Logo
Logo
×

নগর জুড়ে

শহরের পেটে বাস টার্মিনাল গলার কাঁটা

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

শহরের পেটে বাস টার্মিনাল গলার কাঁটা

শহরের পেটে বাস টার্মিনাল গলার কাঁটা

Swapno


# চাষাঢ়ায় সরিয়ে নেওয়ার দাবি
# শর্তসাপেক্ষে করা যেতে পারে : এবি সিদ্দিক
# সাধারণ মূল শহরের বাইরে কিন্তু শহর সংলগ্ন এলাকা রাখা হয় : নুরুদ্দিন আহম্মেদ
# এই প্রশাসন নারায়ণগঞ্জের প্রতি আন্তরিক, ওনার পক্ষেই সম্ভব : স্থানীয় বাসিন্দা

 
কথায় আছে ‘আজকে যা খেলনা, আগামীতে তা ফেলনা’। অর্থাৎ পৃথিবীতে কোন কিছুই চিরস্থায়ী হয় না। যে জিনিসটার আজকে খুবই প্রয়োজন, এক সময় তা কোন কাজেই আসবে না, ফেলে দিতে হয়। বরং তা না ফেললে অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তেমনি অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের বর্তমান অবস্থান। এক সময় নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এবং নারায়ণগঞ্জবাসীর যোগাযোগের অন্যতম প্রয়োজনীয় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটির বর্তমান অবস্থান নারায়ণগঞ্জ শহরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বের পথ শহরের প্রবেশ ও বহির্গমন মুখ চাষাঢ়ায় যেতেই সময় ব্যয় হয় প্রায় আধ ঘন্টা (সময় বিশেষে আরও বেশি)। তাই শুধু ট্রেন স্টেশন নয়, নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনালকে স্থানান্তরিত করার জন্য ব্যাপকভাবে দাবি উঠেছে। বিশেষ করে বর্তমান জেলা প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত দাবি করে এই বিষয়টি আরও জোরালোভাবে উত্থাপন করেছেন শহরবাসী।
 
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এমন একটা সময় ছিল যখন নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর শুধু নারায়ণগঞ্জ না, বরং সারা বাংলাদেশের কেন্দ্র বিন্দু ছিল। এমনকি ইংরেজ শাসনামলেও যখন আকাশ পথের কোন ব্যবস্থা ছিল না, সড়ক পথেও ছিল না পর্যাপ্ত সুযোগ, তখন নৌপথই ছিল একমাত্র ব্যবস্থা। সে সময় নৌপথে দেশের কেন্দ্র বিন্দু ঢাকাতে প্রবেশ করতে হলেও নারায়ণগঞ্জকে ব্যবহার করে প্রবেশ করতে হতো। ব্রিটিশ শাসনামলে ঢাকার সাথে কলকাতা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ আসাম এবং বার্মার (বর্তমানের মিয়ানমার), প্রধান বন্দরগুলির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে। সেই চাহিদা পূরণ করতেই এই নদী বন্দরটির সৃষ্টি। আর এই নদী বন্দরের সাথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক পথে যোগাযোগের জন্য নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনালের উৎপত্তি। তবে সেই সময় নারায়ণগঞ্জের মূল শহর ছিল টানবাজার ও নিতাইগঞ্জ এলাকা। যাকে কেন্দ্র করে এই অবস্থানটিকে বেছে নিয়ে এই বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। সচেতন মহলের মতে বাস্তবতা এখন সেই জায়গায় নেই। শহরের পরিধি এখন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এলাকাটি এখন শহরের একটি বর্ডার লাইনে পরিণত হয়েছে এবং এখান থেকে যে বাস সার্ভিসগুলো চালু আছে তা শহরের বুকের উপর দিয়ে চলাচল করছে। আর সেখানে সৃষ্টি করছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা। এতদিন দলীয় সরকারে ছত্রছায়ায় থাকায় প্রশাসন এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তবে এখন নির্দলীয় সরকারের সময় আসা এই জেলা প্রশাসন নারায়ণগঞ্জের প্রতি অনেক আন্তরিক বলে প্রমাণ দিয়েছেন। তাই ওনার পক্ষেই এটা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
 
পাইক পাড়া এলাকার ইমতিয়াজ হোসেন যুগের চিন্তাকে বলেন, লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ঢাকা যদি ২০ হাজার লোকের যাতায়াত হয় তাহলে লঞ্চ টার্মিনাল হতে শহরের আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে অন্তত ৩ থেকে ৪ লাখ লোক। আমরা যদি এই পরিকল্পনায় শহরের যানজট কমানোর মাধ্যমে এই ৫০ হাজার লোকের যাতায়াতের সময় আরও কমিয়ে আনতে পারি, পাশাপাশি সেই ৩/৪ লাখ লোকের চলাচলও নির্বিঘ্ন করতে পারি তাহলে কেন তাদের সমস্যা হবে। বরং তাদের ঢাকায় যাওয়ার সময় আরও কমে আসবে। তিনি বলেন, শহরের নিতাইগঞ্জ, দেওভোগ, পাইকপাড়া, নন্দীপাড়া, গলাচিপার মানুষের জন্য নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনাল যেতে যে টাকা বা সময় খরচ হয় সেই একই টাকায় তারা চাষাঢ়ায় যেতে পারে। এতে করে তাদের সময়ের অপচয়ও কম হবে।
 
হাজীগঞ্জ এলাকার একরামুল হক বলেন, শহরের বৃহত্তর লোকসংখ্যাই এখন বাস টার্মিনালের উত্তরাঞ্চলে বাস করে। তাদের জন্য চাষাঢ়া এলাকাই সুইটেবল। তাছাড়া বন্দর ও সোনারগাঁয়ের কিছু লোক এই বাস টার্মিনাল ব্যবহার করলেও তাদের জন্য মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।
 
আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা নূরউদ্দিন আহম্মেদ যুগের চিন্তাকে বলেন, বাস টার্মিনাল সাধারণ মূল শহরের বাইরে কিন্তু শহর সংলগ্ন এলাকা রাখা হয়। এক সময় ঢাকার ফুলবাড়িয়া থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাস সার্ভিস চালু ছিল। এরপর আসলো সায়েদাবাদ। কিন্তু এখন কিন্তু সেখান থেকেও বাস টার্মিনাল সরিয়ে কাঁচপুরে নিয়ে আসার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। মহাখালিও এখন গলার কাঁটার মতো। গাবতলীও এখন আমিনবাজার ছাড়িয়ে স্থানান্তর করার চিন্তা করা হচ্ছে। মূলত প্রয়োজনের তাগিদে, আজকে যেটা বাস্তব, দশ-বিশ বছর পর দেখা যাবে সেটা অবাস্তব হয়ে দাঁড়াবে, নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। আমার মতে বাস টার্মিনালও চাষাঢ়া কিংবা তার আশেপাশে স্থানান্তর করতে পারলে নারায়ণগঞ্জবাসী বিশেষ করে শহরবাসী যানজট থেকে মুক্ত হবে। তিনি বলেন, বড় বাসগুলো বড় জায়গা দখল করে। সেসব গাড়ি যাত্রী দিয়ে পূর্ণ করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। যাত্রীদের অনেক দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। বাস টার্মিনাল থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত যেতেই অনেক সময়ের নষ্ট হয়ে যায়। ছোট ছোট যানবাহনে আমরা যদি যাইতে পারি তাহলে তা খুব দ্রুত যাওয়া সম্ভব। এগুলোই হলো বাস্তবতা, এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। শহরের ২নং রেলগেটের মাথায় বেশ কিছু বাস দাঁড়াইয়া থাকে। এমন সময় হয় যখন এসব বাসে সারি ২নং রেলগেট থেকে ১ নং রেলগেট পর্যন্ত চলে আসে। এসব বাস মালিকদের যে প্রবণতা, এই বাস টার্মিনাল বর্তমান জায়গায় থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। কিছুদিন রাখা গেলেও পরে তারা কাউকে না কাউকে ম্যানেজ করে ফেলে। আমরা যখন ডিসি অফিসে বিষয়টি নিয়ে বসেছিলাম তখন এসব পরিবহনের নেতারাও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানায়নি।
 
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক বলেন, বাস টার্মিনাল এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে এক শর্তে। চাষাঢ়া থেকে শীতলক্ষ্যা, বক্তাবলী ও মুক্তারপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় টেম্পু (লেগুনা) চলাচল করে, যদিও এগুলো সরকার করেনি, কিন্তু প্রশাসনিক পর্যায়ে তাদের চলতে দেওয়া হয়েছে। তাদের একটি নির্দিষ্ট ভাড়ার চার্ট করে দেওয়া হয়েছে। ৫ বছর আগে যখন সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও আমাদের নাগরিক কমিটি এক সাথে আলোচনায় বসি, তখন ব্যন্ড করা ইজিবাইকগুলো বন্ধ করতে পারায় তার বিকল্প কি করা যায় জানতে চায়, তখন আমরা বলি এগুলোকে যদি রাখতেই হয় তাহলে এর জন্য আলাদা (বাইপাস) রাস্তা করতে হবে। তাদের নির্দিষ্ট রুট, নির্দিষ্ট স্টেশন ও নির্দিষ্ট ভাড়া ছাড়া তারা গাড়ি চালাতে পারবে না। এর ব্যতিক্রম হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে তাদের কাছ থেকে বাৎসরিক ১০০ টাকা লাইসেন্স ফি দিতে হবে। তাই এখান থেকে বাস টার্মিনাল সরাতে হলে এই রুটে শর্তসাপেক্ষে এরকম কিছু সার্ভিস চালু করতে হবে। যেখানে টার্মিনাল থেকে চাষাঢ়া কিংবা মন্ডলপাড়া থেকে চাষাঢ়ার ভাড়া ৫ টাকা কিংবা তার আশেপাশে করা হবে। যার ফলে লঞ্চ টার্মিনালসহ ১নং সেন্ট্রাল খেয়াঘাটের লোকগুলো সাশ্রয়ে চলাচল করতে পারে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন