ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা প্রস্তুতি শেষ মুহুর্তে
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা প্রস্তুতি শেষ মুহুর্তে ,ব্যস্ত সময় পার করছেন স্টল নির্মাণের কারিগররা
এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতির শেষ মুহুর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্টল নির্মাণের কারিগররা। গণঅভূথ্যানের পর ২৯তম বাণিজ্য মেলার আসর কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিয়ে ছিল অনেকটা সংশয়। তবে সব শংকা কাটিয়ে আগামী ১জানুয়ারিতেই শুরু হচ্ছে মাসব্যপী বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর। শেষ মুহুর্তে নির্দিষ্ট সময়ে ষ্টল নির্মাণ সম্পন্ন করতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কর্মব্যস্ত সময় পাড় করছেন ষ্টল তৈরির কারিগরেরা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ষ্টল তৈরির কাজ শেষ করে মালিকের কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন বলে আশাবাদী ষ্টল তৈরির কারিগররা। শুরু থেকে দোকানপাট সাজিয়ে পুরোদমে বেচাকেনা করতে পারবেন বলে দাবী দোকান মালিকদের। মেলাকে প্রাণবন্ত ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সর্ব্বোচ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মেলার আয়োজক রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মেলায় যে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭ শতাধিক পুলিশ। থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের একাধিক টিম। আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি গেইট ইজারাদারের পক্ষ থেকে থাকবে স্বেচ্ছাবেক দল।
রাজধানীর উপকন্ঠ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে পূর্বাচল উপশহরে স্থায়ী ভেন্যু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিউশন সেন্টারে চুতুর্থবারের বসছে বাণিজ্য মেলা। ১জানুয়ারি সকাল ১০টায় অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুছ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এবার মেলার প্রধান প্রবেশদ্বার ৩৬জুলাইয়ের স্মৃতির আদলে তৈরি করা হচ্ছে। মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে থাকছে দেশি-বিদেশী ৩৬২টি স্টল। মেলার প্রধান প্রবেশদ্বারের পূর্ব পাশে থাকছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদের প্রতি সম্মান রেখে তৈরি করা হচ্ছে শহীদ আবু সাঈদ কর্নার ও মূল ভবনের উত্তর পাশে থাকছে মুগ্ধ কর্নার। মূল ভবনের ভেতরে থাকছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ান। দর্শনার্থীদের বসার জন্য থাকবে ৩টি সিটিং জোন। ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য থাকছে ডাচ বাংলা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের একাধিক বুথ।
স্টল নির্মাণ জোরেসোরে শেষ করতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। ব্যস্ত সময় পাড় করছে কারিগরেরা। আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে মালিকপক্ষকে পুরোপুরি নির্মিত ষ্টলের কাজ শেষ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন নির্মান কাজের কারিগরেরা। মেলায় আসা শিশুদের জন্য থাকছে একটি ডিজিটাল শিশুপার্ক। মেলায় যেন কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেজন্য ২৩৪ টি সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি থাকছে ৫ টি ওয়াচ টাওয়ার। তাৎক্ষণিক সেবা দিতে থাকছে একাধিক পুলিশের টিম। রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার লোকজন যেন নির্বিঘ্নে মেলায় আসতে পারেন সেজন্য অন্যান্য বছরের মত থাকছে বিআরটিসি বাস সার্ভিস। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি বেশ ভালো হবে বলে আশাবাদী মেলা কর্তৃপক্ষ।
মেলায় নিজেদের স্টল নির্মাণের কাজ তদারক করতে করতে জারিন ফ্যাশনের জয় মন্ডল বলেন, মেলা শুরুর আগেই সব প্যাভিলিয়নের স্টল নির্মাণ হয়ে যাবে। প্রতিবছর এমনটাই দেখা যায়। একেবারে শেষ দিকে এসে ২৪ঘণ্টা ধরে নির্মাণের কাজ হয়। অন্যবারের চেয়ে এবার মেলা বেশি জমবে বলে আশা করেন রিপন। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের ঘটনার কারণে মানুষ এক ধরণের ট্রমার মধ্যে রয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশ পেলে এই ট্রমা দূর হবে। মানুষের কাছে আগের মতো টাকা পয়সা নেই ঠিকই। তারপরও যাদের কাছে আছে, তাদের সংখ্যাও কম নয়। আশা করা যায়, এবারও বেচাকেনা খারাপ হবে না।
কিয়াম ইলেকট্রনিক্সের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্টল নির্মাণের অর্ধেক কাজ অলরেডি শেষ হয়ে গেছে। বাকি অর্ধেক আশা করি ৩০ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। উদ্বোধনের দিন থেকে প্রোডাক্ট ডিসপ্লে করে দোকান চালু করে দিবো। তিনি আরো জানান, গতবছর তেমন সুবিধা করতে পারেনি। এ বছর যেহেতু দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে তাই এবার ভালো কিছু আশা করছি।
নাভানা ফার্নিচারের বিক্রয় প্রতিনিধি আরিফুল আলম বলেন, রাত দিন ২৪ ঘন্টা আমরা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। বেশিরভাগ কাজ হয়ে গেছে। আশা করছি উদ্বোধনের আগেই কাজ শেষ করে মালিকের কাছে স্টল বুঝিয়ে দিতে পারবো।
গেইট ইজারাদারের প্রতিনিধি আবুল কাশেম বলেন, মেলায় দর্শনার্থীরা যেন কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয় সেজন্য আগের বছরের মত আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি গেইট ইজারাদারের পক্ষ থেকে থাকছে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক। তাছাড়া এবারের মেলায় প্রবেশ করতে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে টিকেট কিনতে পারবেন আগত দর্শনার্থীরা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, মেলায় যাতে কোন প্রকার আইন শৃংখলার অবনতি না ঘটে সেজন্য দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। মোতায়েন থাকবে ৭শতাধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্য। এছাড়া সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য। বসানো হয়েছে পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ার। স্থাপন করা হয়েছে একটি পুলিশ ক্যাম্প ।