জমি দখল: ছাত্র-জনতার মানববন্ধনে হামলার অভিযোগ
‘বোমা মেরে ছাত্রদের উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি’ নীট কনসার্নের

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

সিদ্ধিরগঞ্জে নীট কনসার্ন গ্রুপের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগে স্থানীয় ছাত্র-জনতার মানববন্ধনে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) পৌনে দুইটার দিকে পাঠানটুলি এলাকায় হাজীগঞ্জ-আদমজী সড়কে এই ঘটনা ঘটে।
সিদ্ধিরগঞ্জে নীট কনসার্ন গ্রুপের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগে স্থানীয় ছাত্র-জনতার মানববন্ধনে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) পৌনে দুইটার দিকে পাঠানটুলি এলাকায় হাজীগঞ্জ-আদমজী সড়কে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিট কনসার্ন নামে পোশাক কারখানাটির সামনে মালিকপক্ষ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থানে গেলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে একাধিকবার উত্তেজনা দেখা দিলেও বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি ও সেনাবাহিনীর লাগাতার টহলে সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটেনি বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ছাত্র-জনতার মানববন্ধনে নিট কনসার্নের মালিকপক্ষের হামলার অভিযোগে কারখানাটির সামনে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। হামলায় নীট কনসার্ন গ্রুপের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা নেতৃত্ব দেন বলেও অভিযোগ তাদের। কারখানার সামনে জড়ো হয়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন কারখানাটির শ্রমিক ও মালিকপক্ষের লোকজন। এ সময় নীট কনসার্নের লোকজন ছাত্রনেতাদের ‘বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া’সহ বিভিন্ন হুমকি দিতেও শোনা যায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মাহফুজ খান, জেলা কমিটির সদস্য সচিব জাবেদ আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক মেহরাব হোসেন প্রভাত, যুগ্ম সদস্য সচিব ইমন আহমেদ, সংগঠক ফাহিম খন্দকার অনিক, মহানগরের মুখ্য সংগঠক নূরে আরাফাত আদর প্রমুখ।
নীট কনসার্নের বিরুদ্ধে ‘ভূমিদস্যুতার’ অভিযোগে মানববন্ধনটির আয়োজক ফাহিম খন্দকার অনিক। তিনি বলেন, “নীট কনসার্নের মালিক জাহাঙ্গীর ও জয়নাল মোল্লা সরকারি জমি ও ব্যক্তিগত অনেক মানুষের জমি দখল করে রেখেছে। ফ্যাসিবাদের দোসর তারা। এখনও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে মানুষ ভয় পায়। তাদের ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়ালে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় জাহাঙ্গীর মোল্লা ও তার লোকজন।”
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায়, নীট কনসার্নের পাঠানটুলির পোশাক কারখানার ভেতরের ও সামনের বেশকিছু জমি নিয়ে পুরোনো বিরোধ রয়েছে। রেলওয়ের সরকারি জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তবে কয়েকমাস ধরে নীট কনসার্নের সামনে রেলের একটি খালি জমিতে গড়ে ওঠা দোকানপাট থেকে ভাড়া নিতেন সাব্বির হোসেন ভূঁইয়া নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। বিপরীতপাশেই তার বাড়ি।
কিন্তু ঈদের কয়েকদিন আগে ওই জমি রেলের কাছ থেকে নীট কনসার্নের নামে লিজ রয়েছে দাবি করে দোকানপাট উচ্ছেদ করেন জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা এবং চারদিকে টিনের বেষ্টনী দিয়ে দেন। আজ শনিবার দুপুরে মানববন্ধন থেকে টিনের বেষ্টনী ভেঙে ফেলা হয়। পরে কারখানা থেকে জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা তার লোককজন নিয়ে মানববন্ধনকারীদের ধাওয়া দেন এবং এরপর থেকেই উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে বলে জানান একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী।
নীট কনসার্নের কর্মকর্তাদের দাবি, ছাত্রনেতা ফাহিম খন্দকার অনিক অপর এক ব্যক্তির পক্ষ নিয়ে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন এবং তাদের লিজ নেওয়া সম্পত্তিতে ভাঙচুর চালিয়েছেন।
যদিও, ফাহিম খন্দকার অনিকের ভাষ্য, হাজীগঞ্জ-আদমজী সড়কের পাশে নীট কনসার্নের গোডাউনের অংশে ৪ শতাংশ জমির মালিক তার দুসম্পর্কের আত্মীয় মীর রাফি। তিনি ফাহিমকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছেন। কিন্তু নীট কনসার্নের মালিকপক্ষ এ জমি বুঝিয়ে দিচ্ছেন না।
“আমরা জানতাম, দাগ অনুযায়ী সড়কের পাশের খালি জমিটা (যার বেষ্টনী ভাঙা হয়েছে) আমাদের। গতমাসে এ জমির বিষয়টা নিয়ে তাদের সাথে বসেছিলাম। তখন মাপঝোখ করে জানা গেলো নীট কনসার্নের গোডাউনের অংশে আমাদের জমি এবং খালি জায়গাটি রেলের কিন্তু নীট কনসার্ন দখল করে আছে। এমন অনেক জমি নীট কনসার্ন দখল করে রেখেছে। আমরা প্রতিবাদ করায় হামলা করেছে। তারা আজমেরী ওসমানের গুন্ডা বাহিনী পালে”, বলেন অনিক।
এদিকে, বিকেলে কারখানা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে নীট কনসার্নের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা বলেন, “আমরা বৈধ প্রক্রিয়ায় রেলের জমি লিজ নিয়েছি। আমাদের ফ্যাক্টরির মধ্যে কারও জমি থাকলে, সে তার বৈধ কাগজপত্র নিয়ে বসুক, সমাধান হয়ে যাবে।” যদিও, মানববন্ধনে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে, ঘটনাস্থলে থাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনূর আলম বলেন, “সরকারি একটি জমি নিয়ে দুইপক্ষের বিরোধ আছে। এ নিয়ে ছাত্ররা ও কারখানার লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে সতর্ক অবস্থানে আছি।”
হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আসার আগে হামলার একটি ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমরা নিজেরা এসে এমন কিছু পাইনি। আমরা উপস্থিত থাকাবস্থায় কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”