
ফের বেপরোয়া বান্টি বাহিনী
বিগত দিনে আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমানের নাম বিক্রি করে নগরীর বিভিন্নস্থানে ব্যাপক হুন্ডা বাহিনী নিয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, চুরি-ডাকাতি, মাদককারবারি করলেও পট পরিবর্তনের পর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের ভাগিনা পরিচয়ে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদকের গডফাদার ও শহরের সন্ত্রাসী খ্যাত সোয়াদ হোসেন বান্টি। এক কালের ব্ল্যাকমেইলার ও অস্ত্র ব্যবসায়ী বান্টি বাহিনী ওসমান পরিবারের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে অপরাধ কর্ম চালিয়ে গেলেও বিগত দিনে ওসমানদের শেল্টারে সে ছিলো ধরা ছোয়ার বাইরে বর্তমানে ও বিএনপির জাকির খান ও যুবদলের কয়েকজন পদধারী নেতাকর্মীদের বন্ধু সুবাদে নগরবাসীকে ব্যাপক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।
পটপরিবর্তনের পর বান্টি ও তার বাহিনী গত ৭ মাসে নগরীতে ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছেন। অনেকের জমি দখল থেকে শুরু করে রেল লাইন মার্কেটে অবৈধ স্থাপনা নির্মান, কয়েকটি অবৈধ সেক্টর নিয়ন্ত্রণ, ফের মীর জুমলা রোড দখল করে অবৈধ দোকানসহ শহরের বিভিন্ন ফুটপাত ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ডাকাত সিন্ডিকেট পালনসহ ব্যাপক অপকর্ম করে আসছেন। এদিকে বিগত ১৭ বছর আজমেরী ওসমানের নামে শহরের ২ নাম্বার গেইট এলাকা নিয়ন্ত্রসহ রাতের আধারে হান্ডা বাহিনী নিয়ে বেড় হয়ে নানা অপকর্ম পরিচালনা করতেন। এখন আবারো রাত ১২ পর তার বাসার নিচে সেই আগের হুন্ডা বাহিনীগুলোকে জড়ো হতে দেখা যায়। এর পর জমায়েত হয়ে রাতের আধারে নগরীতে বহু অপকর্ম করে থাকেন এই সন্ত্রাসী বান্টি। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলে ও তিরি রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাহিরে। এদিকে কিছুদিন পূর্বে পরিচালত বিশেষ যৌথ অভিযান অপারেশন ডেভিল হান্টে বহু বড় বড় ‘ডেভিল’ গ্রেফতারে আসলেও বেপরোয়া থেকে ও নিরাপদে ছিলেন এই বান্টি ও তার বাহিনী। কিন্তু তাকে কোনভাবেই এই অভিযান নাগালে না পেলে সেই সাহসে তিনি রমজান মাসে ও ব্যাপক দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-অপকর্ম করেন বর্তমানে নগরীতে সেই পুরনো সন্ত্রাসী বান্টি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলনে গত বছরের ১৮ ও ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনীর অগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করেন। সে সময় শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নসহ বহু ছাত্রলীগ-যুবলীগের বহু নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত থেকে গুলি চালায়। সে দিন বান্টি প্রকাশ্যে না থাকলে ও প্রায় ১২ টি অবৈধ অস্ত্রসহ প্রায় ৩০ জন সন্ত্রাসী পাঠিয়ে ছিলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ভুলন্ঠিত করতে চাষাড়ায়। কিন্তু বিএনপির কথিতদের পরিচয়ে ও জাকির খানের এক ভাগিনা সনেটের ছায়াতলে থেকে মামলায় বাচঁলে ও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ১/২টি ছাত্র হত্যা মামলার আসামী তালিকায় রয়েছে এই বান্টি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে এই সন্ত্রাসী বান্টির কুকর্ম নগরীর ২নং রেইল গেইট এলাকার থান কাপড়ের ব্যবসায়ীরা বান্টির কাছে জিম্মি হলেও ভয়ে মুখ খোলেননি কেউ বর্তমানে ও সেই প্রথা চলমান। এছাড়া দেওভোগ, বাবুরাইল, বাশমুলি এলাকায় মাদকের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুললেও বান্টি আর বাহিনী ঘুরছে বুক ফুলিয়ে। এছাড়া ও বিগত দিনে দেওভোগ এর বাশমুলি এলাকায় এক ব্যবসায়ীর দোকান, গোডাউন রাতের আধারে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে বান্টি আর তার বাহিনী। ওই ব্যবসায়ী ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
এর আগে, ২০১৩ সালে বান্টি বাহিনীর সাথে সদর থানা পুলিশের সাথে গোলাগুলির ঘটনায় একজন এসআই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। সেসময় তার কাছে উদ্ধার করা হয়েছিল বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। এর আগে বান্টি ছিল পর্নো ব্ল্যাকমেইলার চক্রের অন্যতম হোতা। সুন্দরী নারী দিয়ে ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলে তাদের আটকে নগ্ন ছবি তুলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো সে। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বান্টি শুরু করে অস্ত্রের ব্যবসা। ২০১৮ সালে জেলা পুলিশ ৩২ জন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও গডফাদারের ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করে পোস্টারিং করে। সেই তালিকায় নাম ছিল বান্টির। ২০২৩ সালে বহু ব্যবসায়ী বান্টির চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে পুলিশ ও র্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বান্টি থাকে ধরাছোয়ার বাইরে। বিগত দিনের তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সন্ত্রাসী বান্টির মূল ব্যবসা অস্ত্র ও মাদক। মূলত সে শহরের বিভিন্ন প্রভাবশালী সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদাবাজির কয়েকটি সেক্টর নিয়ন্ত্রন করতেন তা বর্তমানে বহাল। তা ছাড়া সোয়াদ হোসেন বান্টি তার ২ নং রেল গেইটস্থ নিজ বাড়িতে তৈরি করেছিলেন টর্চার সেল। বান্টি বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ ব্যবসায়ীদেরকে নানা অযুহাতে বান্টির তৈরি করা টর্চার সেলে আটক করে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। তার নামে ডজনের বেশি মামলা রয়েছে।
এদিকে এই বান্টির লোকজন বিগত দিনে দিগু বাজারে মীর জুমলা রোডে অবৈধভাবে কয়েকটি দোকান বসিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছেন। যা বর্তমানে বান্টির এক বন্ধুর নিয়ন্ত্রণে। ১ নং রেল গেইট এলাকার ফকিরটোলা মসজিদের পাশের পাবলিক টয়লেট ছিলো এই বান্টির নিয়ন্ত্রণে। এদিকে বিগত দিনের মতোই বর্তমানে রাত ১২ টার পরে বিশাল হুন্ডা বাহিনী নিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজিসহ বহু অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে এই বান্টি। এদিকে কিছুদিন পূর্বে কাশীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস দখল করে সেখানে গড়েছেন জাকির খান কার্যালয়। কিন্তু বর্তমানে জাকির খানের ভাগিনা বলে সেই বিগত দিনের আজমেরী ও অয়ন ওসমানের ভয়ের মতোই এখনো বান্টিতে নিরব নগরবাসী। বর্তমানে বান্টির বেপরোয়া রূপে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী দ্রুত এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ও জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।