Logo
Logo
×

শিল্প ও সাহিত্য

সময় বদলালেও কমেনি মাটির ব্যাংকের চাহিদা

Icon

আবু সুফিয়ান

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:২৯ পিএম

সময় বদলালেও কমেনি মাটির ব্যাংকের চাহিদা
Swapno



বদলেছে সময় বদলে যাচ্ছে সারা বিশ্ব। সময়ের ব্যবধানে প্রতিনিয়ত সবকিছুর পরিবর্তন হচ্ছে। সেই বদলে যাওয়ার যুদ্ধে আজকের ব্যাংকিং ব্যবস্থাও পিছিয়ে নেই। পিছিয়ে নেই ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের বিভিন্ন পদ্ধতিও। কিন্তু শুরুর দিকে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ছিল না বিধায় মানুষ সঞ্চয় করত বিভিন্ন উপায়ে। তার মধ্যে মাটির তৈরি ব্যাংক একটি।

 

 

মাটির ব্যাংকের সঞ্চয় অতি ক্ষুদ্র হলেও এর তাৎপর্য কিন্তু অনেক বেশি। এই মাটির ব্যাংকের সঞ্চয় মানুষের জীবন পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই মাটির ব্যাংকেই লুকিয়ে থাকে সঞ্চয়কারীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন।

 

 

মাটির ব্যাংকে অর্থ জমিয়ে নিজের মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন অথবা নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করেছেন এরকম হাজারো নজির আছে এই দেশে। অর্থ সঞ্চয়ের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো মাটির ব্যাংক কিনে সঞ্চয় করা। এর থেকে স্বাধীন সঞ্চয় পদ্ধতি পৃথিবীতে আর একটাও নেই।

 

 

একটা সময় ছিল যখন শুধু গ্রামের মেয়ের এই মাটির তৈরি এই ব্যাংকেই সঞ্চয় করতেন। আর বিশেষ মুহূর্তে টাকার প্রয়োজন হলে বা কোন বিপদ আপদ আসলে জমানো অর্থ থেকে খরচ করতেন। কিন্তু এখন শুধু গ্রামেই নয় শহরেও দেখা যায় এই চিত্র।

 

 

ফতুল্লার শাসনগাঁও এলাকায় ভ্যানে করে মাটির বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকসহ মাটির বিভিন্ন রকম জিনিসপত্র বিক্রি করছেন একজন বিক্রেতা। তিনি বলেন, এখনো মানুষ মাটির ব্যাংকে টাকা রাখে। আমি প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা করে মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের মাটির ব্যাংক বিক্রি করি। বিক্রি মোটামুটি ভালই হয়।

 

 

এ বিক্রির টাকা দিয়েই আমি আমার সংসার চালাই। তিনি আরো বলেন, এই মাটির ব্যাংক সব থেকে বেশি কেনেন মহিলারা। তার এই মাটির তৈরি ব্যাংক কিনতে এসেছেন বিসিক শিল্পাঞ্চলের পোশাক কর্মী মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন মাটির ব্যাংকে টাকা জমানোর ইচ্ছা আমার ছোটবেলা থেকেই।

 

 

আমার মনে আছে আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি আমার বাবা আমাকে একটি মাটির ব্যাংক কিনে দিয়েছিলেন। সেই মাটির ব্যাংকে আমি ২৫০ টাকা জমিয়েছিলাম। একই দোকানে মাটির ব্যাংক নেড়েচেড়ে দেখছেন মো. ইকবাল হোসেনের বন্ধু সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী মো. ফারদিন।

 

 

তিনি বলেন, মাটির ব্যাংক দেখলে অনেক কিছু মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে ছোটবেলার অনেক স্মৃতি। এই শিক্ষার্থী বলেন মাটির ব্যাংকের সঙ্গে সবাই পরিচিত। এই মাটির ব্যাংক আমাদের বাঙালি ঐতিহ্য।

 

