নিজেকে বাঁচাতে ছেলেকে হাতিয়ার বানিয়েছে হাতেম
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাতেম ও তার বড় ছেলে হাসিন আরমান (অয়ন)
ছাত্রজনতার গণঅভ্যূত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হঠাৎ শেখ হাসিনা পালানোর পর তার দোসররা পালানোর সুযোগ পাননি। অবস্থা বেগতিক দেখে তখন অনেকেই কৌশল নেন রঙ বদলানোর। নারায়ণগঞ্জে ওসমানদের আয়ের বড় উৎস ছিলো বিকেএমই‘এ বিগত দিনে যার সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী দোসর সেলিম ওসমান। পটপরিবর্তনে গত ২৪ আগষ্ট সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে তার বিসস্ত সহযোগী মোহাম্মদ হাতেমকে সভাপতির দায়িত্ব দিতে প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে যায়। সেই অনুসারে সভাপতির দায়িত্ব পান এই ওসমান দোসর ও ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাতেম। দায়িত্ব নিয়েই প্রথমে বিসিক এলাকায় বিএনপির নেতাদের নিজের আওতায় নিতে ঝুট বণ্টনের কৌশল শুরু করেন যা বর্তমানে ও চলমান। কিন্তু এরই মাঝে রাজনৈতিকদল সহ মিডিয়া জগৎ এ সেলিম ওসমানের সেই প্রেসক্রিপশন প্রকাশে আসলে নড়ে চড়ে বসেন মোহাম্মদ হাতেম। এদিকে বর্তমানে রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, মিডিয়া চতুমুর্খী চাপে রয়েছেন হাতেম। যাকে ঘিরে বর্তমানে তার বড় ছেলে হাসিন আরমান (অয়ন) তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাইবার যোদ্ধা পরিচয় দিচ্ছেন।
এদিকে কয়েকদিন পূর্বে জেলা প্রশাসকের কাছে যুগের চিন্তার ডিক্লারেশনের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রধান করেছিলেন ওসমান দোসররা। সেই স্মারকলিপিতে দাবি করেন, বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ৫ আগষ্ট ২০২৪ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে স্বৈরাচারী- ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে পোশাক শিল্পের যে ৪৮ জন তরুন উদ্যোক্তা বিবৃতি দিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এক দফা দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিল মোহাম্মদ হাতেমের ছেলে হাসিন আরমান (পরিচালক, এমবি নীট ফ্যাশন। ১ম সহ-সভাপতি, 'বাংলাদেশ এ্যাপারেলস ইয়ুথ লীডার্স এলায়েন্স)। এছাড়া তার পরিবারের অন্যান্য বিবৃতিদাতারা ছিল- তার ভাতিজা ইকবাল হাসান (পরিচালক, ফেয়ার এ্যাপারেলস লি)। এ ছাড়া হাতেমের বড় ছেলে অয়নকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সাইবার যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত করায় অথচ শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের সাথে ঢাকায় বেশিরভাগ সময়েই হাতেমের ছেলে অয়নের সখ্যতা ছিল। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হাতেমের ছেলে অয়ন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি, ঢাকা সিটি মেয়র আতিকসহ আওয়ামীলীগের ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে কথায় কথায় সেল্ফি তুলতেন। অথচ সেই হাতেমের ছেলেকেই এখন তিনি সাইবার যোদ্ধা বলে চালিয়ে দিয়ে নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করেছেন। সর্বশেষ ৫ ডিসেম্বর বিকেএমই’র ইজিএম অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অবদান রাখা ৪০ ব্যবসায়ীর সাথে হাতেমের ছেলেকেও স্টেজে তোলা হয়। এনিয়ে বিস্মিত ও হতবাক ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, চেয়ার দখল করতে হাতেমের প্রচেষ্টার প্রশংসা করতেই হয়। ওসমানদের ঘনিষ্ঠ এই দোসর ৫ আগস্টের পর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন নিজের অতীতের খোলস বদলাতে। যদিও হাতেম ও বিকেএমইএ’র বর্তমান পর্ষদের বিরুদ্ধে অন্তবর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা, ও সচিব বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন বৈষম্যর শিকার বিকেএমইএ এর সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এদিকে গত ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে বিকেএমইর তৎকালীন নির্বাহী সভাপতি (বর্তমান সভাপতি) মো. হাতেম বলেন, 'এরকম একটি সঙ্কটকালে আমরা এমন সিচুয়েশন দেখবো সেটা আশা করিনি। যে তান্ডব আমরা গত কয়েক দিনে দেখেছি, আমরা আশা করব, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য যারা আছেন, তারা তা উদ্ঘাটন করবেন এবং আইনের আওতায় আনবেন। আমরা সরকারের পাশে সবসময়ই ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর খোলস পাল্টিয়ে নিজেকে ছাত্র-আন্দোলনের পক্ষে দাবি করে আহতের চিকিৎসায় ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে ছবি তোলেন হাতেম, সেই ছবি বিক্রি করেই চলছেন এই স্বৈরাচারের দোসর।
সূত্র জানিয়েছে, গত ১৬ বছর ব্যবসায়ীদের উপর ছড়ি ঘোরাতে দেখেছেন। এই হাতেমকে দিয়েই সেলিম ওসমান বহু ব্যবসায়ীকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ব্যবসা ছাড়া করেছেন, গডফাদার সেলিম ওসমানের হয়ে হাতেমই টাকা উঠাতো, ঝুট বিতরণ করতো, ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রাখতো। মোটা দাগে বললে ২০১০ সাল থেকে সেলিম ওসমানের প্রেসক্রিপশনের হাতেম কাজ করতো। ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক সেলিম ওসমানের ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতার কারণে ডায়াপার পরেই চলাফেরা করতে হতো। আর তার সাথে ছায়ার মতো থাকতো এই হাতেম। দেশে কিংবা দেশের বাইরে সেলিম ওসমান যেখানেই থাকতো না কেন হাতেমকে নির্বাহী সভাপতি হিসেবে তার সকল আদেশ নির্দেশ মোতাবেক কাজ করতে হতো। বিসিক এলাকায় কিংবা ফতুল্লার উইজডমের মধ্যে যেখানে সেলিম ওসমান থাকতো সেখানেই তাঁর গাড়িতে রাখা ডায়াপারের মতোই হাতেম হুকুম তামিলের জন্য লেগে থাকতেন। এতো বিশস্ব হাতেমকেই তাই সেলিম ওসমান পালিয়ে যাওয়ার পর গত ২৫ আগস্ট অসুস্থতার কথা বলে পাঠানো বিকেএমইএর পদত্যাগপত্রে সুস্পষ্টভাবে হাতেমকে সভাপতি করার নির্দেশ দেওয়ায় তিনি দায়িত্ব পান। এর পরেই বিসিক শাসনগাঁও এলাকায় প্রায় ৫০০ শিল্প কারখানার প্রায় ১০৮ টির টোকেন দিতে দেখা যায় হাতেমকে। এ ছাড়া সেখান প্রতিটি গার্মেন্টস এর মাল প্রতি হাতেমের ছেলে অয়ন নিতো মোটা অংকের পার্সেন্টিজ যা বর্তমানে প্রকাশ্যে। বর্তমানে সভাপতির পদ আকড়ে ধরতে ছেলেকে হাতিয়ার বানিয়েছে হাতেম। এ ছাড়া ছেলেকে সাইবার যোদ্ধা দাবি করে বর্তমানে ছেলে অয়নকে নিয়ে বাংলামোটরের পাশে রূপায়ন টাওয়ারের আশপাশে ঘুরঘুর করছেন এই ওসমান দোসর ঝুট ব্যবসায়ী হাতেম। এ ছাড়া বিভিন্ন সমন্বয়কসহ নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন হাতেম। বর্তমানে ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীরা হাতেমের বিরুদ্ধে একাট্টা হতে শুরু করেছে। শুধু গুটি কয়েকজন ওসমান দোসর ব্যতিত। এদিকে গুঞ্জন রয়েছে, বর্তমানে ও এই হাতেমের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা দেশের বাহিরে বসেই পাচ্ছেন সেলিম ওসমান। যার প্রমান হিসেবে কিছুদিন পূর্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসা কিছু ওসমানদের দোসর ব্যবসায়ীর মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে। এদিকে বর্তমানে সকলেই বলছে, বিকেএমই‘এ এখনো ওসমানদের আশীর্বাদপুষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠন। যা পট পরিবর্তনের ৫ মাসে ও ওসমানমুক্ত হয়নি।