আমার নারায়ণগঞ্জ’ সংগঠনের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হয়েছেন মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিটিজেন ব্যাংক পিএলসি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাসুদুজ্জামান বলেছেন,  অনেকেই প্রশ্ন করেছেন যে, এফবিসিসিআই ভাঙ্গা হলে ও বিকেএমইএ কেন ভাঙা হলো না। তা নিয়ে আমাদের যে দুই ব্যবসায়ী ভাই বাণিজ্যে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন। আমি আশা করবো বাণিজ্যে মন্ত্রণালয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বর্তমানে ব্যবসায়ীদের বড় সংগঠন বিকেএমইএ এর মধ্যে যারা নেতৃত্বে আছেন তারা সকলেই অবৈধভাবে আছেন। গত (২৪ আগষ্ট) সেলিম ওসমান যে পদত্যাগ দিয়েছিলেন সেখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে এবং ফোনে প্রেসার দিয়ে বলেছেন হাতেমকে প্রেসিডেন্ট দিতে হবে, কারণ উনি তার আঙ্গাবাহ। তাহলে প্রশ্ন রয়ে যায়, উনি কেন বলবেন, উনি তো পদত্যাগ করে চলেই গেছেন উনি তো এটা বলতে পারে না। এ ছাড়া কিছুদিন পূর্বে নাটক সাজিয়ে দুইজন বিকেএমএ এর পরিচালক পদত্যাগ করলেন। সে সময় হাতেম সাহেব আমার অফিসে গেলেন আরেকজন সহ-সভাপতির সাথে। সেখানে গিয়ে হাতেম সাহেব আমাকে প্রথম প্রশ্ন করেন পদত্যাগ এটা কি হলো! দ্বিতীয় প্রশ্ন উনি আমাকে বলেন যে, সেলিম ভাই আপনার সাথে একটু কথা বলতে চায়, আমি উনাকে বললাম, উনার সাথে আমি কেন কথা বলবো। বলে বিকেএমই‘এ এর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে চায়। আমি বলি সে তো পদত্যাগ করেছে দেড় মাস পূর্বে এখন এটা দিয়ে তার লাভ কি। এই হলো আমাদের হাতেম ভাইদের বর্তমান অবস্থা।

তিনি বলেন, আমি এই প্রোগ্রাম থেকে ব্যবসায়ী ভাইদের উদ্দেশ্য বলতে চাই। উনারা গেছেন আর কখনো ফিরে আসবেন না। আপনারা আপনাদের মতো বের হন, বিকেএমই‘এ এর মধ্যে আসেন, কথা বলেন। আর সকলের অধিকার নিশ্চিত করেন। আর কত বছর যাবৎ উনি আর উনার বস সেলিম ওসমানের হাতে যে বিকেএমই‘এ এর মধ্যে ছিলো সেখানে আমাদের গার্মেন্টস এর কি কোন কাজ হয়েছে। উনারা ভ্যাট সমস্যা সমাধান করতে পারে নাই। এনবিআরের সাথে উনারা কথা বলতে পারে নাই বা চায় নাই। উনারা কখনো গার্মেন্টস এর স্বার্থে কোন কথা বলে নাই। উনারা শুধু ব্যাক্তি স্বার্থ নিয়ে কথা বলেছে। যে কারণে আমাদের গার্মেন্টসগুলো দিনে দিনে দুর্বল হচ্ছে। তারা গত ১৫ বছরে কয়টি দেশীয় ও আন্তজার্তিক ফেয়ার করেছে। মার্কেটিং ডেভেলপমেন্টের জন্য উনাদের কি অবদান রয়েছে, কোন অবদান নাই। গার্মেন্টস বাচঁলে আমার শ্রমিক বাঁচবে, গার্মেন্টস বাচঁলে আমার মালিক বাচঁবে, গার্মেন্টস বাচঁলে বাংলাদেশ বাচঁবে। আমরা আসেন সকলেই ঐক্যবদ্ধ হই। আর এই তথাকথিত স্বৈরাচারের দোসর তারা যদি নিজে থেকে না যায় তাহলে আমরা রাস্তায় নামবো ইনশাআল্লাহ। আপনারা সকলেই পাশে থাইকেন।

তিনি আরো বলেন, এই দেশের আমরা বহুবার লক্ষ্য করেছি রাজনীতি করতে হলে একটি পত্রিকার প্রয়োজন লাগে। কিন্তু আমাদের কোন পত্রিকা নাই। আমি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য বলবো। আপনি ও দিন শেষে একজন বাবা, আপনি ও দিন শেষে একজন পিতা বা শিক্ষক। আপনারা দয়া করে কলমকে সত্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এই অনুরোধ আমার থাকবে। আর আজকের এই প্রোগ্রামটি যে উপলক্ষে হয়েছে সেটা আমরা বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ করবো।

গত ৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো আগামীতে আমরা ভালো স্বপ্ন দেখবো, ভালো কিছু পাবো কিন্তু এখনো আমরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত। কিন্তু  নারায়ণগঞ্জের প্রশাসক, এসপি, সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক তাদের কর্মকাণ্ডের সাথে আমাদের নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বপ্ন যায় না। আমরা দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, আমাদের নারায়ণগঞ্জের বাসীর স্বপ্ন আমাদের চোখ দিয়ে দেখতে হবে। আর তা না হলে আপনারা যেতে পারেন।

তিনি বলেন, আমরা কেমন নারায়ণগঞ্জ চাই এই প্রোগ্রামে আমরা যখন তাদেরকে নিমন্ত্রণ করেছি, তখন তারা আমাদের বলেছেন যে, আপনারা একটা রিপোর্ট টাইপ করে পাঠিয়ে দিয়েন। এই বলে তারা আজকে এখানে উপস্থিত হলেন না। আপনারা যদি আমাদের সেবা করতেই নারায়ণগঞ্জে এসেছেন তাহলে আমাদের কাছে এসে আমাদের কথা আপনাদের শুনতে হবে। আমরা যখন এসপি সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি বললো ডিসি সাহেব যাবে নাকি। এই যে এই আমলাতান্ত্রিক জঠিলতা এটা পরিহার করতে হবে।

গতকাল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনের ৭ম তলায় ‘ আমরা কেমন নারায়ণগঞ্জ চাই?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।  

সিটি কর্র্পোরেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মাসুদুজ্জামান বলেন, নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খানপুর হাসপাতাল রোডে একটা দোকান থেকে আরেকটা দোকানের মাঝামাঝি ৪ ফিট জায়গা রয়েছে এমন ৭টি দোকান বরাদ্দ দিয়ে দিলো কার স্বার্থে, নিশ্চিই উনার স্বার্থ আছে। তা ছাড়া আমরা যেখানে ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা বন্ধ করতে চাই, যানজট দূর করতে চাই, ফুটপাতমুক্ত করতে চাই, সে জায়গা উনি রিক্সার লাইসেন্স দিচ্ছে কারণ কি ব্যাক্তি স্বার্থ। আমরা উনারদের উদ্দেশ্য দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই আপনারা যদি আমাদের সমস্যা সমাধান না করতে পারেন। তাহলে আমরা আমাদের ব্যবস্থা নিবো। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ট্যাক্স, বিদ্যুৎ বিল, ওয়াসা বিল দেওয়া বন্ধ করে দিবো। আমাদের হাতে চাবি আছে।

নারায়ণগঞ্জের এসপিকে উদ্দেশ্য করে মাসুদুজ্জামান বলেন, আমরা সাধারণত যা দেখে থাকি, বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জে নতুন নতুন এসপি সাহেবরা এসে বলে মাদকের বিরুদ্ধে যে, মাদক জিরো টলারেন্স এটা হাস্যকর। আমাদের নারায়ণগঞ্জের এসপি সাহেব এসে ও বলেছিলো কিন্তু উনার এসপি অফিসের ১ কিলোমিটারে মাদকের সব থেকে বড় বাজার। তাহলে উনি করছে কি, উনি করছেন বদলি। ওই থানা থেকে এ থানা, এ থানা থেকে ওই থানা, আমি জানি না এটার মধ্যে কোন বাণিজ্যে আছে কি না। উনি ব্যস্ত উনার এই সমস্ত কাজ নিয়ে। নারায়ণগঞ্জের কোন সাধারণ জনগণ তার কাছ থেকে কোন সাহায্যে সহযোগীতা পাচ্ছে না। আমরা আজকে এখানে যতগুলো সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ, ব্যবসায়ীরা আছি আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটু শক্ত হই সব ঠিক হয়ে যাবে। নারায়ণগঞ্জ আমাদের, এটা আমাদের মাতৃভূমি, এখান থেকেই আমার যাত্রা শুরু আমি বাংলাদেশী। আর এখানে আমাদের গিয়াসউদ্দিন সাহেব, মাসুম ভাই, রাব্বি ভাই বলে বললেন তাদের কথার সাথে মিলিয়ে বলতে চাই, আমরা যারা কতিপয় নাগরিক রয়েছি। যারা নতুন ডিসি বা এসপি, ওসি আসলে ফুলের তোড়া নিয়ে তৈলাক্ত করার চেষ্টা এটাই আমাদের পিছিয়ে দেয়। আপনারা এটা কইরেন না। আপনারা এটা না করলেই আমরা ভালো থাকবো। আর যারা অপরাধ থেকে বাচাঁতে এটা করে বিভিন্ন্ মামলা বাণিজ্যে, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি করবে এই জন্যই তারা এই সমস্ত করে আপনারা তাদের চিহ্নিত করে লিস্ট করুন।

শীতলক্ষ্যা নদী দূষণ নিয়ে মাসুদুজ্জামান বলেন, শীতলক্ষ্যা নদী দূষণে আমি ও অপরাধী, এটা আ,ি শিকার করছি। শুধু আমি নয় যারা যারা গার্মেন্টস ব্যবসা করে আমরা সবাই অপরাধী। কারণ গত ৪০ বছরে বাংলাদেশ ত্রিলিয়ন ডলার কামিয়েছে। আমরা যদি এই ডলারের তিনগুণ ও বেশি নেই। তার পরে ও আশপাশের দুই-তিনটি নদী ঠিক করতে পারবো কিনা আমি জানি না, কিন্তু আমরা চেষ্টা করবো।

জুলাই-আগষ্টের আন্দোলন নিয়ে মাসুদুজ্জামান বলেন, জুলাই-আগষ্টের আন্দোলন ছিলো ছাত্র-জনতার আন্দোলন। কিন্তু বর্তমানে একটি পক্ষ এটাকে ছাত্রদের আন্দোলন বলতে চাইছেন, তাদেরকে একটি ভূল পথে নেওয়ার পক্রিয়া চলছে।  আমরা শুধু বলতে চাই সেই আন্দোলনে আমরা ব্যবসায়ীরা মাঠে ছিলাম, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা মাঠে ছিলো , ছাত্র-ছাত্রীরা ও মাঠে ছিলো শুধু শুধু সংকটময় অবস্থান সৃষ্টি না করি। একে অপরের প্রতি সম্মান বোধ জাগ্রত থাকুক। আমরা এই দেশটাকে নিয়ে যে ধরনের স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাতে চেষ্টা করি। আমরা সংস্কার-নির্বাচন দুটোই চাই। এটা কোন রাজনৈতিক চাহিদা নয় এটা সাধারণ জনগণের চাহিদা। আমি এই অনুষ্ঠান থেকে ত্বকীসহ সকল হত্যার বিচার দাবি করছি। আর এটার সাথে যে গডফাদার ও তাদের ছেলেরা জড়িত রয়েছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি বাস্তবায়ন করতে হবে এটার জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।

গোলটেবিল বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের নানাবিধ সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড.আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি প্লামি ফ্যাশনস এর এমডি ফজলুল হক, জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জের আমীর মাওলানা আব্দুল জাব্বার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, মানবাধিকারকর্মী ও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এড.মাহবুবুর রহমান মাসুম, নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকী, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি হাজী নুরউদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ন্যাপ নারায়ণগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক এড.আওলাদ হোসেন,   বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন প্রমুখ। গোলটেবিল বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।