 

আমার মনে পড়ে স্কুলের টিফিনের টাকা, ঈদের সালামির টাকা, মার কাছ থেকে নিয়ে টাকা এবং বাবার পকেটের খুচরা টাকা নিয়ে মাটির ব্যাংকে রাখতাম। 

 

 

একই দোকানের মাটির ব্যাংক কিনতে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ইশিতা সরকার। তিনি বলেন, এই দোকানে এসেছি একটা মাটির ব্যাংক কিনব বলে। অল্প অল্প করে এই মাটির ব্যাংকের সঞ্চয় করলে ভবিষ্যতে বিশেষ প্রয়োজনে খরচ করা যায়। শুধু তাই নয় নিজের অনেক প্রয়োজনও মেটানো যায়। কারো কাছে হাত পাততে হয় না।

 

 

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় হাতে খুচরা টাকা থাকে এই খুচরা টাকা বা কয়েনগুলো মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রাখা যায় পাশাপাশি বাজার করার পর যে খুচরা টাকা থাকে সেটাও মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রাখা যায়। ইশিতা সরকার শেষে বলেন, মাটির এই ব্যাংকের জমানো টাকার পরিমাণ অতি ক্ষুদ্র হলেও বিপদে ভালো কাজে দেয়।

 

 

যার কারণে কারো কাছে টাকা চাইতেও হয় না কারো কাছে ছোটও হতে হয় না। রাস্তার পাশ দিয়ে হেরে যাচ্ছিলেন পথচারী জাহিদুল ইসলাম। ভ্যানে করে মাটির ব্যাংক বিক্রি করা দেখে থমকে দাঁড়ালেন তিনি।

 

 

দোকানের সামনে এসে একটি মাটির ব্যাংক হাতে নিয়ে বললেন, একটা সময় ছিল যখন মেলায় গেলে সবার প্রথমে মাটির ব্যাংক কিনতাম। মাটির ব্যাংক না কিনলে যেন মেলা সার্থকই হত না। মাটির ব্যাংক থেকে নিয়ে অনেক সঞ্চয় করেছেন এবং তা দিয়ে অনেক কিছু করেছেন বলে জানান তিনি।

 

 

জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন গোপনে মাটির ব্যাংকে সঞ্চয় শুরু করেছিলাম। এভাবে কয়েক দফা মাটির ব্যাংকের জমানা টাকা দিয়ে আমি একটি ছাগল কিনেছিলাম। সেখান থেকে আজ আমি একটি ছোট খামারের মালিক। শেষে তিনি বলেন, আমরা যে আয় করি পাশাপাশি তা খরচও করি।

 

 

আমাদের চাহিদার শেষ নেই। এক প্রয়োজন পূরণ হতেই নতুন আরও অনেক প্রয়োজন জীবনে এসে হাজির হয়। ফলে প্রতিনিয়তই ব্যয় হচ্ছে কিন্তু আমরা অনেকেই সঞ্চয় করি না বা করার কোন পরিকল্পনা হাতে রাখি না। আর সময় মতো সঞ্চয় না করলে ভবিষ্যত আমাদের কাছে অন্ধকার মনে হয়।

 

 

জীবনের প্রথম আয় থেকেই সঞ্চয় শুরু করা উচিৎ। একজন লোক যত বেশি মিতব্যয়ী হবে তার সঞ্চয়ের পরিমাণও তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। তবে মিতব্যয়ীতার অর্থ কৃপণতা নয়। সকল ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও বিলাসিতা নিয়ন্ত্রণ করেই সঞ্চয় করা উচিৎ।

 

 

এজন্য উৎপাদন ও আয় বাড়াতে সদা সচেষ্ট হতে হবে। আয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে খরচ করে সঞ্চয় করার অভ্যাস করতে হবে। পরিশেষে আমাদের দায়িত্ব হলো আয় ব্যয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে সঞ্চয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করা। এন.এইচ/জেসি

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন