শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

সোনারগাঁয়ে বাবা-ছেলের তেলেসমাতি

এম মাহমুদ

প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২৪  

 

 

 

সোনারগাঁয়ে বাপ-ছেলে বলতে বোঝানো হয়েছে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজীব তার সম্পর্কে বাবা-ছেলে। আর এই বাবা-ছেলে গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সাথে সাথেই তেলেসমাতি দেখাচ্ছে। সূত্র বলছে, গত ৫ আগস্টে আওয়ামীলীগের পতনের খবর চাউর হলে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সজীবের নির্দেশে তার সমর্থকরা মেঘনা টোল প্লাজা থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার লুটপাট করছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছিলেন। 

 

এরপরই চাঁদাবাজির মিশনে নামেন সজীব। নৌ চাঁদাবাজি দিয়ে চাঁদাবাজিতে সম্পৃক্ত হন সজীব। আর এই নৌ চাঁদাবাজির রুট হিসেবে পরিচিত সোনারগাঁয়ের নুনেরটেক হতে চর কিশোরগঞ্জ নৌ পথে আওয়ামীলীগের দোসরদের কাছ থেকে হস্তান্তর করে নেয়। যেমন: শম্ভুপুরা ইউনিয়নের চরকিশোরগঞ্জ এলাকার আওয়ামীলীগের প্রয়াত নেতা নাসিরের ছেলে সন্ত্রাসী রাসেলের থেকে নৌ চাঁদাবাজি হস্তান্তর করে নিয়ে সেখানে খাইরুল ইসলাম সজীব নিয়োগ দেন রাসেলের চাচা খোকনকে আওয়ামীলীগ থেকে  বিএনপিতে এনে।

 

অপরদিকে মেঘনা নদীর সোনারগাঁ সীমান্তে পলিথিন জাকির খ্যাত পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এই জাকিররের কাছ থেকে হস্তান্তর করে নিয়ে সজীব তার সমর্থকদের দিয়ে নৌ চাঁদাবাজি করান। এমনকি পরিবহনেও তার সমর্থকদের দ্বারা চাঁদাবাজি করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ছাত্রদের সহায়তায় সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান অপুকে জোরপূর্বক অধ্যক্ষ পদ পদত্যাগ করান। পরবর্তীতে সজীবের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে সজীব আবারও ছাত্রদের সহায়তায় আবারও অধ্যক্ষ অপুকে স্বপদে বহাল করান। 

 

এখানেই শেষ নয় ছেলে সজীব বাবা মান্নানকে বিভিন্ন মহলে এমপি হিসেবে প্রচার করে অনেক সময় এটাও প্রচার করে এখন কাগজ কলমে এমপি না হলেও আগামী সংসদ নির্বাচনে সোনারগাঁয়ের এমপি হবেন তার পিতা মান্নান এমনটাই দাবি করেন। অপরদিকে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নাননের পৈতিক ভিটা পিরোজপুর ইউপিতে সেখানে মেঘনা গ্রুপ,বসুন্ধারা গ্রুপ, হামদার্দ,সামিটসহ দেশের শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সেখানেই নির্মিত যার ফলে আওয়ামীলীগ শাসন আমলে মান্নানের প্রতিবেশী  পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জি. মাসুদুর রহমান মাসুম নিয়ন্ত্রণ করতেন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। 

 

কিন্তু গত ৫ আগস্টে আওয়ামীলীগের পতনের পর মাসুম এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিলে মাসুমের কব্জায় থাকা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাথে থাকা বিভিন্ন ব্যবসা ও মাসোহারা এগুলো মান্নান ও তার ছেলে সজীব সমর্থকদের নিয়ে তার কব্জায় নেন। পরবর্তীতে দেশব্যাপী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বজনদের মামলা দায়ের শুরু হলে মান্নানের পি.এস সেলিম সোনারগাঁয়ের নিহত ছাত্রদের স্বজনদের ম্যানেজ করে পরবর্তীতে মান্নান নামমাত্র আর্থিক সহযোগীতা করে পি.এস সেলিমের মাধ্যমে মামলা বাণিজ্যে লিপ্ত হন। তারই অংশ হিসেবে সোনারগাঁয়ে আশিক হত্যা মামলায় তার মাকে থানায় পাঠান পি এস সেলিম। 

 

পরবর্তীতে থানায় এসে মান্নান আশিকের মাকে ২৫হাজার টাকা আর্থিক সহায়াতা দেন। পবর্তীতে সরল সোজা আশিকের মাকে দিয়ে মামলা করিয়ে মনগড়া ভাবে মামলায় বিভিন্ন নাম সংযুক্ত করিয়ে নেয়। তবে মামলার বাদি আসামী যাদের করা হয়েছে তাদের অনেককেই চিনেন না তাহলে বুঝাই যায় এখানে মামলা নিয়ে কি করা হয়েছে। 

 

এছাড়া সোনারগাঁয়ের ১০ ইউপির অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আওয়ামীলীগের গণনার ও হত্যা মামলার আসামী হয়ে তাদের দায়িত্বে অনুউপস্থিত থাকায় তাদের শূণ্যস্থানে আজহারুল ইসলাম মান্নান তার পছন্দের জনপ্রতিনিধিদের আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছেন। তাছাড়া তার সমর্থকদের ব্যবহার করে পুরো সোনারগাঁ জুড়ে সন্ত্রাস নৈরাজ্য দখলের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করেছেন মান্নান।

এই বিভাগের আরো খবর