স্বজনদের সাথে ঈদ করতে না.গঞ্জ ছাড়ছেন মানুষ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

স্বজনদের সাথে ঈদ করতে ঘরমুখো মানুষ
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জ ছাড়তে শুরু করেছেন জীবিকার তাগিদে এ জেলায় বসবাসকারী লোকজন। শহরের বিভিন্ন রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাট ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সপ্তাহের শেষদিনে নাড়ির টানে শহর ছাড়তে শুরু করেছেন লোকজন। নারায়ণগঞ্জ থেকে ছাড়া যশোর, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, সিলেট, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন জেলাগামী পরিবহনগুলোর কাউন্টারে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। অনেকেই অগ্রিম টিকিট কিনে রেখেছিলেন।
ঈদযাত্রার বাস, ট্রেন ও লঞ্চের অগ্রিম টিকিট অনলাইন ও অফলাইনে কয়েকদিন আগে থেকেই বিক্রি শুরু হয়েছিল। সিরাজগঞ্জগামী যাত্রী মো. রাছেল জানান, তিনি আগেভাগেই টিকিট কেটে রেখেছিলেন। কর্মস্থল থেকে ছুটি পেয়েই বাস কাউন্টারে এসেছেন গ্রামে ফিরে একমাত্র কন্যা ও মায়ের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। সোহাগ পরিবহনের স্টাফ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০ মার্চের টিকিট আগেই বুকিং হয়ে গেছে। সকাল থেকে অনেক যাত্রী এসে ফিরে গেছেন।” ফতুল্লা লঞ্চঘাটে যাত্রী মানিকা আক্তার মনি বলেন, “স্বামী ছুটি পাবে শনিবার, তাই আমরা আগেভাগেই যাচ্ছি। এখন অপেক্ষা, কখন বাড়ি পৌঁছব।”
শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের স্টাফ ইয়াছিন আরাফাত জানান, “২৫ মার্চ থেকেই সব গাড়ি পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে চলছে। ঈদ উপলক্ষে অনেকেই ২-৩ দিন আগেই টিকিট কেটে রাখছেন, তবে এবার চলতি যাত্রীর সংখ্যাও বেশি।” তবে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তবে পরিবহন কাউন্টার স্টাফরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। বাস, ট্রেন ও লঞ্চের পাশাপাশি প্রাইভেট কার ও হাইয়েস ভাড়া করেও বাড়ি ফিরছেন অনেকে।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় এই দুই মহাসড়কে যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় জীবিকার তাগিদে রাজধানী ও আশেপাশের জেলা শহরে অবস্থান করা ঘরমুখো মানুষকে। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে একই শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তবে, এবার যানজটের পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ‘ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা’ পরিস্থিতির কারণে ছিনতাই ও ডাকাতির শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন পরিবহন চালক ও যাত্রীরা।
তবে, ঈদযাত্রার ভোগান্তি কমাতে মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা। ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ রাখতে ‘অনিরাপদ’ চিহ্নিত স্থানগুলোতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশেরও টহল ও অবস্থান থাকবে।
এদিকে, ঈদযাত্রায় যানজট কমাতে ঈদের আগে ও পরে সাতদিন মহাসড়কগুলোতে জরুরি সেবা ব্যতীত পণ্যবাহী যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিওনের কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এবার যানজটের শঙ্কা কম। তবে, একলেন থেকে ছয়লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটিতে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। এ মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
র্যাব-১১ ব্যাটেলিয়ান অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কগুলোকে সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য নিরাপদ রাখতে র্যাব বছরজুড়েই চেকপোস্টে তল্লাশি ও টহল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তবে এবারের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দীর্ঘ সময়ের ছুটির কারণে এ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।
মহাসড়কে কোনো যানবাহন বা যাত্রী যাতে ছিনতাই বা ডাকাতির কবলে না পড়ে, সে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে র্যাব নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চেকপোস্টে তল্লাশির পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।’ এবারের ঈদযাত্রা মানুষের জন্য নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন র্যাব-১১ ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। র্যাবের এই কার্যক্রম শুরুর পর থেকে নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক যানজট মুক্ত রয়েছে। মহাসড়ক পুরোপুরি যানজটমুক্ত রাখতে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন টিম কাজ করছে।