ওসমানদের আস্থাভাজন সোহেল-মুক্তা ফের ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

ওসমানদের আস্থাভাজন সোহেল-মুক্তা ফের ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে
# দুর্নীতির অভিযোগে তাদের স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়
# তাদের বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অনিয়মের অভিযোগ
চিকিৎসা নিয়ে বাণিজ্য নতুন নয়। চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা গ্রহণীয় নয়। তবুও দীর্ঘ অভিযান, আইন ও কর্মকান্ডের পরও স্বাভাবিক হয়নি এই সেক্টরটি। এছাড়া চিকিৎসকবিহীন চিকিৎসা, প্রয়োজনবিহীন টেস্ট আর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিবিহীন রিপোর্ট নির্মূল হয়নি। সর্বশেষ করোনা নিয়েও সরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা-বাণিজ্য চলেছে। যার প্রতিফলন করোনার সার্টিফিকেট জালিয়াতি বা অনুমোদনহীন করোনার নমুনা সংগ্রহ। নিয়মের বাহিরে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে করোনার টিকা প্রদান করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালের কর্মচারী সহকারী নাসরিন সুলতানা মুক্তা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানাকে প্রায় বছর দুয়েক আগে দুর্নীতির অভিযোগে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে যুক্ত থেকে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের অফিস সহাকরী সোহেল রানা ও নাসরিন সুলতানা মুক্তার বিরুদ্ধে। একই সাথে দুর্নীতির দায়ে তাদের দুজনকে গত বছর এই হাসপাতাল থেকে বদলী করা হয়। কিন্তু এক বছর না যেতেই নিয়মের বাইরে গিয়ে কি করে সোহেল আবারও এত দ্রুত সময়ে খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে যোগদান করলেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লা গাবতলী এলাকার সন্তান হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে সন্ত্রাসী ভুমিকয়া নেমে পড়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের অফিস সহকারি সোহেল রানা তার আগের জায়গা ফিরে পেতে আগ্রাসী ভুমিকায় নেমেছে। তার স্থানে দায়িত্বে থাকা সামসুন্নাহারকে সরিয়ে সেখানে সোহেলে বসার জন্য নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তার সাথে কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তারাও যোগ দিয়েছে। তাদের নামও প্রকাশ হতে যাচ্ছে। সুত্রমতে, সোহেল ইসদাইর গাবতলী এলাকার বাসিন্দা। তার ৪তলা বাড়ি রয়েছে এই এলাকায়। এছাড়া সোহেলের মা ডিসি অফিসের ৪র্থ শ্রেনীর র্কমচারী ছিলেন। একই সাথে শ্রমিক লীগের নেত্রী বলে পরিচয় দিতেন। তাছাড়া এই সোহেল আজমেরী ওসমানের সন্ত্রাসী নাসিরসহ অন্যদের সাথে সখ্যতা রেখে তার কর্মস্থল সহ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে বেড়াত। আজমেরী ওসমান এবং গডফাদার শামীম ওসমান যে ভাবে গুন্ডামি করে বেড়াত সেই সন্ত্রাসী ভুমিকায় নেমেছে ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের কর্মচারী সোহেল। তার স্থান দখল করে নেয়ার জন্য এসেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করছে। এছাড়া এলাকায় কিশোর গ্যাং বাহিনীর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ২০২৩ সনের ৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মইনুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের প্রধান সহকারী নাসরিন সুলতানা মুক্তা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানাকে দুর্নীতির অভিযোগে বদলির আদেশ দেয়া হয়। তাদের মধ্যে নাসরিন সুলতানাকে ঢাকার দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী করা হয় এবং সোহেল রানাকে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে।
তথ্যমতে, ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের প্রাক্তন প্রধান সহকারী নাসরিন সুলতানা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তার মাঝে ২০২৩ সনে ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের ৪০ জন আউট সোর্সিং নিয়োগের চাকুরী প্রার্থীদের থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ করে টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে করোনা কালিন সময়ে অবৈধ ভাবে এমপি শামীম ওসমান পরিবারের লোকজনকে টিকা দিয়েছে মুক্তা। একই সাথে অবৈধ ভাবে নারায়ণগঞ্জের ১২ টি খুনের মামলার আসামী আজমেরী ওসমানের বাসায় গিয়ে মুক্তা তাদের করোনা টিকা প্রদান করে আইফোন মোবাইল উপরহার পেয়েছে। তাছাড়া সোহেল মুক্তার সাথে শামীম ওসমানের ভালো প্রেম থাকায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকা কালিন সময়ে খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে প্রভাব বিস্তার করেছে। ওসমানীয় সম্রাজ্যের সৈনিক হওয়ায় নানা অনিয়ম করে তার পার পেয়ে যেত। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেত না। তাই তারা সরকারি এই হাসপাতালকে অনিয়মের আখড়া বানিয়ে নিয়ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের একাধিক ব্যক্তি জানান, সোহেল মুক্তা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে ওই হাসপাতালের পাশেই গ্যাষ্ট্রলিভ ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার কিনে নিয়ে তারা চালাচ্ছেন। খানপুর হাসপাতালের ডাক্তারদের জিম্মি করে রোগীদের বিভিন্ন ডিজিটাল পরীক্ষা হাসপাতালে না করে তাদের ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে করার জন্য বাধ্য করতেন। রোগিদের বিভিন্ন পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে নিজেরা মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতেন। অথচ একই পরীক্ষা সরকারি ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে অল্প খরচে করা যায়। সেখানে করতে দিতেন ওসমান সাম্রাজ্যের আস্থাভাজন মুক্তা-সোহেল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানান, দুর্নীতির অভিযুক্তে তাদের এখান থেকে বদলী করা হলেও ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টের পরে তারা নির্যাতিত দাবী প্রতারনার মাধ্যমে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ফের নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে বদলীয় হয়ে আসে। ইতোমধ্যে সোহেল যোগদান করে আগের রূপে ফিরে এসে তার সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছেন। তাছাড়া তার কয়েক মাসে গত দুয়েক একদিন নাসরিন সুলতানা মুক্তার দোহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলী হয়ে খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে অর্ডার হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এজন্য ডাক্তার থেকে শুরু করে সকল কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে তারা দুজনে মিলে আবারও তাদের আগের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম শুরু করবে। তাছাড়া বিগত দিনে খানপুর হসপিটালের ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে তারাই বিশাল সিন্ডিকেট তৈরী করে।
কয়েকজন কর্মচারী জানান, নগরীর খানপুর এলাকার ৩কষ্ফ শয্যা হাসপাতালের এই দ্ইু কর্মচারী নানা অনিয়মের সাথে জড়িত রয়েছেন। কিন্তু তাদের ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে চান না। কেননা তারা আধিপত্য তৈরীর মাধ্যমে সিন্ডেকেট করে হাসপাতালে নানা অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করেছে। বিশেষ করে আউট সোর্সিং নিয়োগ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, করোনার সময়ে মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে তাদের বাসায় গিয়ে টিকা প্রদান করা। দাালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন অনিয়ম করে অর্থ নেয়া যেন নিয়মে পরিনত করেছে তারা। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে গেলেই তাকে হেনস্থার শিকার হতে হয়।
একাধিক বক্তি জানান, তারা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির লোকদের থেকেও কমিশন নিয়ে থাকতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের পাশেই গ্যাষ্ট্রোলিভ ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার ক্রয় করে নিয়ে ডাক্তারদের জিম্মি করে বিভিন্ন পরীক্ষা তাদের এই ক্লিনিকে করাতে বাধ্য করতেন। আর এতে করে রোগিদের বেশি টাকা দিয়ে তাদের এখানে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হত। এত অভিযোগ থাকা সত্বেও সোহেল- মুক্তার ফের নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালে কিভাবে বদলী হয়ে আসে তা নিয়ে নানা সমালোচনা আলোচনা হচ্ছে। সচেতন মহল থেকে দাবী উঠেছে তাদেরকে যেন নারায়ণগঞ্জ থেকে বিতাড়িত করা হয়।
নগরবাসির মাঝে প্রশ্ন উঠেছে নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে কি এমন মধু রয়েছে যেখানে কেউ আসলে আর যেতে চায় না। এখানকার মধুর রস তারা ছাড়তে চান না কেন। এর উত্তর পেতে হলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের সত্যতা পাওয়া বিশাল অংকের অর্থের মালিক বনে যাওয়াই আসল রহস্য বলে মনে করেন।
এবিষয়ে ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল বাসার বলেন, আমি শুনেছি নাসরিন সুলতানা মুক্তার এখানে বদলীর অর্ডার হয়েছে। কিন্তু এখনো যোগদান করে নাই।
৩শ’ শয্যা হাসপাতালের প্রধান সহকারী নাসরিন সুলতানা মুক্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।