টিটু-কাজলের সিন্ডিকেটে বেপরোয়া ছিল রানা, ফারুকে শেষ আশ্রয়

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

টিটু-কাজলের সিন্ডিকেটে বেপরোয়া ছিল রানা, ফারুকে শেষ আশ্রয়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন অবস্থায় ছাত্র-জনতা উপর গুলি বর্ষণকারি ও গডফাদার শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর ভূমিদস্যুতার পার্টনাল এবং নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি চিহ্নিত ভূমিদস্যু এস.এম রানাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে তিনটায় দুবাই পালিয়ে যাওয়ার পথে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালীন নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে থেকে গডফাদার শামীম ওসমান ও তার শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর নেতৃত্বে প্রায় শতাধীক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ছাত্র জনতার উপর ককলেট বিস্ফোরণ ও গুলি চালায় এস.এম রানা। সেদিন সন্ধ্যায় কাজের থেকে বাড়ি ফেরার পথে দেওভোগ এলাকায় ১৯ বছরের রাসেল নামে এক হোসিয়ারী শ্রমিক তাদের গুলিতে আহত হয়। পরে আহত শ্রমিক রাসেলকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দু’দিন পরে সে মারা যায়। সেই নিহতের ঘটনায় হোসিয়ারি শ্রমিক রাসেল এর পিতা পিন্টু রহমান বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় চিহ্নিত ভূমিদস্যু এস.এম রানাকে গ্রেফতার করেন পুলিশ।
এবিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ জেলা জানান, গত ১৯/০৭/২০২৪খ্রিঃ সন্ধ্যার সময় নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন দেওভোগ এলাকায় সারা দেশ ব্যাপী ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন অবস্থায় নারায়ণগঞ্জে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিল। এ সময় আওয়ামীলীগের সাবেক এম.পি. অত্র মামলার এজাহানামীয় ০১নং আসামী শামীম ওসমান ও তার শ্যালক নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সভাপতি ১২নং আসামী তানভীর আহমেদ টিটুদের নেতৃত্বে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী সহ বর্ণিত আসামী এস.এম.রানা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে জনমনে আতংক সৃষ্টি করার জন্য নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় চলাচলরত আপাময় জনসাধারণ, বিক্ষোভকারী ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং পিন্ডল, রাইফেল ও বিভিন্ন অস্ত্র-শস্ত্র সমেত বহর নিয়ে গুলি বর্ষণ করতে থাকে, যার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় এস.এম.রানার সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি দৃশ্যমান রয়েছে। ঐ দিন সন্ধ্যা অনুমান ০৬.০০ ঘটিকার সময় বাদী ছেলে রাসেল (১৯) বাসায় যাওয়ার সময় উক্ত আসামীদের অস্ত্রের গুলি তার ছেলের বুকে লেগে গুরুত্বর আহত হলে আশপাশের লোকজন তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। সেখানে বাদীর ছেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২২/০৭/২০২৪খ্রিঃ মৃত্যুবরণ করেন। স্থানীয়ভাবে জানা যায় উক্ত আসামী সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। সে এলাকায় অবৈধ ভাবে প্রভাব বিস্তার করে এজাহারনামীয় আসামী শামীম ওসমান ও তার শ্যালক তানভীর আহমেদ রহমান টিটুর ছত্রছায়ায় থেকে জমি দখল, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, গুম ইত্যাদি বিভিন্ন অপকর্ম করা সহ অত্র মামলার ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত থেকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় সে ছাত্র জনতার উপর নির্যাতন নিপীড়ন সহ বোমা বিস্ফোরণ ও গুলি করেছে মর্মে যথেষ্ট সাক্ষ্য, প্রমান পাওয়া যায়। উক্ত আসামী ৫ আগস্ট/২৪ এরপর থেকে নারায়গঞ্জ শহর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আত্মগোপনে ছিল। তথ্য উপাত্ত মোতাবেক বিভিন্ন স্থানে পুলিশি গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করে সর্বশেষে তাকে এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে ১৯/০২/২০২৫খ্রিঃ গ্রেফতার করা হয়। সদর থানার মামলা নং-১২,তাং- ২৭/০৮/২০২৪, জি.আর.