সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

সেলিম ওসমানের টোল ফ্রি এখন গলার কাঁটা

নীরব প্রকাশ

প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২২  


#রাত যত বেশি এই টোলের হার তত বেশি

 

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার প্রতি ওসমান পরিবারের আলাদা একটি জায়গা আছে। যা ব্যাপকভাবে তৈরি করেছিলেন ওসমান পরিবারের বড় ছেলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ প্রয়াত নেতা একেএম নাসিম ওসমান। নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর ওসমান পরিবারের মেজ ছেলে একেএম সেলিম ওসমান একই আসনের সাংসদ হওয়ার পর বন্দর বাসীর উপর নাসিম ওসমানের জনপ্রিয়তাটা দখল করার চেষ্টা করেন।

 

এর একটি অংশ হিসেবেই ২০১৯ সালে সাংসদ সেলিম ওসমান ঘোষণা দেন বন্দরবাসী কোন টোল দিয়ে ঘাট পারাপার হবে না। এজন্য তিনি টোল মুক্ত পারাপারের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু সাংসদের এই টোল মুক্ত পারাপারের ঘোষণাই এখন বন্দর বাসীর জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। টোল থাকাবস্থায় যেখানে বন্দর বাসী ৫০ পয়সা কিংবা ১টাকার বিনিময়ে নদী পারাপার হতে পারতেন সেখানে এখন নদী পার হতে সর্বনিম্ন ২ টাকা থেকে শুরু করে জনপ্রতি ১০টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। সাংসদের এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং পরবর্তীতে কোন নজরদারী না করায় এখন বিপাকে আছেন এই খেয়াঘাট দিয়ে যাতায়াত করা বন্দরের লক্ষাধিক যাত্রী।


 
জানা যায়, এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রী যাতায়াত করেন। ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের নির্বাচিত  সাংসদ একেএম নাসিম ওসমান অসুস্থ হয়ে মারা গেলে উপনির্বাচনের মাধ্যমে একই দল এবং আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন তার একেএম সেলিম ওসমান। এরপর একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে তিনি বন্দর-নারায়ণগঞ্জ এর পারাপারের সেন্ট্রাল খেয়াঘাটের টোল ফ্রি করে দেন। এর আগে ট্রলারে পার হওয়ার জন্য ইজারাদারেরা জনপ্রতি ৫০ পয়সা করে টোল আদায় করতো। এর মধ্যে বেশির ভাগ সময়ই দেখা যেত ভাংতি ৫০ পয়সার কয়েন না থাকায় ১টাকার নোট দিতেন যাত্রীরা।

 

অন্যদিকে ইজারাদারও সকলকে ভাংতি ৫০ পয়সা ফেরৎ দিতে না পারায় নিজেদের তৈরি করা এক ধরণে কাগজ দিতেন। যা ফেরৎ দিয়ে একজন যাত্রী একবার পার হতে পারতেন। পরে বেশ কিছুদিন এই ঘাট দিয়ে কোন প্রকার টোল না দিয়ে পারাপার হতেন যাত্রীরা। এর কিছুদিন পর দেখা গেল ট্রলারকে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। দক্ষিণ পাশে ৫টির মতো ট্রলার রাখা টোল মুক্ত পারাপারের জন্য। একইসাথে তারই উত্তরাংশে ট্রলার রাখা হয় ২টাকা হারে টোল প্রদান পূর্বক পারাপারের ব্যবস্থা। কিন্তু গত ২০২০ সালের ২৮ জুন থেকে সেই ফ্রি পারাপারের ট্রলারও বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর তখন থেকে ২টার নিচে পারাপার হওয়া যায় না। অর্থাৎ যেখানে আগে জনপ্রতি টোল অদায় করা হতো ৫০ পয়সা। সেখানে এখন জনপ্রতি টোল আদায় হচ্ছে ২টাকা।


 
অন্যদিকে গত ২০১৭ সালে বন্দরের কদম রসুল কলেজের নবীণ বরণ অনুষ্ঠানে এক ঘোষণার মাধ্যমে নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ খেয়াঘাটেও টোল ফ্রি করে দেওয়ার ঘোষণা দেন সাংসদ সেলিম ওসমান। সে সময় এই ঘাটে জনপ্রতি ১টাকা হারে টোল আদায় করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সেখানেও নেই কোন ফ্রি টোলের ব্যবস্থা। সেখানে জনপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ২টাকা হারে টোল।

 

অর্থাৎ যেখানে ১টাকা হারে টোল নেওয়া হতো সেখানে বর্তমানে ২টাকা হারে নেওয়া হচ্ছে টোল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই ঘাটগুলোতে মানুষের টোল জনপ্রতি ২টাকা নেওয়া হলেও হাস-মুরগী, ছাগল, কোন ছোট প্যাকেট, এমনকি একটি সেলাই মেশিন মেরামতের জন্য নদী পারি দিলেও তাদের কাছ থেকে ইচ্ছে মতো টাকা আদায় করা হয়। এত বেশি টাকা টোল দিতে আপত্তি জানালে জনগণকে আটকিয়ে তাদেরকে টর্চার করে ইজারাদারের লোক। রাত ১০টার পর এসব ঘাটেই ২ টাকার টোল হয়ে যায় ৫ টাকা এবং রাত ১২টার পর আবার কখনও কখনও রাত ১১টার পরও সেই টোল হয়ে যায় জনপ্রতি ১০টাকা।


 
এই বিষয়ে আশরাফ নামের সেন্ট্রাল খেয়াঘাটের এক যাত্রী জানান, আগে আমরা এখান দিয়ে ট্রলারের মাধ্যমে নদী পার হয়ে জনপ্রতি ৫০ পয়সায় টোল দিতাম। এমপি সাহেব টোল ফ্রি করে দিয়ে বেশ কিছু নিয়মকানুন বেধে দিলে আমরা অনেক ভাল ছিলাম। একদিকে কোন টোল লাগতো না, অন্যদিকে নৌকা চলাচলেও যাত্রী সংখ্যাসহ বেশ কিছু নিয়মকানুন ছিল। কিন্তু এখন সেই টোল ফ্রি নেই, ২টাকার নিচে টোল নেই, রাত হলে টোল বেড়ে যায়। আরেক যাত্রী নাসিমা জানান, এই নদীটি আমাদের একেবারে দুর্বল করে দিয়েছে।

 

আমরা একটা বাজারের ব্যাগও যদি একটু বড় হয় তার জন্য আলাদা টোল দাবি করে ইজারাদার। রাত যত বেশি এই টোলের হার তত বেশি। আর ঝড় বৃষ্টি হলে তো কোন কথাই নেই। তারা যে ধরণে ব্যবহার করেন মনে হয় আমরা তাদের কাছে জিম্মি। এই বিষয়ে এমপি সেলিম ওসমানের একটু নজরদারী থাকলে হয়তো এধরণের সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।এমই/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর