মুক্তির পর থেকে জাকির খানের কার্যালয়ে সমর্থকদের ভীড়

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

মুক্তির পর থেকে জাকির খানের কার্যালয়ে সমর্থকদের ভীড়
দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর নারায়ণগঞ্জের জনগণকে জিম্মি করে শাসন করে পালিয়েছে ওসমান সাম্রাজ্যের গডফাদার থেকে শুরু মাফিয়া তকমা পাওয়া সন্ত্রাসীরা। বিশেষ করে বিগত ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ শাসনামলে শামীম ওসমানের টর্চারসেল হিসেবে পরিচিত চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাব,কলেজ রোডে অবস্থিত আজমেরী ওসমানের বাড়ি প্রতিনিয়ত তাদের হোন্ডা গুন্ডা বাহির্নী মাধ্যমে ভীড় জমে থাকতো। কিন্তু ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টে শেখ হাসিনার পতনের সাথে তাদের সকল অপকর্মের পতন ঘটে। তাদের বাড়ি কিংবা কার্যালয় এখন আর কোন মানুষের দেখা নেই। এমনকি ওসমানদের সকল বাহিনী পলাতক রয়েছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি জাকির খান মুক্তি পেয়ে বের হওয়ার পর স্মরণকালের রাজকীয় ভাবে বরণ করেছে তার কর্মী সমর্থকরা। ১৩ এপ্রিল সকাল থেকে তার কর্মী সমর্থকরা তাকে বরণ করার জন্য অপেক্ষা করেন। পরে তিনি কারাগার বের হয়ে কর্মী সমর্থকদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে বিশাল শোডাউন করে তার দেওভোগের বাড়ি গিয়ে মায়ের হাতে দীর্ঘ ২২ বছর পর ভাত খান। যা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে বলে মনে করেন তার অনুসারীরা।
অন্যদিকে জাকির খান মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তার কার্যালয়ে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি শত শত কর্মী সমর্থকরা আসছে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগে আখড়া এলাকাতে। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ঢল এখন ওই বাড়ি ঘিরে। সেখানেই বসবাস করছেন জাকির খান। গত ১৩ এপ্রিল তিনি জামিনে মুক্ত হন। এর পর থেকেই মানুষের ঢল অব্যাহত আছে। কেউ আসছেন মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে, কেউ বা ফুলের তোড়া নিয়ে। সিড়ি বেয়ে একে একে ঢুকছেন জাকির খানের ফ্ল্যাটে। তিনিও চেষ্টা করছেন সকলের সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে। আবদার একটাই ছবি তোলা। জাকির খানও কাউকে নিরাশ করছেন না। তোলা হচ্ছে একের পর এক ছবি।
অনুসারী ও পরিবারের লোকজন বলছেন, মানুষের স্রোত বয়ে যাচ্ছে খান সাহেবের বাড়িতে। তার বাড়ি এখন কর্মী সমর্থকদের ভীড় লেগে থাকে। বিএনপির বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা ভীড় করছেন তার বাড়িতে। আসছেন ব্যবসায়ীসহ পেশা জীবি সংগঠনের অনেকেই। কেউ কেউ মনে করছেন নিজেদের শক্তি বাড়ানোর টার্গেট করেই জাকির খানের কাছে ভিড়ছেন। তবে বিগত ২২ বছর আগের জাকির খান কি এখন ফিরে আসতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া সময়ের পরিবর্তনে তিনি সামনে এমপি কিংবা মেয়র হওয়ার ভিশন নিয়ে আগাবে কি না এনিয়েও তার সমর্থকদের মাঝে রয়েছে প্রশ্ন।
পরিবারের এক সদস্য জানান, তাদের প্রতিদিন হিমশিম খেতে হচ্ছে মানুষের কারণে। কিন্তু তার পরেও এটা তাদের কাছে একপ্রকার আশীর্বাদ। মানুষ যে জাকির খানকে কি পরিমাণ ভালোবাসে এটার বহিঃপ্রকাশ। সে কারণেই তারা এটা মেনে নিচ্ছেন।
জানা যায়, ১৯৯৪ সালের সন্ত্রাস দমন আইনের একটি মামলার রায়ে জাকির খানের ১৪ বছরের সাজা হয়েছিল। আপিল করার পর উচ্চ আদালতে সাজা কমিয়ে আট বছর করা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ আবেদনে তাঁর সাজা কমে পাঁচ বছর করা হয়। পাঁচ বছরের সাজার মেয়াদ শেষে গত রোববার সকালে জাকির খানকে কারামুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জাকির খানের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যাসহ ৪টি হত্যাসহ মোট ৩৩টি মামলা ছিল। তার মাঝে ২৬ টি মামলায় তিনি নির্দোষ প্রমাণি হয়ে খালাস পান। এছাড়ায় কয়েকটি মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। তাই সবকিছু মিলিয়ে তিনি এখন মুক্ত বাতাসে কর্মী সমর্থকদের সাথে দেখা করে কথা বলছেন। এতে করে তার সমর্থক অনুসারীরাও উজ্জিবিত হয়ে রয়েছে। তবে জাকির খান আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগেই শামীম ওসমান পজিটিভভাবে মন্তব্য করেছেন। এমনটি তিনি বিএনপির মাঝে ভালো নেতা হিসেবে পরিচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সেই জাকির খানের বাড়িতে ২২ বছর পর তার অনুসারীদের দিয়ে প্রতিনিয়ত ভীড় জমে থাকতে দেখা যাচ্ছে।