জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হকের বদলির আদেশ বাতিল
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ও কুষ্টিয়ার ডিসি মো. তৌফিকুর রহমান
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের বদলির আদেশ বাতিল করা হয়েছে। সোমবার (৬ জানুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়। এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার ডিসি মো. তৌফিকুর রহমানকে নারায়ণগঞ্জের নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালটি বাংলাদেশের জন্যই অবিস্মরণীয় একটি বছর। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দীর্ঘ ১৬ বছর রাজত্ব করা ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে এই বছরেই। গণঅভ্যুত্থানে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে নারায়ণগঞ্জের বিপুল পরিমাণ ছাত্র-জনতা। এতো ঘটনার মধ্যেও নারায়ণগঞ্জবাসীর সাথে সবসময়ই ছিলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দক্ষভাবে সবকিছু সামলেছেন এই জেলা প্রশাসক। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারাই নারায়ণগঞ্জের দায়িত্ব পালন করতে এসেছেন তাদের প্রথম বাধাই ছিল ওসমান পরিবার। তারা নানাভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের চাপে ফেলে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে চান। কিন্তু শত প্রতিকূলতায় দায়িত্ব পালনে অবিচল ছিলেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর যখন সারাদেশেই নানা সমস্যা চলছিল, তখনও দক্ষ নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন মাহমুদুল হক। তার বুদ্ধিদিপ্ত এবং শক্ত অবস্থানের কারণে খুব দ্রুত নারায়ণগঞ্জের সকল অস্থিতিকর পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন নাগরিক সমাজ।
বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতিসহ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সকল স্তরের ব্যক্তিদের নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন মাহমুদুল হক। দূর্গাপূজা নির্বিঘ্ন করতে সনাতন ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি সকল ধর্মের নেতৃস্থানীয়দের সাথে তাঁর যোগাযোগ ব্যাপক সাফল্যের মুখ দেখে। সর্বোপরি ৫ আগস্টের পর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের অন্যান্য জেলাপ্রশাসকের রদবদল হলেও মাহমুদুল হকের কর্মদক্ষতার কারণে তাকে পাশে চেয়েছিল নারায়ণগঞ্জবাসী। আর এই আস্থার যোগ্য ভূমিকা রেখেছেন এই জেলা প্রশাসক। সরকারি কর্মকর্তারা বদলি হবেন, পদোন্নতি নেবেন এটিই স্বাভাবিক। তবে কর্মসূত্রে দায়িত্বপালনের সময় অনেকেই তার কর্মদক্ষতায় হয়ে ওঠেন এই জেলারই একজন মানুষ, প্রিয় ব্যক্তি। মাহমুদুল হক জেলা প্রশাসক হিসেবে নারায়ণগঞ্জে ঠিক তেমন ভূমিকাটাই রেখে গেছেন। গত বছরের ১০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২৭ জুলাই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হকের বদলির আদেশ বাতিলে সংবাদে খুশি নারায়ণগঞ্জবাসী। কেননা ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর গোটা দেশই এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। যেহুতু জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক নারায়ণগঞ্জের সমস্যাগুলোর নার্ভ চিহ্নিত করে সমাধান করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সফলতা পেয়েছেন এই সিদ্ধান্ত নারায়ণগঞ্জবাসীকে আরো কিছু চমৎকার উদ্যোগ উপহার দেবে।
এরআগে ৩০ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এক নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন দিয়ে নারায়ণগঞ্জে নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে মো. তৌফিকুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। মো. তৌফিকুর রহমান বর্তমানে অর্থ-বিভাগের উপসচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৩০ অক্টোবর তাকে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর আগে তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তৌফিকুর রহমান নড়াইলের বাসিন্দা এবং বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা।