ইসতু সোহেলের ‘আই কমিউনিকেশন ফাইবার অপটিক কানেকশনে’ ব্যাপক তল্লাশি
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
অবৈধভাবে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারিত ও বিদেশে টাকা পাচার করার অভিযোগে ইসতু সোহেল এর মালিকানাধীন ‘আই কমিউনিকেশন ফাইবার অপটিক কানেকশনে’ ব্যাপক তল্লাশি ও অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত । গতকাল সোমবার দুপুরে আমলাপাড়ার ২২নং কে.বি সাহা রোডে আই কমিউনিকেশন এর অফিসে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোনাববর হোসেন নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
অবৈধভাবে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারিত ও বিদেশে টাকা পাচার করার অভিযোগে ইসতু সোহেল এর মালিকানাধীন ‘আই কমিউনিকেশন ফাইবার অপটিক কানেকশনে’ ব্যাপক তল্লাশি ও অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত । গতকাল সোমবার দুপুরে আমলাপাড়ার ২২নং কে.বি সাহা রোডে আই কমিউনিকেশন এর অফিসে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোনাববর হোসেন নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
এসময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শেষে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোনাববর হোসেন বলেন, আমাদের কাছে তথ্য এসেছে এখানে অবৈধভাবে বিদেশি চ্যানেলগুলো পরিচালনা করা হয়। তারই প্রেক্ষিতে এখানে মোবাইল কোর্টে এসেছিলো এবং তা তদন্ত করতে আসলাম। আমরা আরও তথ্য নেবো এবং মনিটরিং এ থাকবো এবং যাচাই-বাচাই করবো। এখানে মোবাইল কোর্ট আসলাম প্রকৃত ঘটনাটা কি, তা জানলাম। সকল প্রকৃত ঘটনা জানার পর এখন পর্যন্ত স্পট হয়নি উনি এই পাইরেসির সঙ্গে যুক্ত আছে। যেহেতু আমাদের কাছে প্রকৃত স্পট হয়নি, সেহেতু আমরা মোবাইল কোর্ট একশন নেবো না। আমরা আরও জানবো ও তথ্য যাচাই-বাচাই করবো, যাতে কেউ এই ধরণের পাইরেসির সঙ্গে জড়িত না থাকতে পারে আমরা সেই দিকে মনিটরিং এ রাখবো।
এসময় ডিস ব্যবসায়ী ইসতু সোহেল সংবাদ কর্মীদের বিভিন্ন বিষয়ে ভুল বুঝিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
প্রসঙ্গত, সরকার অনুমোদিত বিদেশি পে-চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যতিত অবৈধ উপায়ে ডাউনলিংক এবং বিজ্ঞাপন সম্বলিত বিদেশি পে-চ্যানেলসমূহ প্রদর্শন বন্ধ করা ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, র্যাব-১১, সদর ইউএনও, সদর মডেল থানা বরাবর অভিযোগ দেয় মিডিয়া কেয়ার লিমিটেড। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মিডিয়া কেয়ার লিমিটেড সরকার কর্তৃক অনুমোদিত (সনি গ্রুপ, জি গ্রুপ এবং ডিসকভারী গ্রুপ) জনপ্রিয় সর্বাধিক সংখ্যক বিদেশি পে-চ্যানেলসমূহের একমাত্র পরিবেশক। যা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে ডাউনলিংক করে বৈধ ক্যাবল অপারেটরদের মাঝে পরিবেশন করছে। উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে "ইসতু ক্যাবল নেটওয়ার্ক”, স্বত্বাধিকারী জনাব সোহেল, মোবাইল : ০১৭১৫-০৯২৯৮৬, ঠিকানা : আমলা পাড়া, কালীর বাজার, সদর, নারায়ণগঞ্জ, যেখানে সরকার অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে বিদেশী চ্যানেলসমূহ না নিয়ে ‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬- এর ধারা ৩ এর (১), (৪) এবং ১৯ (১৩) অমান্য করে অবৈধভাবে বিদেশী ডিটিএইচ (উঞঐ) (ঞঅঞঅ ঝশু, উরংয ঞঠ, ঝঁহ উরৎবপঃ ইত্যাদি) বা অন্য অবৈধ পন্থার মাধ্যমে বিদেশী বিজ্ঞাপন সম্বলীত চ্যানেলসমূহ ডাউন লিংক করে কেবল ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এর, তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত পত্রের স্মারক নং- ১৫.০০.০০০০.০২৪.১৮.০০১.১১.১৪০ তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ইং এ অবৈধ ঝবঃ ঞড়ঢ় নড়ী ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ভারী করা হয়েছে (কপি সংযুক্ত) এবং ৪ই অক্টোবর, ২০২১ইং তারিখে স্মারক নং-১৫.০০.০০০০.০২৪.০৪.০০২.১৫-৪৫১ (৮)-ক্লিন ফিড এর ব্যাপারে ঘোষনা রয়েছে (কপি সংযুক্ত)। উপরোক্ত তথ্যের আলোকে "ইসতু ক্যাবল নেটওয়ার্ক" নামে অসাধু কেবল অপারেটর এর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ ডাউনলিংক এর মাধ্যমে প্রদর্শিত বিদেশী বিজ্ঞাপন সম্বলীত পে-চ্যানেলসমূহ বন্ধ করতঃ অবৈধ যন্ত্রপাতি জব্দ এবং কন্ট্রোল রুম সিলগালা করাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে বিনীত অনুরোধ করছি।
এদিকে বৈধ ক্যাবল টিভি ব্যবসায়ীকে আইনগত সহায়তা ও ব্যবসায়ীক নিরাপত্তা প্রদান প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন জানিয়েছে ক্যাবল অপারেটরস্ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) সভাপতি এ.বি.এম সাইফুল হোসেন। অভিযোগে বলেন, ক্যাবল অপারেটরস্ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) সমগ্র দেশে ব্যবসারত ক্যাবল অপারেটরদের একমাত্র বাণিজ্যিক সংগঠন। সমগ্র দেশের ক্যাবল ব্যবসা যাতে সুষ্ঠু এবং শান্তি শৃংখলার মধ্যে পরিচালিত হয় সেজন্য অত্র সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। শফিকুল ইসলাম, স্বত্বাধিকারী- আরিয়ান ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক, সাং- দেওভোগ মাদ্রাসা, পানির ট্যাংকি, নারায়নগঞ্জ, বাণিজ্য সংগঠন ক্যাবল অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এর সম্মানিত সদস্য এবং আমাদের জ্ঞাতসারে গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সকল রাজস্ব পরিশোধ করে বিটিভি লাইসেন্স গ্রহণের মাধ্যমে বৈধ ভাবে ক্যাবল টিভি ব্যবসা পরিচালনা করছেন। বিগত ২৮/১১/২০২৪ ইং তারিখ জনাব শফিকুল ইসলাম, ১) মো: মোশারফ হোসেন সোহেল, স্বত্বাধিকারী ইসতু ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক, সর্বসাং- ২০.কে.বি সাহা রোড, আমলাপাড়া, নারায়ণগঞ্জ ২) মৃদুল স্যাটেলাইট এন্ড ক্যাবল নেটওয়ার্ক প্রোপাইটর- ঝর্না আক্তার ৭২নং ডি.এন রোড, গোলপাড়া গলাচিপা, নারায়নগঞ্জ এদের নেতৃত্বে স্থানীয় ছেলে চপলের মাধ্যমে বৈধ ব্যবসায়ীক এলাকা জোর পূর্বক ভাবে দখল করে গ্রাহক সংযোগ প্রদান করে অবৈধ ভাবে ক্যাবল টিভি ব্যবসা পরিচালনা করা সহ নানাবিধ হুমকী প্রদান করছেন উল্লেখ করে কোয়াব কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ পত্র প্রদান করে। অভিযোগ পত্রে উল্লেখিত ব্যক্তিরা জোর পূর্বক ভাবে দখল করে ব্যবসা করার ফলে কোয়াব সদস্য শফিকুল ইসলাম ব্যবসায়ীক এবং আর্থিক ভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন একই সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ক্যাবল টিভির ব্যবসার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশংকা বিরাজ করছে। সুষ্ঠু ক্যাবল টিভি ব্যবসার স্বার্থে কোয়াব সদস্য শফিকুল ইসলাম এর অভিযোগ পত্রে উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বৈধ ব্যবসায়ীকে ব্যবসায়ীক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ সহ অভিযোগপত্র এতদসঙ্গে প্রেরণ করা হলো।
আরেক চিঠিতে পাইরেসি করে গ্রাহক পর্যায়ে বিদেশি পে-চ্যানেলসমূহ বিতরণ, প্রদর্শন এবং অবৈধ সম্প্রচার প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক, তথ্যমন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছে ওয়ান ওয়ান অ্যালায়েন্স লিমিটেড। সেখানে বলা হয়, ওয়ান অ্যালায়েন্স লিমিটেড গত ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় হতে অপাপত্তি গ্রহন পূর্বক বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এর কাছ থেকে ক্যাবল ডিস্ট্রিবিউটর লাইসেন্স গ্রহনণকরে এবং উক্ত লাইসেন্সের অধীনে ওয়ান অ্যালায়েন্স লিমিটেড একমাত্র বৈধ পরিবেশক হিসেবে ওহফরধঈধংঃ এর চ্যানেলসমূহ (ঈড়ষড়ৎং, ঈড়ষড়ৎং ইধহমষধ, ঘরপশ, ঘরপশ ঔৎ., ঐরংঃড়ৎু ঞঠ১৮, গঞঠ, ঝড়হরপ, ঠঐ১, ঈড়সবফু ঈবহঃৎধষ) বাংলাদেশে বিতরণ করার অধিকার সংরক্ষণ করে। ক্যাবল ডিস্ট্রিবিউটর লাইসেন্স প্রাপ্তির পর হতে বৈধভাবে ওহফরধঈধংঃ এর চ্যানেলগুলো ডাইনলিংক পূর্বক গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করার। সময় আমাদের কাছে ইহা প্রতিয়মান হয় যে কিছু ক্যাবল অপারেটর তাদের ক্যাবল অপারেটর লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন ২০০৬ ও ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা ও লাইসেন্সিং বিধিমালা, ২০১০ এর ব্যতায় ঘটিয়ে ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনুমোদনহীন ডিটিএইচ যন্ত্রপাতি, সেট টপ বক্স ইত্যাদিসহ অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাহায্যে অবৈধ ভাবে ওহফরধঈধংঃ এর চ্যানেলগুলোর ফিড পাইরেসি করে গ্রাহকের নিকট বিতরন ও প্রদর্শন করছে। ফলশ্রুতিতে, এরুপ কর্মকান্ডে ব্যবহ্রত বাংলাদেশে অনুমোদনহীন ডিটিএইচ যন্ত্রপাতি, সেট টপ বক্স অবৈধ ভাবে আমদানি করার কারনে প্রচুর পরিমান অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ সরকার বৈধভবে বিদেশী পে চ্যানেল বিতরণের উপর প্রযোজ্য কর যেমন ভ্যাট, এস ডি, ইত্যাদি) বাবদ বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, আপনার আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ জেলায় "ইয় কেবল টিভি নেটওয়ার্ক", যাহার প্রো. জনাব মোশারফ হোসেন, ব্যবসায়িক ঠিকানা ২০. কে বি সাহা রোড, নারায়ণগঞ্জ, যিনি অবৈধ উপায়ে (অনুমোদনহীন ডিটিএইচ যন্ত্রপাতি, সেট টপ বক্স ইত্যাদিসহ অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাহায্যে) বিদেশী পে-চ্যানেলসমূহ গ্রাহক পর্যায়ে সম্প্রচার করছে এবং বিভিন্ন 'আই এস পি" তে সরবরাহ করছেন, যা দেশীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ, বিধায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রস্থ পত্রের মাধ্যমে সকল জেলা প্রশাসককে নিজ নিজ আওতাধীন জেলায় এরুপ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে। আপনার আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ জেলায় "ইন্তু কেবল টিভি নেটওয়ার্ক” কর্তৃক অবৈধ উপায়ে বিদেশী পে-চ্যানেলসমূহ গ্রাহক পর্যায়ে সম্প্রচার করছে, যার পাইরেসির প্রমাণাদি সংযুক্ত করা হল। উল্লেখ্য যে, "ইস্তু কেবল টিভি নেটওয়ার্ক" কর্তৃক অবৈধ ক্যাবল ব্যবসায় পরিচালনার কারনে উক্ত এলাকায় বৈধ ক্যাবল অপারেটরগন ব্যবসায়িক ভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে যা বিভিন্ন ক্যাবল অপারেটর আমাদের কাছে অভিযোগ করেছে। তাছাড়া এই অবৈধ কার্যক্রমের কারনে উক্ত এলাকায় মারামারি, হানাহানির সহ আইন শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই উক্ত অবৈধ ক্যাবল অপারেটরের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনি আইনি ব্যাবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানাচ্ছি।