চাষাঢ়ায় না.গঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সরিয়ে নেওয়ার যৌক্তিকতা

লতিফ রানা
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

চাষাঢ়ায় না.গঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সরিয়ে নেওয়ার যৌক্তিকতা
# যেসব শিল্প কারখানাকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো এখন নেই
# প্রতি রেল গেটে দিনে ১৬বার সিগন্যালে পড়তে হয়
বাণিজ্য নগরী নারায়ণগঞ্জের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজ ও নিরাপদ মাধ্যম হলো রেলওয়ে। আর নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় রেলওয়ে রেলস্টেশনটি শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ নয়, বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম এবং বিখ্যাত রেলস্টেশন। সেই খ্যাতি ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান শাসনামল পার করে এখনও বিদ্যমান আছে। তবে সেই বিশ্ব পরিচিত এই রেলস্টেশনটিই এখন নারায়ণগঞ্জবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতার পর অর্ধশত বছরের দীর্ঘ সময় পার হলেও এখানকার নীতিনির্ধারক ও জনপ্রতিনিধিদের সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এই রেল স্টেশনটি এখন এতটাই দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে যে, নারায়ণগঞ্জবাসীই এখন তা মূল শহরের বাইরে অবস্থিত চাষাঢ়া রেলস্টেশন এলাকায় সরিয়ে নিতে চেষ্টা তদবীর করে যাচ্ছেন। তাদের দাবি, একসময় যেসব শিল্প কারখানাকে কেন্দ্র করে এই রেলস্টেশনটি গঠন করা হয়েছে সেসব কারখানা এখন বিলুপ্তি প্রায়। তাই স্টেশনটি এখানেই থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। অন্যদিকে রেলওয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে রেল ক্রসিংয়ের কারণে শহরের প্রধান সড়কে একাধিকবার (প্রতি রেল গেটে বর্তমানে দিনে ১৬ বার, পূর্বে যা ৩২ বার ছিল) দীর্ঘ সময়ের জন্য সৃষ্ঠ যানজট থেকে মুক্তি পেতে চাষাঢ়া সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। নারায়ণগঞ্জবাসীর এই দাবিটিকে খুবই গুরুত্ব ও আন্তরিকভাবে নিয়ে এই বিষয়ের কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ এর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যেই পাটশিল্পকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ বিশ্বের দরবারে প্রাচ্যের ডান্ডি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে, সেই পাট শিল্পকে কেন্দ্র করেই নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের সৃষ্টি। ১৮ শতকের শেষভাগে এসে ঢাকা স্টেট রেলওয়ের অধীনে নারায়ণঞ্জ রেলওয়ে নির্মাণ করা হয়। সে সময়ই আদমজী পাট কল, বিজেএমসি (বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন) এবং কুমুদিনী পাট মিলকে কেন্দ্র করে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে জংশন নির্মাণ করা হয়। সে সময় বিশ্বজুড়ে পাটের চাহিদা পূরণে ঢাকা এবং ময়মনসিংহ থেকে কলকাতা বন্দরে পাট সরবরাহ করার জন্য ঢাকা স্টেট রেলওয়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ১৪৪ কিমি (৮৯ মাইল) দীর্ঘ মিটারগেজ রেললাইন স্থাপন করে। দীর্ঘ এই লাইনের বিভিন্ন যানজট সৃষ্টি হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১৭ সালে এই রুটটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সরকার।
সচেতন মহল মনে করেন, নগরীর কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনটি চাষাঢ়ার দিকে নিয়ে যেতে পারলে শহরের দীর্ঘদিনের যানজটের ভোগান্তির অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন থেকে চাষাঢ়া স্টেশন পর্যন্ত এতটুকু জায়গায়ই ৬টি রেলগেটের অবস্থান। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ৩টি গেটের সিগন্যালে সরাসরি ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করে। এগুলো হলো ১নং রেলগেট, ২নং রেলগেট ও চাষাঢ়া রেলগেট। একই সড়কে জ্যাম সৃষ্টিতে বাকি ৩টি গেটও পরোক্ষভাবে দায়ী। সেগুলো হলো নন্দীপাড়া রেলগেট, গলাচিপা রেলগেট ও বালুরমাঠ রেলগেট। বর্তমানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে ৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। ফলে এসব এলাকায় যাওয়া আসা মিলে ষোলবার রেল ক্রসিংয়ের ব্যারিকেড বার পড়ে। প্রতি সময়ে গড়ে ১০ মিনিট করে যানজট থাকলেও ১৬০ মিনিট অর্থাৎ আড়াই ঘন্টারও বেশি সময় প্রতিদিন যানজটে থমকে যায় নারায়ণগঞ্জ শহর। বিষয়টি নিয়ে প্রায় একযুগ ধরে মানবন্ধন, স্মারকলিপি পেশ করা, মিটিং ও সভাসহ বিভিন্ন উপায়ে দাবি জানিয়ে আসছেন নারায়ণগঞ্জবাসী।
নারায়ণগঞ্জবাসীর মতে, নগরীর যানজট কমাতে হলে নগরীর মধ্য থেকে রেলস্টেশনটি এখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। যার ফলে নারায়ণগঞ্জের অর্ধেক যানজট কমে যাবে। প্রয়োজনে বাস টার্মিনালও সরিয়ে নেওয়া উচিৎ। নারায়ণগঞ্জে মতো এমন একটি ব্যস্ত শহর, যেখানে একটি মাত্র প্রধান সড়ক, সেখানে শহরের মাঝখান দিয়ে যেখান থেকে বের হতে হলে মূল শহরের রাস্তাকে ব্যবহার করতে হয় সেরকম জায়গায় রাখা উচিৎ নয়। যেখানে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার যানবাহনকে মূল শহর থেকে বাহিরে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সেখানে নারায়ণগঞ্জের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের একমাত্র রাস্তাটিকে যানজটমুক্ত করতে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনটিও এখান থেকে সরিয়ে নিতে দ্রুত ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। তাদের মতে দলীয় সরকারে অধীনে তাদের বিভিন্ন নেতা কর্মীদের স্বার্থ জড়িত থাকে তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারা কোন ভূমিকা নিতে চায় না। কিন্তু বর্তমান সরকারের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই, নেতা কর্মীও নেই, তাই এখনই সময় চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সরিয়ে নেওয়ার।