রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

হাজীগঞ্জ দুর্গ-ফেরিঘাট এলাকায় সন্ধ্যায় বাড়ে অপরাধীদের তৎপরতা

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৩  


# হাজীগঞ্জ দুর্গ এলাকায় ছিনতাই, মাদকসহ চলে অসামাজিক কার্যকলাপ

# রাতে বন্ধ ফেরিতে বাড়ে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের উৎপাত

# হাজীগঞ্জে টহল টিম নিয়মিত কাজ করে তাই এখন কোন অভিযোগ পাই না : সদর ওসি
 

নারায়ণগঞ্জ সদরে অবস্থিত হাজীগঞ্জ কেল্লা এলাকাটি অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবে অনেক আগেই পরিচিতি পেয়েছে। সন্ধ্যের পর হাইজ্যাক ও ছিনতাইয়ের ভয়ে এই এলাকা দিয়ে মানুষজন চলাচল করতে না পারার বিষয়টি অনেক আগেই বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে। যা এখনও বলবৎ আছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সন্ধ্যের পর থেকেই এখানে ছিনতাই, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ শুরু হয় বলে জানা যায়।

 

 

এখানকার অপরাধ দমন করাতো সম্ভব হয়-ই-নি, উপরন্তু এর সাথে আরও কয়েকটি এলাকায় নতুন করে যোগ হয়েছে উৎপাত। যার মধ্যে হাজীগঞ্জ ফেরীঘাট এলাকা উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে হাজীগঞ্জ কেল্লা এলাকায় সন্ধ্যে হলেই অর্থাৎ একটু অন্ধকার হলেই অনিরাপদ বলে মনে করেন এখান দিয়ে চলাচল করা যানবাহনের চালক ও পথচারীগণ। অন্যদিকে হাজীগঞ্জ ফেরিঘাটে রাত ৮টার পর থেকে বাড়তে থাকে অপরাধীদের তৎপরতা। 

 

 

হাজীগঞ্জ দুর্গ এলাকার বিষয়ে অটোইজিবাইক চালক গোদনাইল এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন জানান, হাজীগঞ্জ গুদারাঘাটের মোড়ে সারাদিনই প্রচুর জ্যাম থাকায় ফায়ার ডিফেন্সর পাশ ঘেষে কেল্লার পাশ দিয়ে যাওয়া সড়কটিই আমরা ব্যবহার করি। কিন্তু সন্ধ্যের পর আর এই রাস্তাটি ব্যবহার করতে সাহস পাই না।

 

 

কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, কিছুদিন আগে তার এক বন্ধু রাত আনুমানিক ৮টার দিকে তিন জন যাত্রীসহ অটো নিয়ে এই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন প্রায় আট দশ জনের মতো একটি দল তাদের গাড়ি থামিয়ে তাদের সকলকে নামিয়ে সাথে থাকা টাকা পয়সা ও মোবাইল ফোন রেখে দেয়। তার বন্ধু এখান দিয়ে নিয়মিত যায় জানিয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে ব্লেড দিয়ে পোস দেয়। 

 

 

রিয়াদ নামের আরেক অটো চালক জানান, একটি চক্র এখানে নিয়মিত আড্ডা দেয়। তারা বিভিন্ন মাদক সেবনসহ বিক্রি করে। তাছাড়া এখানে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপও চলে প্রকাশ্যে। তিনি আরও জানান, রাত নয়টার পরই কিল্লারপুল বিদ্যুৎ অফিসের পর থেকেই রাস্তার পাশে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য অনেককেই বসে থাকতে দেখা যায়।

 

 

অনেক সময়ই বিভিন্ন লোক আমাদের গাড়িতে করে যাত্রী হিসেবে অনেকেই এখানে এসে নেমে তাদের কাছে গিয়ে আলাপচারিতা করতে দেখা যায় বলেও জানান তিনি। তাছাড়া প্রায় সময়ই চাষাঢ়া, কালীর বাজার কিংবা খানপুর থেকে দলবেধ চার-পাঁচ জন গাড়িতে করে এসে এখানে নেমে গিয়ে ভাড়া না দিয়েই চলে যায়। ভাড়া চাইলে তখন তারা মারধর করে। তাই এরকম ঘটনা ঘটলে ভয়েও তাদের কাছে ভাড়া চাইতে পারি না। 

 

 

হাজীগঞ্জ ফেরিঘাটের যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাতের বেলা যখন একটি ফেরি বন্ধ হয়ে যায় তখন থেকেই সেখানে শুরু হয় আড্ডা। রাত আটটার পর সেখানে উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েদের আড্ডা এখানে এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেরি চলাচলের জন্য ব্যবহৃত পন্টুন, যেখানে নদী পারাপারের জন্য আসা ছোট-খাটো যানবাহন থাকার কথা, সেখানে ভরে ওঠে উঠতি বয়সী ছেলেদের মোটর সাইকেলে। এরা সাধারণত একটি বা দুটি বাইকে করে আসে না।

 

 

কমপক্ষে চার-পাঁচটি বাইক নিয়ে দলবেধে আসে। সাথে দেখা যায় কম বয়সী মেয়েদের। প্রায় সময়ই ইঞ্জিন রুমের নিচের গুটগুটে অন্ধকারে তারা জোরা বেধে আড্ডা দিতে থাকে। সেখানে চলে মাদকের পার্টি। ফেরির জন্য অপেক্ষারত যাত্রীরা সেদিকে পা-বাড়ালে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।

 

 

অনেক সময় ফেরির স্টাফদেরও সেসব গ্রুপকে সেখানে আড্ডা মারতে নিষেধ করতে দেখা যায়। কিন্তু সেসব গ্রুপের ছেলেরা স্থানীয় হওয়ায় এবং সংখ্যায় অনেক বেশি থাকায় স্টাফরা তাদের জোর করে তাড়াতে পারে না। বিভিন্ন সময় ফেরি স্টাফরা হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমেও তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলতে দেখা যায় বলেও জানান তারা। 

 

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যাত্রী বলেন, কিছুদিন আগে আমি যখন বাইক নিয়ে ঘাটে আসি তখন মাত্র ফেরিটি মাত্র ছেড়ে চলে যায়। তখন রাত প্রায় পৌনে দশটা। বৃষ্টি থাকায় এখানে বাইকটি রেখে আমি থেমে থাকা সেই ফেরির নিচে আশ্রয় নিতে গেলে সেখানে দেখি ফেরির দুই পাশের বিভিন্ন খুপরির মধ্যেই দলবদ্ধ মানুষের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে মাদকের মারাত্মক দুর্গন্ধ একই সাথে তাদের অশালীন ভাষায় কথাবার্তা শুনে আমি আর সেখানে দাঁড়াতে সাহস করিনি। বাধ্য হয়ে বৃষ্টিতে ভিজেই পন্টুনে এসে দাঁড়িয়ে ফেরি না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। 

 

 

এই বিষয়ে ফেরির স্টাফদের কাছে জানতে চাইলে, তারা নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, আমাদের এখানে (ফেরির কাজে) নিয়মিত থাকতে হয়। তাই আমাদের নাম প্রকাশ করলে বিপদ হতে পারে। তারা জানান, আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু তারা কোন কথা শুনে না। তাছাড়া তারা এখানকার স্থানীয় ও সংঘবদ্ধভাবে আসে। তাদের সাথে বেশি জোর করে কথা বলা যায় না। তারপরও আমরা বিভিন্ন সময় তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। 

 

 

এসব বিষয়ে কথা বললে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিচুর রহমান বলেন, হাজীগঞ্জ দুর্গ এলাকার অপরাধের বিষয়টি আগে ছিল কিন্তু বর্তমানে আমাদের পুলিশের টহল টিম সেখানে নিয়মিত টহল দিয়ে থাকে। তাই এখন আর সেই ধরণের সমস্যার বিষয়ে কোন তথ্য আমাদের কাছে আসে না। তবে ফেরিঘাটের বিষয়টি আমাদের কানে আসেনি। এখন যখন বিষয়টি জেনেছি আমরা বিষয়টি দেখবো।  এন.হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর