Logo
Logo
×

নগর জুড়ে

বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় চিহ্নিত ভূমিদস্যু এসএম রানা আটকের ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় চিহ্নিত ভূমিদস্যু এসএম রানা আটকের ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা

বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় চিহ্নিত ভূমিদস্যু এসএম রানা আটকের ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা

 বিদেশে পালিয়ে পাওয়ার সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানো হত্যা মামলার আসামী ও নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি, চিহ্নিত ভূমিদস্যু মাদারপ্রিন্টের মালিক এস.এম রানাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। এসএম রানা কুখ্যাত গডফাদার আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর অন্যতম সহযোগী। টিটু পালিয়ে যাওয়ার পর এসএম রানা বিসিরি সভাপতি ফারুক আহমেদের ছায়াতলে চলে যান। রানার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রহত্যা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারকাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করা, টিটু-ফজরআলী সিন্ডিকেটের সাথে মিলে ব্যাপক ভূমিদস্যুতা, অধিগ্রহণের টাকা নয়-ছয়সহ বহু অভিযোগ রয়েছে।




জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে দুবাই পালিয়ে যাওয়ার পথে এয়ারপোর্টে তাকে আটক করা হয়। পরে এয়ারপোর্ট থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এস.এম রানাকে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন নারায়ণগঞ্জ (পিবিআই)’তে আনা হয়। এবিষয়টি পিবিআই পুলিশ সুপার জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আনা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।



এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনের সময় শামীম ওসমান ও তার শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর সাথে গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে শতাধীক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালায় এস.এম রানা। সেই সময় ক্লাবের সামনে থেকে রানার নেতৃত্বে গুলিবর্ষণ ও ককলেট বিস্ফোরণ করা হয়। বিগত দিনগুলোতে শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জে ভূমিদস্যুতা, অধিগ্রহণের টাকা নয়-ছয় ও মাদক ব্যবসা সহ বিভিন্ন অপকর্ম করতেন এই রানা। এছাড়াও গডফাদার শামীম ওসমানের ভূমিদস্যু ও জায়গা-জমির দখলদারির সকল কাজ করাতেন তার শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর মাধ্যমে। আর এই তানভীর আহমেদ টিটু’র ভূমিদস্যুতার পার্টনাল ছিলেন এক সময়ের প্রিন্টের হেলপার এস.এম রানা। ভূমিদস্যুতার পার্টনাল বানিয়ে এস.এম রানাকে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলোর মধ্যে রেখেছেন তানভীর আহমেদ টিটু। এদিকে শহরের নিতাইগঞ্জ থেকে শুরু করে গোগনগর পর্যন্ত ভূমিদস্যুতার জন্য মোটা অংকের অর্থ দিয়ে বিশাল বাহিনী তৈরি করেছিলেন এস.এম রানা। আর এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন চৌধুরী বিটু।


বিটু নেতৃত্বেই পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীদের দিয়ে মাদক ব্যবসা ও অসহায় মানুষের জায়গা-জমি দখল করতেন। এভাকে শহীদনগর থেকে শুরু করে গোগনগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের জায়গা জমি দখল করেছেন এস.এম রানা। আর এই সকল কাজের পার্টনাল ছিলেন শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পরে গডফাদার শামীম ওসমান ও তার শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও প্রকাশ্যেই নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকায় অবাধে চলাফেরা করতেন ভূমিদস্যু ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামী এস.এম রানা। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার উপর গুলিবর্ষণের সময় এই এস.এম রানাকে সাদা পাঞ্জাবী পড়া নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে সন্ত্রাসীদের সাথে হামলা করতে দেখা গেয়েছে। যার ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেখা গিয়েছে। সেদিন এস.এম রানার নেতৃত্বে শহীদ নগর, আল-আমিন নগর, গোগনগর সহ বিভিন্ন এলাকার থেকে প্রায় শতাধীক ভাড়াটে বাহিনী ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালায়। সেই হামলার সময় শতাধীক ভাড়াটে বাহিনীর হাতে অস্ত্র তুলে দেন এস.এম রানা। সেই অস্ত্র এখনও এস.এম রানার কাছেই রয়েছে। এদিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরে এস.এম রানা ভোল পাল্টে বিসিবির সভাপতি ফারুক আহাম্মেদের পার্টনার সাজার চেষ্টা করে যা নিয়ে বিরূপ সমালোচনার ঝড় উঠে। সম্প্রতি কয়েকটি চ্যানেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার উপর গুলি চালানো এস.এম রানা বিসিবিতে অবাধ পদচারণা ও বিসিবির সভাপতির সঙ্গে সখ্যতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। এছাড়াও গত ২৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা, শামীম ওসমান সহ ৪৭নম্বর আসামী তালিকায় রয়েছে এস.এম রানা। কিন্তু গত ৬টি মাস হত্যা মামলার আসামী হয়েও বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদ এর ছত্রছায়ায় ছিলেন রানা। গতকাল বুধবার দুবাই যাওয়ার পথে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআইতে নিয়ে আসা হয়।



এদিকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহলের সাধারণ মানুষ জানান, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে গডফাদার শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহাম্মেদ টিটুর হাত ধরেই উত্থান ঘটেছিল এস.এম রানার। টিটুর মতো রানাও ভদ্রতার মুখোশ পড়ে থাকলেও মূলত গোগনগর ও আশেপাশের এলাকা ছিল রানার নিয়ন্ত্রণে। টিটুর আর্শিবাদে সে গড়ে তুলেছিল সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুতার সিন্ডিকেট। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন ঠেকাতে গডফাদার শামীম ওসমানের নেতৃত্বে শ্যালক তানভীর আহাম্মেদ টিটুর অস্ত্রবাজির ভিডিও ইতোপূর্বে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই অস্ত্রের মহড়ায় টিটুর পার্টনার এস.এম রানাকেও  দেখা গেছে। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে গডফাদার শামীম ওসমান ও তার শ্যালক টিটু। তবে দেশেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন টিটুর পার্টনার ঠান্ডা মাথার ভূমিদস্যু সন্ত্রাসী রানা। বর্তমানে টিটুর সকল ব্যবসা জায়গা জমি দেখা শুনা করছেন এই রানা। বিগত আওয়ামীলীগ শাস-নামলে এস.এম রানার বিরুদ্ধে অসংখ্য সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুতার অভিযোগ রয়েছে। এস.এম রানা বিগত আওয়ামীলীগ শাসনামলে পরিচয় দিতো নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী এমপি গডফাদার শামীম ওসমানের শ্যালক বিসিবির সাবেক পরিচালক, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডের সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সেক্রেটারী তানভীর আহাম্মেদ টিটুর পার্টনার। এমপির শ্যালকের ঘনিষ্টতায় গেল ১৫ বছরে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গিয়েছিল সে। একসময় একটি ছাপাখানার হেলপার হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করলেও গত দেড় দশকে টিটুর ঘনিষ্টতায় সে যেন আলাদিন চেরাগ পেয়েছিল। ভূমিদস্যুতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সে শীতলক্ষ্যা, আল-আমিন নগর, শহীদনগর ও গোগনগর এলাকায় সৃষ্টি করেছিল ত্রাসের রাজত্ব। এমনকি বাগিয়ে নিয়েছিল নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদও। এছাড়াও শামীম ওসমান ও শ্যালক টিটুর শেল্টার থাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণের ঘুষ কান্ডের মামলা থেকেও বেঁচে যায়। টিটুর ঘনিষ্টতায় বদলে যায় রানার ভাগ্য। ভূমিদস্যুতা, বালুমহল ইজারার নামে চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে রানা বনে যায় অঢেল অর্থের মালিক। এবিষয়ে এলাকাবাসী আরও জানান, এসএম রানা নিরীহ মানুষের জায়গায় ছলেবলে সুকৌশলে বায়না করে কদমতলী এলাকায় মাদার প্রিন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে টর্চার সেলে নিয়ে মারধর করে ভয় ভীতি দেখিয়ে মানুষের জায়গা জমি হাতিয়ে নিত।


এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে রানার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির অসংখ্য মামলা রয়েছে। অপর দিকে প্রশাসনের ক্রসফায়ারের আসামি মাদকের গডফাদার সালাউদ্দিন চৌধুরী বিটুকে ব্যবহার করে ফিল্ম স্টাইলে মাদক ও ভূমিদস্যু সাম্্রাজ বিস্তার লাভ করে রানা। গত ৫ বছর আগে মাদার প্রিন্টের ব্যবহৃত গাড়িসহ ৪শ বোতল ফেন্সিডিল নিয়ে প্রশাসনের কাছে আটক হয় রানার ছোট ভাই এস.এম মাসুদ। বর্তমানে তার ভাই মাসুদ দুবাই রয়েছেন। এছাড়া সড়ক ও জনপথ উন্নয়নে ভূমি অধিগ্রহণের রয়েছে এস এম রানার দুর্নীতি। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটি থেকে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য সরকার যে জায়গা একোয়ার করেছে সেই জায়গাগুলোর মালিকদের নানাভাবে ভুল বুঝিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই রানার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে বিগত দিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ওই সকল ভূমি মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল রানা। এছাড়া যাদের জায়গা বাড়ি-ঘর একোয়ার হয়নি তাদেরকেও খবর দিয়ে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে ওই জায়গা সরকার একোয়ার করে নিবে এবং একোয়ার থেকে রানা তাদেরকে উদ্ধার করে এমন কথা বলেও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিল রানার বিরুদ্ধে। এছাড়াও ওয়ারিশের থেকে জমি বায়না করে সেই জমি দখল করে জমির মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ দাবি করে এস এম রানা। এহের কাজে রানার সহযোগিতায় রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের একটি অসাধু চক্র ও প্রশাসনের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি। তারা একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আর এই সিন্ডিকেটের শেল্টারদাতা ছিল গডফাদার শামীম ওসমান ও তার শ্যালক তানভীর আহাম্মেদ টিটু। গত বছরের ১৮ জানুয়ারি দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সার্ভেয়ার কাওসার আহমেদকে। কার্টনভর্তি ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় রানার নাম আসলেও তৎকালে শামীম ওসমান ও টিটুর কারণে এই রানা বেঁচে যায়। সিদ্ধিরগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের প্রাক্তন আউটসোর্সিং কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম সুমনকে আসামি করে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। বর্তমানে ওই দুর্নীতি মামলাটির সঠিক তদন্ত করলে থলের বেড়াল রানার নাম বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সকলে। ইতোমধ্যে বিগত দিনে রানার পক্ষ অবলম্বন করা দুদকের কর্মকর্তাবৃন্দসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা বদলে হয়েছে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন