চাষাঢ়ায় ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার

লতিফ রানা
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

চাষাঢ়ায় ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার
ছোট্ট শহর নারায়ণগঞ্জ। তবে ছোট্ট এই শহরের লোক সংখ্যা কিন্তু মোটেই ছোট্ট নয় (কম নয়)। ঢাকা বিভাগে অবস্থিত জেলাগুলোর মধ্যেও সবচেয়ে ছোট্ট জেলা নারায়ণগঞ্জ। অথচ এই ছোট্ট জেলাটিই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরণের ভূমিকা রেখে এসেছে। যে নারায়ণগঞ্জ এক সময়ে পাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রেখে আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম কেড়ে নিয়ে প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাতি অর্জন করেছিল। সেই নারায়ণগঞ্জই এখন পোশাক শিল্পসহ হোসিয়ারী ও লবন শিল্প এবং এরকম আরও বহু শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাইতো এই ছোট্ট জেলাটি এক সময়ে বাংলাশের একটি ধনী জেলারও স্বীকৃতি অর্জন করেছিল। এখনও ধনী জেলার অন্যতম শীর্ষ তালিকায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জের নাম। এসমস্ত শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি অফিস আদালত নারায়ণগঞ্জের মূল শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠায় জেলার তিন ভাগের দুই ভাগ লোকই এখন শহর কেন্দ্রীক।
লোকসংখ্যার ঘনত্ব অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার পরই নারায়ণগঞ্জ শহরের অবস্থান। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ন একটি শহর যেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোক চলাচল করে। সেখানে পুরো শহরের কোন খানেই নির্মাণ করা হয়নি কোন ফুটওভার ব্রিজ। ফলে শহরের গুরুত্ব পয়েন্টেগুলোতে প্রতিদিন বিভিন্ন পেশার লক্ষ লক্ষ মানুষ ঝুঁকির মধ্যেই রাস্তা পারাপার হচ্ছে। যার ফলে একদিকে যেমন সব চেয়ে বড় ভোগান্তি হিসেবে পরিচিত যানজট আরও বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে সর্বদা যানবাহন চলাচলে ব্যস্ত থাকা রাস্তাগুলোতে ঝুঁকিতে পারাপার হওয়ার বেড়ে যাচ্ছে দুর্ঘটনার শঙ্কা।
ইতিহাসবিদদের মতে ছোট্ট এই শহরের ছোট্ট এলাকা টানবাজারকে কেন্দ্র করে এক সময় গড়ে উঠা ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পরিচয়। এই টানবাজারকে কেন্দ্র করে এক সময়ের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদী বন্দরটিও গড়ের ওঠে নারায়ণগঞ্জে। বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর নদী বন্দর হিসেবে যার খ্যাতি আছে। এই টানবাজারকে কেন্দ্র করেই পাশাপাশি গড়ে উঠে লঞ্চ টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল ও নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন। টার্মিনালগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় গুদারাঘাট বা ১নং সেন্ট্রাল খেয়া ঘাট প্রতিদিন পারাপার হয়ে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখের মতো যাত্রী। যা বাংলাদেশের আর কোথাও হয় না বলে যাত্রী সাধারণের দাবি। সেই ছোট্ট শহরটি পরে প্রসারিত হয়ে নিতাইগঞ্জ ও ডিআইটি এলাকা যুক্ত হলেও পরে তা আরও বেড়ে নিতাইগঞ্জ থেকে বিবি রোডের আশেপাশের এলাকা ঘিরে উত্তর পশ্চিমে জামতলা, উত্তরে চাঁনমারি ও উত্তর পশ্চিমে খানপুর হাসপাতালের শেষ মাথা পর্যন্ত এলাকাকেই জেলার মূল শহর হিসেবে ধরা হয়। যার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসে চাষাঢ়া গোল চত্বর এলাকা। এই চাষাঢ়ায় একদিকে হাজার হাজার যানবাহনের চলাচল অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতি।
অথচ চাষাঢ়ার মতো এমন একটি ঘিঞ্জি এলাকায়ও কোন ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ব্যস্ততম সড়ক পার হচ্ছেন। এতে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঘটনা ঘটছে। শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার লোকজনের দাবির মুখেও বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনসহ কোন সংস্থাই এখনও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করেননি। অথচ শহরের গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি পয়েন্টে ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করা গেলে শহরবাসীর সব চেয়ে বড় ভোগান্তি যানজটের কিছুটা সুরাহা হতো বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জবাসী। তাই তারা জরুরী ভিত্তিতে শহরের চাষাঢ়াসহ ২নং ও ১নং রেলগেট এলাকায় বিবি রোডের উপর ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়দের মতে, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণ কেন্দ্র হচ্ছে চাষাঢ়া। চাষাঢ়ায় রয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, ঢাকা-ফতুল্লা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়কের মিলনস্থল। যার পাশে অবস্থিত নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এদিকে চাষাঢ়া থেকেই নারায়ণগঞ্জের প্রধান সড়ক বিবি রোডের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় খেয়াঘাট, লঞ্চ টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল, ট্রেন স্টেশনসহ পাইকারী ব্যবসার এলাকা নিতাইগঞ্জের যোগাযোগ। যার জন্য চাষাঢ়া একটি ব্যস্ততম স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার লোকজন চাষাঢ়ায় এসে সড়ক পারাপার হচ্ছে। চাষাঢ়ার আশপাশেই রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজ ও সরকারী তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দুটি সরকারী কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীরাও চাষাঢ়ায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তায় কেউ কোন দায়িত্ব নিচ্ছে না বলে দীর্ঘদিন যাবতই ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন শহরবাসী। প্রায় দেড় যুগ যাবত শহরের এসব গুরুত্বপূর্ন জায়গায় ফুটওভার ব্রিজের দাবি জানিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে তাদের অভিযোগ।
জেলা সচেতন মহলের দাবি এসব স্থানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনও করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করা হলেও কোন এক অজানা কারণে দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ন লোকালয়ের এলাকায় কেন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে না, তা রহস্যজনক বলে মনে করছেন তারা।