আজমেরী ওসমানের গুন্ডা মুকিতের দুঃসাহস

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

আজমেরী ওসমানের গুন্ডা মুকিতের দুঃসাহস
বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে সকল ধরনের অপরাধ চালিয়ে ওসমান সম্রাজ্যের গুন্ডাপান্ডারা এখন পলাতক রয়েছে। কিন্তু পলাতক থেকেও আজমেরী ওসমানের গুন্ডা পান্ডারা নেপথ্য থেকে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে নিজেদের উগ্রতার জানান দিচ্ছে। সম্প্রতি রমজান মাসে নারায়ণগঞ্জে আজমেরী ওসমানের গুন্ডাবাহিনীর সৈনিকরা ঝটিকা মিছিল করে। এর পর থেকে এই মিছিলের নেপথ্যে কারা রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জে অশান্তি তৈরীর জন্য আওয়ামী লীগের হয়ে ওসমান সম্রাজ্যের পালিত চ্যালা চামুন্ডা আড়ালে থেকে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে কখনো ব্যানার পোষ্টার, আবার কখনো রাজপতে জটিকা মিছিল করে নিজেদের জানান দেন তারা এখনো আছেন। তাদের নামে বৈষম্য বিরোধী হত্যা মামলা সহ একাধিক মামলা রয়েছে।
এদিকে ২৭ মার্চ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রুটে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসামনের পুত্র আজমেরী ওসমানের সমর্থকেরা রাতের অন্ধকারে মাস্ক লাগিয়ে ওই মিছিলটি করে। এই মিছিলের মাধ্যমে আজমেরী ওসমানের গুন্ডা মুকিতের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে। এই মুকিত হলেন আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমের জায়গা দখল নেয়ার কন্ট্রাক্টর। তাকে দিয়ে তার অপরাধ জগত চালানো হত। আর এদেরকে বিগত সময়ে শেল্টার দিতেন অর্ধশত হত্যা মামলার আসামি আজমেরী ওসমান। যেখানে আওয়ামী লীগের কেউ মিছিল করার সাহস দেখায় নাই সেখানে আজমেরী ওসমানের এই গুন্ডা দুঃসাহস দেখিয়েছেন।
তথ্যমতে, রমজানে হয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ মিছিলে ব্যবহৃত ব্যানারে ডান পাশের উপরে ছিলো শেখ মুজিবুর রহমান ও সজীব ওয়াজেদ জয় এর ছবি। নিচে বড় করে আজমেরী ওসমানের ছবি। বাম পাশে ছিলো ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। ওই মিছিলে সবার মুখেই ছিলো মাস্ক। তাই কাউকেই তেমন ভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে মিছিলের সামনের ভাগে মাত্র একজন ব্যক্তিই ছিলেন মাস্ক ছাড়া। তিনি হলেন আজমেরী ওসমানের পালিত গুন্ডা মুকিত রহমান। যার নামে সকল ধরণের অপরাধের অভিযোগ সহ মামলা রয়েছে।
এছাড়া ওসমান পরিবারর অন্যতম গুম খুনে হত্যায় জরিত থাকা আজমেরী ওসমানের হোন্ডাবাহিনীর নেতৃত্ব প্রদানকারি সন্ত্রাসী মোশাইদ রহমান মুকিত। অপরাধ জগতের খুন করা থেকে টেন্ডার, জায়গা দখলের কন্টেক নিতেন সন্ত্রসী মুকিত। তার বিরুদ্ধে চাদাঁবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি জায়গা দখল করতে গিয়ে গুলি চালিয়ে মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী পর্যন্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের পতনের আগ পর্যন্ত দাপুটে ছিলেন। এমনকি ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করার আজমেরী ওসমানের গুন্ডাবাহিনীর অন্যতম হোতা হিসেবে হোন্ডাবাহিনী নিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। তাছাড়া জায়গা দখলের কন্টেক নিয়ে হোন্ডায় তেল ভরার জন্য আগেই তাকে ৫ লাখ দিতে হত। জায়গার পরিমানে আরও কমে বেশি নিয়ে থাকতো বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গত ৫ আগষ্টের পরে আজমেরী ওসমানের এই গুন্ডা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে রয়েছে। সন্ত্রাসী মুকিত ২০১০ সনের পরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে যোগ দিতেন। কয়েক বছর এই ভাবেই চলে তার। আজমেরী ওসমানের সেকেন্ড ইন কমান্ড লিমন থাকা কালিন সময়ে তার নেতৃত্বে বিশাল মিছিল নিয়ে যোগ দেন আজমেরীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে। লিমনকে তাড়িয়ে দেয়া হলে আজমেরী ওসমানের আরেক সন্ত্রসাী পিজা শামীমের হাত ধরে লাইম লাইটে আসে। এই পিজা শামীম জেলা ডিস ওয়াই ফাই সমিতির সভাপতি ছিলেন। নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের নাসিম ওসমান ভবনের পাশেই তার অফিস ছিল। এখানে বসে বিভিন্ন কিলিং মিশনের কন্টেক নিতেন মুকিত। তাছাড়া পিজা শামীমের সকল অপরাধমুলক কাজ সে বাস্তবায়ন করতেন।
সন্ত্রসাী মুকিত নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মানুষের কাছে আতঙ্ক ছিলেন। কখন জানি কার কাছে চাদাঁ চাইতে আসেন। আজমেরী ওসমানের সন্ত্রাসবাহিনীর উপদেষ্টা আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজে শামীমের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ হোন্ডাবাহিনী নিয়ে জায়গা দখলে জান মুকিত সহ অন্যান্য সন্ত্রসীরা। তখন তারা তাদের গুলিতে বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের প্রয়াত রাইসুল চেয়ারম্যানের ছেলে গুলিতে আহত হন। যদিও এলাকার গণধোলাই খেয়ে কোনরকম পালিয়ে জান বাচেঁ তার। পরে এই ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখ্য করে বন্দর থানা মামলা হয়। যার মামলা নং ৩৬। ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩০৭/৩২৫/৩২৬/৪৩৬/৪২৭/৫০৬ পেনাল কোডে বন্দর থানায় মামলা হয়। বন্দর শীতলক্ষ্যা ব্রীজের স্ট্যান্ড ছিল তার দখলে। সেখান থেকে মাসে ২০ লাখ টাকার চাদাঁ আসত। এছাড়া মেয়েদের দিয়ে ব্যাবসয়ীদের প্রথম সম্পর্ক তৈরী করে তাদের ব্ল্যাক মেইল করে মোটা আংকের টাকা হাতিয়ে নিত। একের পর এক নানা অপরাধ করে কোটিপতি বনে যান তিনি। আওয়ামী লীগের সব শেষ উপজেলা নির্বাচনে বন্দর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে অংশগ্রহণ করে ফেল করেন। গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ঘা ঢাকা দিয়ে রয়েছে মুকিত রহমান। দীর্ঘদিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটিভ হলেও তাকে মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্থানের ভিডিও দিতে দেখা যেতো। এবার এই মিছিলের মাধ্যমে মুকিত রহমানের নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে বন্দর থানায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময় আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা রয়েছে। আজমেরী ওসমান তাকে দিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত করার জন্য নানা ভাবে পায়তারা চালাচ্ছে। তাই তাকে যেন গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়।