নং- ২৩১, ধারাঃ-১৪৩/৩২৬/৩০৭/৩০২।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে হত্যা মামলায় ভূমিদস্যু এস.এম রানা গ্রেফতার হলেও এখন ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে গডফাদার শমীম ওসমান ও তার শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরেই পালিয়ে যায় শামীম ওসমান ও তার শ্যালক তারভীর আহমেদ টিটু। কিন্তু তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও এখনও দেশের মধ্যে আত্মগোপনে রয়েছে তাদের চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। যাদেরকে দিয়ে বিগত ১৫টি বছর নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন জায়গা-জমি দখল করেছে শামীম ওসমান ও তার শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু। তাদের মধ্যে অন্যতম ভূমিদস্যু হচ্ছে গডফাদার শামীম ওসমানের বন্ধু নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সাবেক সভাপতি ও রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খালেদ হায়দার খান কাজল। যাকে দিয়ে গত ১৫ বছরে শামীম ওসমান কোটি কোটি টাকার জায়গা-জমি আত্মসাৎ করেছে। এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালিন সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হাতে রাইফেল ক্লাবের সকল অস্ত্র তুলে দেন এই খালেদ হায়দার খান কাজল। বর্তমানে কাজলের কাছে এসকল সকল অস্ত্র রয়েছে। কাজলকে আইনের আওতায় আনলেই সকল অবৈধ অস্ত্রের তথ্য পাওয়া যাবে। বর্তমানে কাজল দেশের মধ্যেই পলাতক রয়েছে।
এছাড়াও গডফাদার শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর ভূমিদস্যুতার আরেক পার্টনাল হচ্ছে গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজর আলী। বিগত দিনগুলোতে টিটুর সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জে গোগনগর এলাকায় ভূমিদস্যুতা, অধিগ্রহণের টাকা নয়-ছয় ও জমি-দখল সহ বিভিন্ন অপকর্ম করতেন এই ফজর আলী। যিনি গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের বিতর্কিত একজন চেয়ারম্যান। বিগত আমলে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের আর্শিবাদে গোগনগরে গড়ে তুলেছেন বিশাল বিচ্ছু বাহিনী। গুম, খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন এই ফজর আলী। বর্তমানে দেশের মধ্যেই পলাতক রয়েছেন ভূমিদস্যু ফজর আলী।
এছাড়াও তানভীর আহমেদ টিটু’র আরেক ব্যবসায়ী পার্টনাল ছিলেন বিসিবির বতর্মান সভাপতি ফারুক আহমেদ। গত ৫ আগস্ট শামীম ওসমান ও তানভীর আহমেদ টিটু পালিয়ে যাওয়ার পরে ভূমিদস্যু এস.এম রানাকে ঢাকায় আশ্রয় দিয়েছিলেন বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদ টিটু। সূত্রে জানা যায়, তানভীর আহমেদ টিটুর সাথে বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদও জমির ব্যবসা করতেন। সেই সুবাদে এস.এম রানাকে আশ্রয় দেন ফারুক আহমেদ। কিন্তু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে তিনটায় এস.এম রানা এয়ারপোর্টে আটক হলে তাকে ছাড়িয়ে সেখানে যান ফারুক আহমেদ। কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে পুলিশের হাত থেকে রানাকে ছাড়াতে ব্যর্থ হন বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদ।
এবিষয়ে অনেকে জানান, গডফাদার শামীম ওসমানের ভূমিদস্যু ও জায়গা-জমির দখলদারির সকল কাজ করাতেন তার শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর মাধ্যমে। আর এই তানভীর আহমেদ টিটু’র ভূমিদস্যুতার পার্টনাল ছিলেন বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদ, ফজর আলী ও এক সময়ের প্রিন্টের হেলপার এস.এম রানা। এছাড়াও শহরের নিতাইগঞ্জ থেকে শুরু করে গোগনগর পর্যন্ত ভূমিদস্যুতার জন্য মোটা অংকের অর্থ দিয়ে বিশাল বাহিনী তৈরি করেছিলেন এস.এম রানা ও ফজর আলী। এস.এম রানার পালিত বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন চৌধুরী বিটু ও সাবেক চেয়ারম্যান ফজর আলীর বিচ্চু বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মেম্বার রুবেল। বিটু ও রুবেলের মাধ্যমে গোগনগর থেকে শুরু করে নিতাইগঞ্জ এলাকায় মাদক ব্যবসা ও অসহায় মানুষের জায়গা-জমি দখল করতেন তারা। বর্তমানে রুবেল জেলে থাকলেও বিটুর রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।