
প্রিন্ট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৮ এএম
হাজারো প্রাণের উচ্ছ্বাসে শেষ হলো বর্ষবরণ র্যালি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার র্যালি। ছবি : মেহেদী হাসান।
আরো পড়ুন
বাঙালির সর্ববৃহৎ উৎসব পহেলা বৈশাখ এবার এসেছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। চব্বিশের গণজাগরণ, পরিবর্তনের আকাঙ্খা আর স্বৈরতন্ত্রবিরোধী চেতনাকে ধারণ করে ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে বরণ করেছে নারায়ণগঞ্জবাসী। এবারের বৈশাখের মূল প্রতিপাদ্য ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। এ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়ে ছলছে বাংলা বর্ষবরণ। নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট হয়ে উঠেছে বাঙালিয়ানার রঙে রাঙানো এক সৃজনশীল আখড়া। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে চারুকলার শিক্ষার্থীরা বর্ষবরণের শোভাযাত্রাটি চারুকলার সামনে থেকে সকাল নয়টায় বের করে। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে আবার চারুকলায় এসে শেষ হয়। প্রতিবছরের মতো এবারো লোকজ ঐতিহ্য ও আবহমান বাংলার চিত্র শোভাযাত্রায় তুলে ধরে তৈরি করা হয়েছে ষাড়, ঘোড়া, টমটমের মোটিফ। এছাড়া, হাতি, ঘোড়ার মুখোশ ও মাটির সরায় গ্রামীণ চিত্রসহ নানান অনুষঙ্গ তৈরি করে চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভবনজুড়ে রঙ-তুলির ঝলক আর কাঠ-বাঁশের ঠকঠক শব্দ। বৈশাখকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ও সৃজনশীলতায় ভরপুর পুরো ক্যাম্পাস।
এবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র পরিবর্তে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নাম ব্যবহার হচ্ছে। “সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘মঙ্গল’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই এবার ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে উদযাপন হবে বৈশাখ।”
এদিকে, জেলা প্রশাসনও বর্ষবরণে নানা আয়োজনের করেছে। আজ সকাল নয়টায় চাষাঢ়া থেকে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিঞা, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজমুদারসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। শোভাযাত্রার শুরুতে জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের সংস্কৃতি হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য। আমরা যে সামাজিক সম্প্রীতির মধ্যে থাকি সেখানে এই ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আজকে আমরা একত্রিত হয়েছি। আজকে সকল ধর্মের মানুষ এক কাতারে। এভাবেই সবাইকে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের দেশকে গড়ে তুলবো, আমাদের সংস্কৃতিকে বিকশিত করবো।
পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, নববর্ষের উৎসব সবাই নিরাপদে পালন করবে। কোথাও কোন বিঘ্ন ঘটবেনা। র্যাবসহ সকল আইনশৃঙ্খলা পর্যায়ের সকলে কাজ করছে। আমরা আশাবাদী হাজার বছরের ঐতিহ্য আমরা আনন্দের সাথে উদযাপন করবো।
মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকার বৈশাখ উৎসবকে হাইজ্যাক করেছিল। এটা সর্বজনীন করতে পারেনি। জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই, এবার এই অনুষ্ঠানকে সর্বজনীন করে সকলকে একত্রিত করেছে। সকল ধর্মের মানুষ মনভরে তাদের উৎসব পালন করছে। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে গত ৫০ বছর এতো সুন্দর অনুষ্ঠান হয়নি। আমরা এরজন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা নারায়ণগঞ্জকে শান্তিময় নারায়ণগঞ্জ হিসেবেই দেখতে চাই।
মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, গত ১৬ বছর এই ঐতিহ্যের অনুষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছিল। এখন গণতন্ত্র এগিয়ে যাচ্ছে। এখন মুক্ত আকাশে মানুষ আনন্দের সাথে এই উৎসব পালন করছে।
দিনব্যাপী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লোকজ পরিবেশনা চলছে। প্রাঙ্গণে করা হয়েছে ছোট পরিসরে বৈশাখী মেলার আয়োজন। যেখানে লোকজ ঐতিহ্যের হাতি, ঘোড়া, পালকি, ঢেকিসহ বিভিন্ন প্রদর্শনী থাকছে। এছাড়া, পান্তার আয়োজনও রয়েছে।
বর্ষবরণের এ আয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে অংশ নিয়েছেন এবং বিভিন্ন লোকজ খেলার আয়োজনও রয়েছে।
বর্ষবরণ উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সাথে প্রভাতী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। পরে জোটের কর্মীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এছাড়া, বিকেল তিনটায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হবে বৈশাখী অনুষ্ঠান।
এদিকে, শহরের বিভিন্ন জায়গায় বৈশাখ উপলক্ষে দোকানপাটে চলছে বৈশাখী পণ্য ও পোশাকের বিক্রি, রেস্তোরাঁগুলোতেও ছিল পান্তা-ইলিশের বিশেষ আয়োজন। তবে এ বছর রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অনেকেই নববর্ষকে দেখছেন নতুন আশার প্রতীক হিসেবে। শুধু আনন্দ নয়, এবারের বৈশাখ বরণ যেন হয়ে উঠছে একটি প্রতিরোধের ভাষা, একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ। বাঙালির প্রাণের উৎসব এবার বলছে—ঐক্য গড়ে তুলো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াও।