বই না দিয়েই সব বইয়ের পড়া দিয়ে স্কুলে দীর্ঘ ছুটি

মেহেরীন জারা
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

বই না দিয়েই সব বইয়ের পড়া দিয়ে স্কুলে দীর্ঘ ছুটি
নগরীতে প্রায় সকল সরকারি-বেসরকারি স্কুলগুলোর মাধ্যমিক পর্যায়ে সব ধরনের বই না পেলেও, বইয়ের পড়া দিয়ে রমজানের জন্য দিয়েছে দীর্ঘ ছুটি। যেখানে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব পাঠ্যবই দিয়ে দেওয়ার কথা সেখানে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। পবিত্র মাহে রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটি মিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি শুরু হয়ে গেছে। সরকারি- বেসরকারি সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে আগামী ৮ এপ্রিলের পর। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ৮০ শতাংশের বেশি বই ছাপানোর তথ্য জানিয়েছেন। তবে মাধ্যমিকের কিছু সংখ্যক বই এখনো মাঠ পর্যায়ে এসে পৌঁছায়নি। অনেক অভিভাবকরা বলছেন, পাঠ্যবই ছাড়া কয়েক মাস কাটানো মানে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে গেছে। এই দীর্ঘ ছুটি তাদের শিক্ষা থেকে আরও দূরে ঠেলে দিতে পারে। অন্যদিকে দেখা যায়, নগরীতে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সকল বই পৌঁছে গেছে।
সপ্তম শ্রেণিতে পড়া এক ছাত্রীর অভিভাবক সুরাইয়া খাতুন বলেন, সব বই না পাওয়ার কারণে বাসার পড়ায় সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে স্কুল থেকে হোমওয়ার্ক দেওয়া হয়েছে, বই ছাড়া শিক্ষার্থীরা হোমওয়ার্ক করবে কীভাবে। নন্দিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরাদ ভুইয়া বলেন, আমার ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ভেবেছিলাম ছুটির আগেভাগেই স্কুল থেকে সব বই পেয়ে যাবে, কিন্তু সব বই পায়নি। আমার মনে হয় এর প্রভাব অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় পড়বে।
বেশ কিছু স্কুল ঘুরে জানা যায়, এবার ২০২৫ সালে অনেক বই স্কুলে সময়মতো আসেনি। বিদ্যালয়গুলো থেকে যতগুলো সুপারিশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো মোটামোটি এসেছে। এনসিটিবির তথ্যমতে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিকের ৬৬ শতাংশ বই ছাড়পত্র পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অনেক বই শিক্ষার্থীরা হাতে পেয়েছে। কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলমান এবং বাকি ৩৪ শতাংশ বই ছাপার কাজ চলছে। সব মিলিয়ে মাধ্যমিকের এখনো প্রায় ছয় কোটি বই ছাপানো বাকি।
ষষ্ঠ শ্রেণির মোট বই ৬ কোটি ৪২ লাখ। তার মধ্যে ছাপা শেষ হয়েছে ৫ কোটি ১৬ লাখ ৩৭ হাজার। সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ৮১ লাখ বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়েছে ৪ কোটি ৬ লাখ ২২ হাজার। অষ্টম শ্রেণির বই ৫ কোটি ২০ লাখ ৬৮ হাজার বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়েছে ২ কোটি ৯৬ লাখ। নবম শ্রেণির ৬ কোটি ১২ লাখ বইয়ের মধ্যে ছাপা শেষ হয়েছে মাত্র ২ কোটি ২০ লাখ ১৮ হাজার কপি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তর (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), দাখিল স্তর, এবতেদায়ী ও কারিগরী পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে জেলার সর্বোমোট প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৩ এবং এখানে অবশিষ্ট বইয়ের মোট সংখ্যা ১৬ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৮। মাধ্যমিক স্তরে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ৬ লাখ ৮৭ হাজার ১৬০ এবং অবশিষ্ট বইয়ের প্রকৃত সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৩, ৭ম শ্রেণিতে প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ৮ লাখ ৩ হাজার ৩৩০, ৮ম শ্রেণিতে প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৩৪২ এবং অবশিষ্ট বইয়ের প্রকৃত সংখ্যা ২ লাখ ৯২ হাজার ৫৭৬, ৯ম শ্রেণিতে প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৪ হাজার ২৭৬ অবশিষ্ট বইয়ের প্রকৃত সংখ্যা ৫ লাখ ৫ হাজার ১৬২, ১০ম শ্রেণিতে প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৪৬৫।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আতিকুর রহমান যুগের চিন্তাকে জানান, ‘মাধ্যমিকের প্রায় বই পেয়ে গেছি। কিন্তু মাদরাসার কিছু বই কম আছে। আশা করি দ্রুত সেগুলো পেয়ে যাবো।’