Logo
Logo
×

নগর জুড়ে

মুক্তি পেয়ে জাকির খানের শোডাউন

Icon

লিমন দেওয়ান

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

মুক্তি পেয়ে জাকির খানের শোডাউন

দীর্ঘ আড়াই বছর পরে কারামুক্ত হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি আলোচিত নেতা জাকির খান। কারামুক্তি হয়ে নিজ বাড়ি ফেরার পথে নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশাল শোডাউন করেন জাকির খান। এসময় হাজার হাজার নেতাকর্মী তাকে নিয়ে শহরে আনন্দ মিছিল করেন। ছবি : মেহেদী হাসান।

Swapno

নারায়ণগঞ্জের জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলোচিত জাকির খানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৩৩ মামলায় ধাপে ধাপে জামিন পেয়ে দীর্ঘ আড়াইবছর পর গতকাল রোববার (১৩ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন । কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর তিনি নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন। এরপর বিশাল সংবর্ধনা দিয়ে নেতাকর্মীরা তাকে বরণ করে নেন। এদিকে জাকির খানকে বরণ করে নিতে তাঁর অনুসারীরা দুই শতাধিক মোটরসাইকেল ও শতাধিক প্রাইভেট কারের বিশাল গাড়িবহর নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে শুরু করে চাষাড়া চত্ত্বর, উকিলপাড়া, ২ নং রেল গেইট, ডিআইটি ঘুরে মূল মূল সড়ক প্রদক্ষিণ করে দেওভোগ নিজ বাড়িতে যাওয়া পর্যন্ত রাস্তার পথচারী, দোকানী, এলাকাবাসীর সংবর্ধনা ও ভালোবাসায় সিক্ত হতে হতে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন এই জনপ্রিয় নেতা জাকির খান। এই বিশাল শোডাউনে বিভিন্ন জায়গায় কয়েকঘন্টা যানজট তৈরি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ে চলাচলকারী মানুষ।


এদিকে গতকাল সকাল থেকেই আলোচিত নেতাকে বরণ করে নিতে হাজার হাজার কর্মী সমর্থক ভোর থেকে মোটরসাইকলে ও প্রাইভেট কারের বহর নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। নেতা-কর্মীরা ট্রাকে সাউন্ড বক্স লাগিয়ে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে মোটরসাইকেলের বহর বের করেন। জেলা কারাগারের সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় হয়। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারাগার থেকে বের হন জাকির খান। এ সময় তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে তিনি হুডখোলা গাড়িতে চড়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে দেওভোগের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় নারায়ণগঞ্জবাসী জাকির খানকে এক পলক প্রকাশ্যে দেখার জন্য বিভিন্ন মার্কেটের ছাদে, বারান্দায়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় একই সাথে অনেকে জাকির খানের সাথে হাত মিলিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন আবার অনেকে আনন্দের আবেগে পরে তাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খান। এদিকে লোকেলোকারন্ন অবস্থায় ধীরে ধীরে গাড়ি বহর নিয়ে এগিয়ে আস্তে আস্তে ২নং রেল গেইট এলাকায় আসলে তাকে ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেন এলাকবাসী ও দোকানীরা। পরবর্তীতে ডিআইটি আসলে তাকে সেখানে ও ফুলেল শুভেচ্ছা দেন ব্যবসায়ীরা। পরে জিমখানা হয়ে জাকির খান মন্ডলপাড়া হয়ে সিটি কর্পোরেশন ভবনের সামনে এসে সেখানে ২ মিনিট গাড়ি দামিয়ে সেখানকার পথচারী ও সাধারণ জনগণের সাথে হাত মিলিয়ে মিলিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে জল্লারপাড়া হয়ে ১ নং বাবুরাইল অতিক্রম করে তিনি দেওভোগ এলাকায় আসলে সেখানে ব্যান্ড পার্টি ও স্টেজ করে তার সমর্থক ও পরিবারের লোকজন তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে বরণ করে নেন। পরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে তার বাবা ও দাদার কবর জিয়ারত শেষে নিজ বাসায় যান।



কারামুক্ত জাকির খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারেক জিয়ার ৩১ দফা দাবি আজকের এই দিনে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওয়াদা করছি যে, আমরা বাস্তবায়ন করবই করব। আমার শরীরের চামড়া দিয়ে যদি জুতা বানাই দেই, তাহলেও নারায়ণগঞ্জবাসীর ঋণ কখনো শোধ করতে পারব না। আমরা রাজনৈতিকভাবে যেভাবে হেয় পতিপন্ন হয়েছি শেখ হাসিনার গভর্নমেন্টের মাধ্যমে, আমাদের নেক্সট জেনারেশন এ ধরনের সম্মুখীন যেন না হয়। এ জন্য আমরা সর্বোচ্চ ও সব ধরনের ভূমিকা রাখব।’

শোডাউন শেষে বাড়ির সামনে দাদা সাকিম আলী ও বাবা দৌলত হোসেন খানের কবর জিয়ারত শেষে জাকির খান মা আছিয়া খানমের বুকে  গেলে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ সময় জাকির খানের মা ও তার পরিবারের সদস্যরা আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেগে পরেন। পরে জাকির খানের ও চোখে কোনে পানি চলে আসে। পরে তিনি পরিবারের সকলকে কান্নাকে আনন্দে ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘক্ষন খুনসুটি ও আলাপ আলোচনা করতে দেখা যায়। ওই সময় পাশে জাকির খানের স্ত্রী, তিন ভাই, ছেলে-ভাতিজাসহ পরিবারের আরো অন্য অন্য সদস্যরা।



ছেলেকে বুকে পেয়ে জাকির খানের মা আছিয়া খানম বলেন, মৃত্যুর আগে ছেলেকে পেয়েছি মহান আল্লাহ দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আজ থেকে আমার সকল ছেলেরা সামনে থাকবে-এর চেয়ে আনন্দ আর কিছু হতে পারে না। জাকির কোন সময়ে অপরাধ করতে পারে না। ওর উপর হিংসা করে আমার বুক থেকে দূরে রাখা হয়েছিলো তাকে।



এ দিকে দীর্ঘ বছর পর বাবাকে পাশে পেয়ে ও বাবার জনপ্রিয়তা দেখে ছেলে কারগিল খান বলেন, আজ পৃথিবীর সবচেয়ে দামি জিনিস পেয়েছি। বাবা কখনো প্রকাশ্যে বুকে ধরতে পারি নাই। আজ বাবা (জাকির খান) কে নিয়ে হাজারো হাজারো ভালোবাসা মানুষ নিয়ে পেয়েছি। সকল বাবাদের কাছে আমার বাবা’র জন্য দোয়া চাই।

জানা গেছে, দীর্ঘ ২১ বছর সিনেমার কাহিনীর মতোই জাকির খানকে নিয়ে নানা মুখরোচক চর্চা হতে দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জে সর্বমহলে। যিনি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ থাকাকালিন সময় থেকেই নারায়ণগঞ্জের গনমানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। দীর্ঘদিন জাকির খান যাতে দেশে ঢুকতে না পারে একের পর এক মামলা মোকাদ্দমা দিয়ে তাকে দমিয়ে রাখার মাস্টার মাইন্ডে ছিলেন কুখ্যাত ওসমান পরিবারের নীলনকশা। কিন্তু সর্বশেষ সকল বাধা পেড়িয়ে তিনি মুক্ত বাতাসে নগরীতে ফিরে এসেছেন। দীর্ঘ দুই যুগ পর মুক্ত অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ শহরে পা রাখলেন তিনি। নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের আতঙ্ক ছিল জাকির খান। একথা অকপটে শামীম ওসমান নিজেই বলে গেছেন। যার ফলে শামীম ওসমানের পুরো ক্ষমতা থাকাকালে জাকির খানকে বেছে নিতে হয়েছে ফেরারি জীবন।



এর আগে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-১১ এর একটি অভিযানে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার হন জাকির খান। ২০০৪ সাল থেকেই বিদেশে আত্মগোপনে ছিলেন জাকির খান। চাঁদাবাজি ও হত্যাসহ মোট ৩৩টি মামলার আসামি ছিলেন জাকির খান। গ্রেফতার হওয়ার পর ধাপে ধাপে বিভিন্ন মামলায় জামিন পান তিনি সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ব্যবসায়ী সাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে তিনি এবং মামলার অন্য আসামিরা খালাস পান। এর আগে ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর মাসদাইর এলাকায় নিজের বাড়ির অদূরে সাব্বির আলম খন্দকারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। নীট পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সাবেক সহসভাপতি সাব্বির আল খন্দকার বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা (বহিষ্কৃত) ও বর্তমানে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের ছোটভাই। সাব্বির আলম খন্দকার হত্যার পর আসামি হিসেবে নাম আসে জাকির খানের এর পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে গিয়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। পলাতক থাকা অবস্থাতেই তার বিরুদ্ধে আরো বিভিন্ন মামলায় আদালত সাজা প্রদান করে। এরপর থেকে তিনি আর দেশে ফেরেননি।



নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ ফোরকান ওয়াহিদ বলেন, ১৯৯৪ সালের সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় জাকির খানের ১৪ বছরের সাজা হয়েছিল। আপিল করায় উচ্চ আদালতে সাজা কমিয়ে ৮ বছর করা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ আবেদনে তার সাজা কমে পাঁচ বছর করা হয়। মামলায় পাঁচ বছরের সাজার মেয়াদ শেষ হলে জাকির খানকে মুক্তি দেওয়া হয়।



এদিকে জাকির খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম বলেন, “জাকির খানের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা ছিল। এরমধ্যে ৩২টিতে তিনি খালাস পেয়েছেন। বাকি ১টি মামলায় তিনি জামিনে আছেন। এ ছাড়া অনেক আগে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী একটি মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় আজ তিনি সাজা শেষ করে মুক্তি পেয়েছেন।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন