Logo
Logo
×

নগর জুড়ে

সিন্ডিকেট না হলে ভোট দিতে আগ্রহী হবে ব্যবসায়ীরা

Icon

লিমন দেওয়ান

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

সিন্ডিকেট না হলে ভোট দিতে আগ্রহী হবে ব্যবসায়ীরা

সেলিম ওসমান, নাজমুল হাসান সজল ও কবির হোসেন

হোসিয়ারী ব্যবসায়ীদের আস্থার সংগঠন বাংলাদেশ হোসিয়ারি এসোসিয়শনের ২০২৫-২০২৭ সালের নির্বাচনকে ঘিরে নীল নকশার ছক আকঁছেন একটি পক্ষ। যা নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে ব্যবসায়ীদের মাঝে। এদিকে বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের দোসর সেলিম ওসমান তার সহযোগী নাজমুল হাসান সজল ও কবির হোসেনের মাধ্যমে জিম্মি ছিলো হোসিয়ারী সমিতি ও এই সমিতির নির্বাচন ব্যবস্থা। যাকে ঘিরে নির্বাচন কি তা ভূলেই গিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তোপের মুখে পরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করলে তার সাথে সাথে পালিয়ে যায় তার দোসররা। যাকে ঘিরে রাহুমুক্ত হয় দীর্ঘদিন সিন্ডিকেটে জিম্মি থাকা ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন হোসিয়ারী সমিতি। বর্তমানে প্রবীন ও নবীন ব্যবসায়ী নেতাদের সম্বনয়ে নির্বাচনী হাওয়া পরে হোসিয়ারী সমিতিতে। যাকে ঘিরে ধাপে ধাপে নির্বাচনী পক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে সমিতি নির্বাচন। ইতিমধ্যে মনোনয়ন জমা পক্রিয়া শেষ হয়েছে আগামীকাল মনোনয়ন বাছাই পরবর্তীতে ১৮ জানুয়ারি প্রার্থীদের ক্রমিক নম্বরসহ তালিকা প্রকাশ করা পরবর্তীতে ৩ ফেব্রুয়ারী নির্বাচন। কিন্ত এখনো নির্বাচন নিয়ে বেশি একটি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেনি ব্যবসায়ী ও সমিতির বাকি সদস্যরা।



সমিতির কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া একটি বক্তব্যের সুর ধরে বলেন যে, পট পরিবর্তনের পর মাথা পালিয়ে গেছে কিন্ত লেজ রয়ে গেছে। যারা বর্তমানে আবারো একটি সিন্ডিকেটের নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করতে নীল নকশা আকঁছেন। যেখানে বিগত ওসমান দোসর অনেকেই রয়েছেন। আমরা যোগ্য নেতৃত্বের হাতে হোসিয়ারী সমিতি তুলে দিতে চাইলে ও বর্তমানে তা আর হয়ে উঠছে না। বিগত দিনে নিয়ম নীতির বালাই তো নেই যেন পুরো এসোসিয়েশনই মগের মুল্লুকে পরিণত বিগত দিনে হয়েছিলো। গুটি কয়েক মানুষের সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে পড়েছে পুরো এসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্যরা। সুবিধা নিচ্ছে উড়ে এসে জুড়ে বসারা। প্রতিবাদ যারাই করতো তাদের উপর নির্যাতনের খড়গ এতো বেশি ছিল যে পুলিশ পর্যন্ত অভিযোগ করার দুঃসাহস করতে পারেনি কেউ। তাই বছর ঘুরে বছর আসে, হোসেয়ারি এসোসিয়েশনের নির্বাচনে নীরবে নির্ভৃতে সিন্ডিকেট মেম্বাররাই বারবার দায়িত্বে আসছিলো। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পর তার ভাই ব্যবসায়িক নেতা সেলিম ওসমান সাংসদ হওয়ার পর থেকেই হোসিয়ারীতে খড়গ শুরু হয় বলে এমন নানান অভিযোগ তুলেন এসোসিয়েশনের অনেক সদস্য। পটপরিবর্তনের পরের নির্বাচনে ও আমরা ষড়যন্ত্রের সুবাস পাচ্ছি। বর্তমানে যারা মনোনয়ন ক্রয় বা জমা দিয়েছেন বেশির ভাগই বিএনপির সাথে জড়িত রয়েছেন। এর মধ্যে আবার অনেকে সাবেক ব্যবসায়ী নেতা রয়েছেন। যেহেতু নির্বাচনের আলোচনা উঠে এসেছে সেই সুবাদে আমরা চাই নির্বাচন হোক উৎসবমুখর ও ব্যবসায়ীদের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তাহলে সকলেই ভোট দিতে আগ্রহী হয়ে উঠবো। কিন্তু এর বাহিরে গিয়ে যদি সিন্ডিকেট নির্বাচন হয় তাহলে ভোটের হার কমবে। যদি কোন সিন্ডিকেট না হয় ব্যবসায়ীরা গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বে মনে করে তাহলে ভোটে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠবে ব্যবসায়ীরা। এদিকে ইতিমধ্যে জমা দিয়েছেন। সমিতির সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান প্যানেল ও স্বতন্ত্র ঐক্য হোসিয়ারি মালিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ গ্রুপ ও  এসোসিয়েট গ্রুপ মিলিয়ে ১৫ জন।



হোসিয়ারী সমিতির সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান বদু প্যানেলে রয়েছেন, আলহাজ্ব বদিউজ্জামান বদু, আব্দুস সবুর খান সেন্টু, মনির হোসেন খান, মোঃ দুলাল মল্লিক, আতাউর রহমান, মো.মিজানুর রহমান, আলহাজ্ব মো.মনির হোসেন, হাজী মো.শাহীন, মো.আব্দুল হাই, বৈদ্যনাথ পোদ্দার, মো.মাসুদুর রহমান, মোঃ পারভেজ মল্লিক ও এসোসিয়েট গ্রুপ থেকে সাঈদ আহমেদ স্বপন, মো.নাসির শেখ, মো.বিল্লাল হোসেন, অনিল বাবু, হিরু শেখ, নাসিম আহমেদ।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র ঐক্য হোসিয়ারি মালিক ঐক্য ফোরামের প্রার্থীরা হলেন, সাধারণ গ্রুপের ফতেহ আলী রেজা রিপন, নাজমুল হক, লুৎফর রহমান ফকির, বাবুল চন্দ্র দাস, সুশান্ত পাল চৌধুরী, মোঃ আওলাদ হোসেন, মোঃ আবুল বাশার বাসেত, মোঃ দিদার খন্দকার, এসোসিয়েট গ্রুপের মাসুদ রানা, নারায়ণ চন্দ্র মজুমদার, মোক্তার হোসেন, মাসুম মোল্লা, ফারুক আহম্মেদ, ইবনে মোঃ আল কাওছার ও আনোয়ার হোসেন।


উল্লেখ্য, হোসিয়ারী সমিতির বিগত নির্বাচনের ঘটনা বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশন নির্বাচন সে সময় পেশীশক্তিতে কুক্ষিগত হয়ে ছিলো কয়েকবছর। পরপর দুইবার নির্বাচিত হলে যে ওই ব্যক্তি তৃতীয়বার সুযোগ পাবেনা এমন বিধিনিষেধও তোয়াক্কা করা হচ্ছি না ক্ষমতার জোরে। ভোটার তালিকা নিয়েও ছিলো জোর যার মুল্লুক তার নীতি। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে যাতে নির্বাচনে অন্য কোন প্যানেল না দিতে পারে সেজন্যই ছিলো সুচতুর কৌশল এবং পেশী শক্তির ব্যবহার। ভঙ্গুর ব্যবসায়িক পরিস্থিতিতেও তাই এসোসিয়েশনের সদস্যরা আরো কাতর সংগঠনের বেহাল দশা দেখেছিলেন। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ হোসিয়ারি এসোসিয়েশনের দ্বি-বার্ষিক (২০২৩-২০২৫) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিলো। নির্বাচনে ভোটার তালিকায় নাম অন্তুর্ভূক্তির জন্য কয়েকটি শর্ত দেয়া হয়েছিলো। শর্ত অনুযায়ী হালসনের (২০২২-২৩) ইং সনের ট্রেড লাইসেন্স, বার ডিজিটের ই-টিন (আয়কর সনদপত্র ২০২১-২০২২) অথবা কর পরিশোধের চালানের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি গত ২ জানুয়ারি এসোসিয়েশনের মনোনীত ব্যাংকে পরিশোধ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং চাঁদা পরিশোধের জামার ব্যাংক পে-ইন-স্লিপ এাসসিয়েশন কার্যালয়ে জমা প্রদান করে রশীদ সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিলো। এর ব্যত্যয় ছিল না এর আগে হয়ে যাওয়া কয়েকটি নির্বাচনেও। কিন্তু সমস্যা ছিলো সে সময় এসোসিয়েশনের বেশিরভাগ সদস্যরই হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স এবং ইটিন সনদ অথবা কর পরিশোধের চালান কপি আপডেট করতেন না। সমিতির নাম সর্বস্ব চাঁদা দিয়েই এসোসিয়েট এবং জেনারেলগ্রুপের সদস্যরা ভোটার হয়ে যেতেন। আদতে নির্বাচনে ভোটার হওয়ার শর্ত অনুযায়ী সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপরের দুটি শর্তই পূরণ করেননা। নামমাত্র এসোসিয়েট গ্রুপের মাত্র ২ হাজার টাকা এবং জেনারেল গ্রুপের মাত্র ৪ হাজার টাকা দিয়েই ভোটার তালিকায় স্থান পেয়ে যেতেন অনেকেই। এদিকে গত নির্বাচনের ভোটার তালিকা অনুযায়ী এসোসিয়েট গ্রুপের ৬৭৫ জন এবং জেনারেল গ্রুপের ১৭৪ জনসহ সর্বমোট ৮৪৯ জনের মধ্যে বেশিরভাগই এবারও হালসনের ট্রেড লাইসেন্স এবং বার ডিজিটের ই-টিন অথবা কর পরিশোধ করেননি। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির ইশারায় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিংয়ের অভাবকে পুজি করে ভোটার তালিকায় নাম চলে আসে বেশিরভাগদেরই। এই নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েই নানা লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা বলছেন এসোসিয়েশনের সদস্যরা। আর যার সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন সেলিম ওসমান ও তার দুই চ্যালাচামুন্ডা নাজমুল হাসান সাজন ও কবির হোসেন। তা ছাড়া আরো অভিযোগ রয়েছে, সেই নির্বাচনে ভোটার তালিকায় ভৌতিকভাবে স্থান পাওয়াই যে আশ্চর্য্য এমনটি নয়। রয়েছে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত বিসিক এসোসিয়শন কার্যালয়কেও নিরাপদ বাবতেন না। নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক আগ্রহীরা। তারা বলছেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে হবে বিসিকে অবস্থিত এসোসিয়শন কার্যালয় থেকে। আর সেখানে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে হতো ২৬ জানুয়ারি এবং ২৮ জানুয়ারি এই দুই দিন বেলা ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। দুইদিনে এই ৬ ঘন্টা পাহারা দেয়া হতো যাতে সিন্ডিকেটের সদস্যরা ব্যতিত অন্য কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ না করতে পারতো আর সেই সবই হতো সেলিম ওসমানের নির্দেশনায়। হুমকি-ধমকি তো রয়েছেই সাথে লোমহর্ষক নানা অভিজ্ঞতার কথাও বলছেন অনেকে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাকে অনেকে জীবনের হুমকি স্বরূপ বলে মনে করছেন। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা গত কয়েকটি নির্বাচনেই হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে সদস্যদের। বর্তমানে সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে সুষ্ঠ নির্বাচন হলে ভোট দিতে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলছে সকলেই।
এ দিকে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে হোসিয়ারী সমিতির সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান বদু বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ হোসিয়ারি সমিতি নির্বাচন হয় নাই। হোসিয়ারি মালিকরা তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারেনি। একটি গ্রুপের জিম্মি দর্শা ছিলো হোসিয়ারি সমিতি। আমরাই এখন নির্বাচনের মাধ্যমে হোসিয়ারি মালিকদের ভোট প্রদানের সুযোগ করে দিছি। সকল ভোটারদের আশ্বাসে আমরা প্যানেলের মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছি। আগামী দিন হোসিয়ারী সমিতির প্রাণ ফিরে আসবে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন