শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৩ ১৪৩১

হিরণ-লিটনের হাতে সোনার হরিণ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২৪  

 গত আওয়ামী লীগের ট্রাম্পে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ওসমানী সম্রাজ্যের দোসররা নারায়ণগঞ্জকে যেভাবে জিম্মি রেখেছিলেন এমনকি  প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সকল সেক্টরে বিগত ১৬ বছর যেভাবে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি ও লুটপাট করেছেন তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি সরকার পতনের পরেও। গত ৫ আগষ্ট সাবেক স্বৈরাচারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে ক্ষমতাচুত্য হয়ে পরে আওয়ামী লীগ সেই সুবাদে সভা নেত্রীর পাশাপাশি পালিয়ে যায় সাবেক সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান সহ বাকি এমপি-মন্ত্রীরা। একই সাথে তাদের সিন্ডিকেট করা দোসররা অনেকেই পটপরিবর্তনের পর পালিয়ে যায় আবার অনেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের ছায়াস্থলে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। এ দিকে মহানগরীর বন্দর উপজেলায় নতুন সাম্রাজ্যে খুলে বসেছেন বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদ লিটন। 

 

এক সময়ের ঔষধ কোম্পানীর সেলসম্যান থাকা এই হারুন অর রশিদ লিটন বর্তমানে বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বনে গেছেন। এদিকে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর বন্দরে শতাধিক শিল্প কারখানায় চালিয়েছে লুটপাট চাঁদাবাজি। রয়েছে নিজস্ব ও বাহিনী দ্বারা। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্যাতিত হওয়ায় লিটন প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠেছে। হিংস্র রূপ ধারণ করেছে। লিটন সাথে নিয়েছে দলের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণকে। বর্তমানে দলীয় পদ-পদবির দাপটে ঝুট ছিনতাই ও জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটন নামে দুই নেতার বিরুদ্ধে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নানা কর্মকান্ডে আতঙ্কিত শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্তৃপক্ষ। এদিকে গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কামতাল এলাকায় অবস্থিত এসএইচ কে লেভেল ফ্যাক্টরী থেকে জোর পূর্বক ঝুট ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া সেখানকার ইউনাইটেড ফ্যাশন গার্মেন্টস থেকে জুট ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তা ছাড়া মদনপুরে থাকা প্রায় অর্ধশত গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরী বর্তমানে এই মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও হারুন অর রশিদ লিটনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তা ছাড়া তাদের সাথে আরো যুক্ত রয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের খালাতো ভাই বিএনপি নেতা মোমেন। এদিকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে কেওঢালা এলাকায় অবস্থিত পারটেক বাড মিলের বাউন্ডারি ভেঙ্গে ৩২ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ মালিক পক্ষের। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে মামলার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা ও তা ছাড়া চালিয়ে যাচ্ছেন দফায় দফায় মামলা-বাণিজ্যে। এই সভাপতি ও সেক্রেটারী যেন তাদের হাতে সোনার হরিণ পেয়েছেন।


সূত্র বলছে, গত ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করলে  টানা ১০/১৫ দিন বন্দরে গড়ে ওঠা শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আগুনে পোড়ানোর হুমকি ধামকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির পদপদবি নেতাদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও আওয়ামীলীগ  সমর্থিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য সহ শতাধিক স্থানে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে প্রায় শত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। গত ৬ আগষ্ট কুমিল্লার সংসদ সদস্য শামীম আহম্মেদের মালিকাধিন উপজেলা মদনপুর ইউপির কেওঢালা এলাকায় অবস্থিত এসকিউ ক্যাবল তৈরির ফ্যাক্টরীতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজারুল ইসলাম হিরণের ছত্রছায়ায় জেলা জাতীয় পার্টির নেতা জাকার মোল্লা ও তার ভাই শাহজাহান মোল্লা সাজা, বিএনপি নেতা মামুন, মহ-সভাপতি শারজাহান, গোলাপ, মাহবুব  সহ ২০/২৫ জনের একটি দল হামলা চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ সময় নগদ ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন কর্তৃপক্ষ। 

 

একই কায়দায় একই এলাকায় অবস্থিত পোলার গে¬াব ফ্যাক্টরী থেকে ২ লাখ টাকা ও বেঙ্গল গেরেট ওয়েল, টাইলসের গোডাউন থেকে ৬৫ হাজার টাকা ও দুইটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। তা ছাড়া চুনা পাথরের ফ্যাক্টরী থেকে ৫ লাখ, আমজাদ ডাক্তারের বাসায় হামলা ও লুটপাট, আক্তার মেম্বারের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা, একই সাথে ধামঘরের বাবু মেম্বারের উপরে হামলা চলায় পরে আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করলে তিনি না দিতে চাইলে তার বাসায় হামলা ও তাকে চারটি মামলার আসামী করা হয়। তাছাড়া ধামঘর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও এ এস আর এম এর ঠিকাদার শরীফ হোসেনের কাছ থেকে ১০ টাকা হাতিয়ে নেয় হিরণ ও লিটন। ধামঘর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার ও শেখ রাসেল ক্রীড়া একাডেমীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ভয়-ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নেন এই হিরণ ও লিটন। তা ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ধামঘর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বারের কাছ থেকে সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান মাকসুদ ৫ লাখ ও মাজহারুল ইসলাম হিরণ ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এভাবে বন্দর উপজেলা জুড়ে বাণিজ্যে চালিয়ে যাচ্ছে হিরণ ও লিটন এবং তাদের বাহিনীর সদস্যরা। শীগ্রই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যৌথবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয় ভুক্তভোগী ও ব্যবসায়ীবৃন্দ।

এই বিভাগের আরো খবর