। 

 

কিন্তু ফতুল্লায় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী শামীম ওসমানের সাথে লবিং করে বেড়িয়ে প্রভাব তৈরি করে ফেলায় এবং তিনি বয়স্ক ও অসুস্থ হয়ে পরায় এককভাবে কাশীপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব নিয়ে নেন। কিন্তু সেই আগের মতোই প্রভাব করে ফতুল্লার আওতাধীন প্রতিটি সেক্টর থেকেই মাসে মোটা অংকের মাসোয়ারা পেতেন তিনি। পরবর্তীতে কাশীপুরে তৈরি করেন তার শক্ত প্রভাব বিস্তার। সেখানে তিনি তার সকল অপকর্মের প্রধান খলিফা হিসেবে ছিলেন, কাশীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আলী, সাধারণ সম্পাদক এম.সাত্তার, তার পিএস খ্যাত ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক রেহান শরীফ বিন্দু, বাদলের ছেলে নাজমুল হাসান সাজন, কাশীপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমান শ্যামল, 

 

৩নং ওয়ার্ড মেম্বার শামীম আহম্মেদ, ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা শ্যামল, বাদলের ভাগিনা সৌরভ, কাশীপুরের সকল স্কুল-মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ূন কবীরকে। এদের মাধ্যমেই  পুরো কাশীপুর জুড়ে অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী নেতা সাইফুল্লাহ বাদল। এদিকে কাশীপুরের বিভিন্ন মহল থেকে চাঁদাবাজির অর্থ বাদলের নামে সংগ্রহ করতেন তার পিএস খ্যাত নেতা রেহান শরীফ বিন্দু। এছাড়াও জমি দখলের কনট্রাক্টসহ বিচার শালিশের মাধ্যমে মোটা অংকের হাদিয়া আদায় করতেন এই বিন্দু ভুক্তভোগীদের থেকে। 

 

এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় সংগঠিত জুয়া এবং মাদকের টাকা বিন্দু তার লোকদের দিয়ে কালেকশন করতেন সে সময় হুন্ডা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কালেশনে পাশে থাকতেন বাদলের ভাগিনা সৌরভ। তা ছাড়া জায়গা দখলের কার্যক্রমের মধ্যে থাকতেন ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জুয়েল আহম্মেদ, কাশিপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শামীম মেম্বার, তার পিতা গিয়াস উদ্দিন, শামীম মেম্বারের ভাই সুমন। তার জোর পূর্বক এই বাদলের নামে বিভিন্ন জায়গা দখল করতেন। এমনকি খারা দলিলের মাধ্যমে নিজেদের নামে মিটিশন করে নিতেন। পরে তা বেশি দামে বিক্রি করে দিতেন। যা পুরোটাই সাইফ উল্লাহ বাদলের সাথে ভাগ করে নিতেন তারা। তা ছাড়া কাশিপুর উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও দারুছুন্নাহ মাদ্রাসার সভাপতি ছিলেন সেই সাইফউল্লাহ বাদল। 

 

সেখান থেকে প্রতি বছর সরকারকর্তৃক প্রদত্ত দরিদ্র তহবিল আসা টাকা আত্মসাত করে। স্কুলে অতিরিক্ত কোচিং এর নামে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের থেকে অনিয়ম করে ৮০০/- টাকা করে নেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আইডি কার্ড বাবদ ৩০০ টাকা অতিরিক্ত ফি নেওয়ার পরেও আইডি কার্ড দেওয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নামা টাকা আত্মসাৎসহ। প্রায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সর্বশেষ স্কুলের শিক্ষকের পদত্যাগের আন্দোলনের মাধ্যমে উজির আলী স্কুলের বিভিন্ন অনিয়ম বেড়িয়ে আসে। যেখানে সাবেক প্রধান শিক্ষক হুমায়ন কবির কোনভাবেই স্কুলের ফান্ডে থাকা পর খরচ হওয়ায় প্রায় ৩ কোটি টাকার হিসেবে দিতে পারেনি।

 

শুধু এখানেই সীবদ্ধ নয় বাদল তার ভাগিনা জেলা ছাত্রলীগ নেতা সৌরভের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতেন কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদ। সেখানে জন্ম সনদ সংশোধনের জন্য ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা করে নেতওয়াপ হয়। অথচ নেয়ার কথা ৫০ থেকে ১০০ টাকা। সরেজমিন ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দেখা যায়, সংশোধনের আবেদনের জন্য ১০০-১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এরপর বিনা ফিসে সনদ সরবরাহের কথা থাকলেও তারা ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকার বিনিময়ে সনদ দিচ্ছেন। এতে দেখা গেছে, তারা একটি সনদের জন্য ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। এর বাহিরে ও সরকারি নামে বাৎসরিক ট্যাক্সের নিয়ম করেছিলেন এই বাদল। প্রতি বাড়ি থেকে ২০০ টাকা করে যা কোন সরকারি নিয়মের আওতায় পরে না বলে ও শোনা দিয়েছিলো। যার প্রতি বছরে উঠতো প্রায় কয়েক কোটি টাকা। যেটার দায়িত্ব হিসেবে ও ছিলেন তার ভাগিনা সৌরভ।

 

তা ছাড়া কাশীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ূব আলী ও সাধারণ সম্পাদক এম.সাত্তার। তারা দীর্ঘ সময় ধরে বাদলের সাথে অপকর্মের সকল সাক্ষী হিসেবে থাকতেন। কাশীপুরে হওয়া প্রতিটি অপকর্মের সাক্ষী হিসেবেই ছিলেন। সেই সুবাদে বিভিন্ন জমি দখল, মানুষকে ভয়ভীতি, বিচারের মাধ্যমে জায়গা দখলসহ বহু অপকর্ম পরিচালনা করতেন তারা। তা ছাড়া বাদলের শেল্টারেই শামীম ওসমানের নাম বিক্রি করে বন্ধন বাসের সাথে থাকাসহ এলাকায় তার আত্তা ছেলে সন্ত্রাসী বাবুকে দিয়ে মাদক বিক্রিসহ কাশীপুরে সংগঠিত বহু অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলো এই আইয়ূব আলী। 

 

অপর দিকে সাধারণ সম্পাদক এম সাত্তার ভাড়া থাকলে ও কাশীপুরে অপকর্মের টাকায় বনে গেছেন ৫টি সম্পত্তির মালিক। তা ছাড়া বাদলের পিএস খ্যাত নেতা রেহান শরীফ বিন্দু বাদলের নাম বিক্রি করে বিভিন্ন সেক্টর থেকে চাঁদাবাজিসহ দখল বানিজ্যে, টেন্ডার বানিজ্যে করে বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। তার ছেলে যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান সাজন জমি দখল, চাঁদাবাজি, হাটখোলা পাওয়ার হাউজ দখল, ড্রোজর বানিজ্যেসহ বহু অপকর্ম করে তিনি ও কোটি কোটি টাাকার মালিক বনে গেছেন।

 
এই ভাবে অবৈধ টাকা নিয়ে কুখ্যাত চেয়ারম্যান সাইফ উল্লাহ বাদল ৩টি বাড়ি করেন। যেখানে বাদলের ছেলে খ্যাত নেতা আইয়ূব আলী ভাইস চেয়ারম্যানের পদে আদিষ্ট হতে একটি ৬ তলা বাড়ি থাকে করে ছিলেন বলে ও গুঞ্জন রয়েছে। আর আরেকটি একজনকে জিম্মি করে বানানো হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে বাদলের খলিফারা সকলেই প্রায় ১০০/২০০ কোটি টাকার উপরে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। অন্যদিকে বাদল ও প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ও অধিক সম্পদের মালিক বলে ও শোনা যাচ্ছে। তা ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে দমাতে যখন ‘গডফাদার’ খ্যাত শামীম ওসমান ও তার ছেলে ওপেন গোলাগুলি করেন। সে সময় তাদের সঙ্গ দিতে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে উপস্থিত ছিলেন, কাশীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ূব আলী,

 

 ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক ও পিএস খ্যাত নেতা রেহান শরীফ বিন্দু, ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার শামীম আহম্মেদ, বাদলের ছেলে যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান সাজন, ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা শ্যামল, ২নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মুন্না আহম্মেদ, ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজ উদ্দিন কবিরসহ আরো অনেকেই।  এদিকে গত ৫ আগষ্ট ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পরে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। 

 

সে সময় এলাকার কিছু কথিত বিএনপির নাম বিক্রি করা সন্ত্রাসীদের ২০ লাখ টাকার মাধ্যমে কিছুদিন এলাকায় থাকতে পারলে ও গত ১৭ আগষ্ট নিহত আবুল হাসানের ভাই আবুল বাশার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ্য সেখানে সাইফুল্লাহ বাদলকে আসামী করা হয়। একই সাথে ফতুল্লা থানায় আরো ২টি মামলায় চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ বাদল আসামী হলে ও তার সহযোগীরা মামলায় না থাকায় কাশীপুরবাসী অনেকেই ক্ষুদ্ধ হয়ে পরেছেন। বর্তমানেই নির্যাতত কাশীপুরবাসী বাদলের এই সহযোগীদের বিচারের জোর দাবী করছেন। এদের ধরলেই বাদলের অপকর্মের সকল পয়েন্ট বেড়িয়ে আসবে। বর্তমানে কিছু কথিত বিএনপি নেতাকর্মীদের টাকা দিয়ে তারা নিজ নিজ এলাকায় আছেন বলছে সূত্র।
 

এই বিভাগের আরো খবর