শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

সিলভার ক্রিসেন্টে নীরব সিভিল সার্জন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০২৪  

 

নগরীর বিভিন্ন আনাচে কানাচে নোংরা পরিবেশে হুটহাট গড়ে উঠছে অজস্র বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। যেখানে রোগী কোন ভাবে নিতে পারলেই হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। আর এদিকে এই অবৈধ হাসপাতালগুলোকে যারা পরিচালনা করতে সাহায্যে করছে নারায়ণগঞ্জে থাকা দুইটি সরকারি হাসপাতাল ও সেখানকার দালালরা তাদের পাশাপাশি ও বিভিন্ন স্থানে থাকা ডাক্তার চেম্বার এবং বিভিন্ন ফার্মেসীর কর্মচারীরা।

 

এদিকে জানা গেছে, এই অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর লোকেরা বিভিন্ন কায়দায় ঔষধ কোম্পানীর লোকদের দিয়ে শহরের বিভিন্ন ফার্মেসীতে বিভিন্ন ডাক্তারের ভিজিটিং কার্ড পাঠায়। সেই কার্ডের রেফারেন্স বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসীর লোকেরা সেখান থেকে তারা ও তাদের কমিশন রেখে দেয়।

 

 তা ছাড়া ও শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাইসেন্সবিহীন হয়ে ও শহরের বুকে দেদারসে চালু রাখতে অল্প কিছু টাকা বিনিময়ে কাগজ ছাড়াই মুখে পারমিশন দিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের কিছু কথিত কর্মকর্তা যাদের সহায়তায় অবৈধভাবে বহু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দেখা মিলছে নগর জুড়েই। তা ছাড়া ও শহরে কয়টি ডাক্তারের বিএমডিসির কাগজ বা নবায়ন আছে কিনা সেগুলো ও তদন্ত করতে কোন তৎপরতা নেই সিভিল সার্জনের।

যাকে ঘিরে বহিরাগত কথিত ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের হাতে ভুল চিকিৎসায় মারা গেলেন মোস্তাকিম (৮) এবং তারই ১৩ দিনের ব্যবধানে ঝরে গেলো আরেকটি ভূল চিকিৎসায় আনিকা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু। অপর দিকে খানপুরে ২ মাস পূর্বে ঔষধ খাইয়ে জাহান ক্লিনিকে নবজাতকের মৃত্যু, তা সাইনবোর্ডের প্রো-অক্যাটিভ ও ভূল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এমতাবস্থায় সিভিল সার্জনের নিরবতা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।

 

তা ছাড়া কথিত সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে এখনো নেওয়া হয়নি কোন প্রকারের ব্যবস্থা। এর আগে খানপুরের আল-হেরায় মৃত্যুর ঘটনার পরপরই সিভিল-সার্জন ও জেলা প্রশাসক দুইটি তদন্ত টিম গঠন করলে ও এই সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে রোগী মারলে ও নেই সিভিল সার্জনের ভূমিকা তা ছাড়া শোনা গেছে পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে। আর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পকেটেও ডুকেছে টাকা। যাকে ঘিরে সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে সকলেই নিরব।

 

তা ছাড়া কেবল অনুমোদন বা অনুমোদনবিহীন চিহ্নিত করে দায় সারলেই ক্লিনিকগুলোতে ভালো চিকিৎসা হবে এটা আশা করা বোকামী। যদি চিকিৎসা সেবা ভালো দিতে হয় তাহলে কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে কি ধরনের চিকিৎসা হচ্ছে এবং সার্জারির ক্ষেত্রে কোন ধরনের চিকিৎসক, নার্সরা যুক্ত আছেন সেদিকে ও কড়া নজরদারি দেওয়া প্রয়োজন যা বর্তমানে করছে না নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন। কিন্তু শহরের বিভিন্ন আনাচে কানাচে গড়ে উঠা ক্লিনিক ও হাসপাতাল গুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যুক্ত থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এর মধ্যে অন্যতম চিত্রের মধ্যে সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতাল।

 

জানা গেছে, গলায় টনসিলের সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগছিলেন মেহেনাজ আক্তার আনিকা। পরে স্থানীয় এক ফার্মেসী দোকানের মালিকের পরার্মশ অনুযায়ী চিকিৎসা করানোর জন্য গত (২৩ মার্চ) সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে নিয়ে আসা হয়। পরে রাত ১০টায় ডাক্তার অপারেশন করায়। অপারেশন শেষে ভোরে তার জ্ঞান ফিরলে তিনি আকার ইঙ্গিতে বোঝান তার ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। পরে চিকিৎসককে জানালে দুইজন ডিউটি মহিলা নার্স দফায় দফায় দুইবার ইনজেকশন পুশ করেন।

 

তারপরেই তিনি ছটফট করতে করতে থাকেন আর তার হাত-পা-মুখ নীলা হতে থাকে। এরপর সকাল ৯টায় তার কোন সারা শব্দ না পেলে তার বাবা আমানত উল্লাহ বুঝতে পারে তার মেয়ে মারা গেছেন। পরে মালিকপক্ষের কয়েকজন তার বাবাকে আশ্বাস দেয় না তার মেয়ে মরেনি তাকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে। পরবর্তীতে মালিকপক্ষের একজন ৯৯৯ নাম্বারের কল দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স এনে তাদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে রফাদফা করে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করে দায়সারা হতে চাইলে ও স্বজনদের গড়িমসিতে তা আর হয়ে উঠেনি।

 

তখনই হাসপাতালে মালিকপক্ষের একজনকে রেখে হাসপাতাল খালি রেখে পালিয়ে যায় মালিকপক্ষের বাকি লোকেরাসহ রিসিপশনে থাকা বেশ সদস্য ও নার্স। এ সময় নিহতের স্বজনরা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসকসহ দুইজনকে মারধর এবং হাসপাতালের ভেতরে বিক্ষোভ ও ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এমতাবস্থায় স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে আসছিলো হাসপাতালের চারপাশ। পরে সেই ৯৯৯ থেকেই কল পেয়ে সদর থানা পুলিশ সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতলে উপস্থিত হয়।

 

সে সময় স্বজনদের উত্তেজনা দেখে হাসপাতলের আবাসিক চিকিৎসকসহ পাঁচজনকে আটক করে। তবে কথিত অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে তাকে পায়নি পুলিশ। পরবর্তীতে নিহতের বাকি স্বজনরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসলে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পায় তখন তারা প্রথমে রোগীকে কোন ডাক্তার কি কি ঔষধ ও ইনজেকশন দিয়েছিলো সেটা দেখার জন্য রোগীর প্রেসক্রিপশনের ফাইল চাইলে প্রথমে সেটা পাওয়া যায় না বলে মালিকপক্ষ নানা ছলছাতুরির পর সেটা বের করা হয়।

 

পরে তা পুলিশের কাছে সোর্পদ করলে স্বজনরা সেটা দেখাতে চান কিন্তু পুলিশ দেওয়া যাবে না বলে নিচে চলে গেলে স্বজনরা ও পুলিশের মধ্যে এক ধরনের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। কিন্তু ১১ দিনে যে হারে সেই উত্তেজিত পরিস্থিতি ঠান্ডা হলো কিভাবে। তা ছাড়া মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে দুটি মৃত্যুর ঘটনায় জেলা জুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে। অভিযোগ ‘গোড়াতেই গলদ’। এমনকি সিভিল সার্জনের ও নিরব ভূমিকা তা নিয়ে চলছে নানা অভিযোগ।

 

সূত্র বলছে, কথিত ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকবার এমন অভিযোগ উঠেছিল। তবে প্রতিবারই তিনি মোটা অংকের টাকা দিয়ে মারা যাওয়া রোগীর স্বজনদের সাথে আপস করে ফেলেন। এবারও ঠিক তেমনটা করার পায়তারা করছে বলে জানা গেছে। এভাবেই যদি রোগী মেরে শহরে অর্থের বিনিময়ে রফাদফা করা যায়। তাহলে চিকিৎসা ব্যবস্থা সামনে আরো ধ্বংসের দিকে ঝুঁকবে।

 

আর এই সিলভার ক্রিসেন্ট ছাড় পেলে ভুল চিকিৎসার হিড়িক দেখা যাবে নগর জুড়ে। যা ইতিমধ্যে মোস্তাকিমের মৃত্যুর পর একটু অবহেলায় একে একে ঝরে গেলো শহরে ৪টি জীবন্ত মানুষ। শীঘ্রই এই সিলভার ক্রিসেন্ট এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সুধিমহল। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর