যুগের চিন্তার সাথে একান্ত স্বাক্ষাৎকারে আব্দুল জব্বার
জনসভার পর জামায়াতকে না.গঞ্জবাসী নতুনভাবে মুল্যায়িত করবে
রাকিবুল ইসলাম
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ মহানরগরের আমির আব্দুল জব্বার
আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর জামায়াতে ইসলামী এ যাবৎকালের বিশাল জনসভা করতে যাচ্ছে। আর জনসভার মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমীর ডা. শফিকুর রহমান নেতাকর্মী থেকে শুরু নগরবাসীর মাঝে তারা মানুষের পাশে থেকে কিভাবে নারায়ণগঞ্জ তথা দেশকে পরিবর্তন করতে চান সেই বার্তা দিবেন। আর এই জনসভা কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আমির গতকাল যুগের চিন্তা প্রতিবেদককে আব্দুল জব্বার বলেন, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শহরের পাশে ফতুল্লার ইসদাইর ওসমানি পৌর স্টোডিয়ামে নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এই জনসভায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে। সমাবেশের মাধ্যমে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীকে বলেেত চাই দেশ পরিচালনার জন্য ফ্যাসিষ্ট নেতৃত্ব চাই না। যারা সৎ ও দক্ষতার সাথে জনগণের অধিকার রক্ষা করতে পারবে আমরা সেই নেতৃত্ব চাই। আর তা কেবল জামায়াতে ইসলামীর মাধ্যমে সম্ভব। আমরা বিশ্বাস করি এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে জামায়াতে ইসলামী নতুন ভাবে মুল্যায়িত হবে। আগামী জন সভার মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা আর বৃদ্ধি পাবে যা আগেও ছিল। জামায়াতে ইসলামী কোন দিন কখনো শক্তি প্রদর্শনের রাজনীতি করে নাই করবেও না। বিগত সাড়ে ১৫ বছর জামায়াতের উপর যে জুলুম নির্যাতন হয়েছে তার পরেও আমরা প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে কোন ব্যবস্থা নেই নাই। বিগত সরকারের সময় যারা জুলুম অত্যাচারে সিকার হয়েছে তারা ভিকটিম হয়ে আইনের দ্বারস্থ হতে পারবে। আমরা দল থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করবো।
পজিটিভ নারায়ণগঞ্জ গড়ার প্রসঙ্গে আব্দুল জব্বার যুগের চিন্তার প্রতিবেদককে বলেন, বিগত সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে অভয়ারণ্য ছিল। এখানে মানুষের জমি দখল,চাদাঁবাজি প্রকাশ্যে ইস্যু ছিল। যারা সন্ত্রাসী করে তারা আসলে কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী হতে পারে না। যারা দেশের কল্যাণে কাজ করে তাদের উচিৎ কোন সন্ত্রাসীকে প্রশ্রয় না দেয়া। নির্বাচনের সময় যখন আসে তখন মানুষের সুখে দুঃখে কারা পাশে ছিল তারাই সঠিক ব্যক্তিকে বাছাই করে নিবে। সন্ত্রাসের জনপদ থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা নেতৃত্বের পরিবর্তন চাই। আমাদের জেলা শহরে যারা সন্ত্রাসী চাদাঁবাজি করে তারাই নেতৃত্ব দেয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে হলে অবশ্যই সৎ দক্ষ, যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র কায়েম করবে তাদেরকে নেতা বানাতে হবে। জামায়াতে ইসলামী মানুষকে সচেতন করে বলছে যারাই চাদাঁবাজি করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। আর এটা মানুষকে নিজেদের অধিকার হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে। প্রশাসনের আশ্রয় নিয়ে জনসচেতনা করতে হবে। এভাবে আমরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলে তাদেরকে আস্তে আস্তে দুর্বল করে তুলতে পারলে আমরা সুন্দর একটি পজিটিভ নারায়ণগঞ্জ হিসেবে গড়তে পারবো।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীদের উপর ২০০৯ সন থেকে নানা ভাবে জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত দল। ফাইনাল স্টেজ বলতে গেলে ২০১২ সনে এসে জামায়াতে ইসলামী সংগঠন ও সহযোগি সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের উপর পুরোদমে জুলুম নির্যাতন চালান। আমাদের দলীয় কার্যালয় গুলো তারা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা আদর্শিক রাজনীতি থেকে নিজেদের কল্যান চাই, সমাজটাকে পরিশুদ্ধ করতে চাই। কাজের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের পরিসরে আত্মগোপন বা আন্ডার গ্রাউন্ড বলেন সিক্রেসি মেইনটেন করে আমরা বিগত সময়ে আমাদের দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে গেছি। কোন আদর্শিক আন্দোলনকে জেল জুলুম নির্যাতন করে অথবা সেই আদর্শের কর্মীকে হত্যা করে আমাদের দমানো যায় না। আল্লাহর রাসুলে যুগে তাদের উপর যত নির্যাতন হয়েছে ততো তাদের কাজের ধারাবাহিকতা তৎপরতা আরও বেশি বেরে গেছে। জুলুম নির্যাতন সহ্য করে জামায়াতে ইসলামী আগের থেকে মজবুত হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। কল্যাণ মুলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংগঠন কাজ করে যাবে। আমরা দেশের বিরুদ্ধে কোন কাজ করি নাই, মানুষের কল্যানে কাজ করেছি। ক্ষমতাচ্যুত দলের সময়ে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের কাছে কুরআন হাদিসের বই পেলেও বলাহত জিহাদী বই পেয়েছে। সেটাকে ব্যঙ্গাত্বক ভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরা হত।
ত্যাগের প্রসঙ্গে বলেন, ২০১২ সন থেকে ২০১৫ সন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত ভারমুক্ত মিলিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের সভাপতি সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পালন করেছি। তখন আমরা প্রতিটি মুহুর্তে আমাদের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে সময় পার করেছি। ১৩৪জনকে জামায়াতের নেত্কর্মীকে হত্যা করেছে। বিশেষ করে দেলোয়ার হোসেন সাইদী সাহেবের রায়কে কেন্দ্র করে তখনকার কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন গ্রেপ্তার করে। তারা হয়ত মনে করেছে সভাপতিকে গ্রেপ্তার করলে আন্দোলন দমে যাবে, কিন্তু তখন আন্দোলন আারও ত্বরান্বিত হয়েছে। তখন আমার পরিবারর মা, ভাইদের উপর নানা ভাবে অত্যাচর, জুলুম চালিয়েছে। তাদেরকে বাড়ি ঘরে থাকতে দেয় নাই।চট্টগ্রামের ফটিক ছড়িতে আমার ভাইকে ব্যবসা করতে দেয়া হয় নাই, সেখানে সকালে পুলিশ গিয়ে বসে থাকত,তার কাছে টাকা চাইত, মাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাবে বলে হুমকি ধমকি দিয়েছে।
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী প্রসঙ্গে বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি জনসম্পৃক্ত দল। বিগত সময়ের নির্বাচনে দেশের মানুষ কোন ভোট দিতে পারে নাই। তখন দিনের ভোট রাতে হওয়ায় তা নিয়ে মানুষের মাঝে ক্ষোভ তৈরী হয়েছে। জনগণ যদি নিজেরে মতের রায় দিতে পারে তাহলে দেশে একটি পরিবর্তন আসতে পারে। সেই জায়গায় নারায়ণগঞ্জ জামায়াতে ইসলামী যাচাই বাছাই করে ৫টি আসনে প্রার্থী দিবে। তবে কারা প্রার্থী হবে সে বিষয়ে দলের হাই কমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়ে তা ঘোষনা করবে। নির্বাচনে দল থেকে যাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে আমরা তার পক্ষে কাজ করে যাবো। এমনকি আমার প্রার্থীতার বিষয়ে দল যা ঘোষণা করবে আমি সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিব।
সংগঠন প্রসঙ্গে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভাবিক থাকুক কখনো কেন্দ্র থেকে শুরু ওয়ার্ড পর্যন্ত দলীয় কার্যক্রম বন্ধ হয় নাই। জেলা মহানগর থেকে শুরু করে ওয়াড পর্যায়ে দুই বছর অন্তর অন্তর কমিটি গঠন হয়। মহানগরে নারী পুরুষ মিলিয়ে ১১শ’ ইউনিট আছে। জেলাতে আরও বেশি রয়েছে। বিগত সময়ে আমরা অনলাইন প্লাটফর্ম ফেসবুক, হোয়াটস আপ, মেসেঞ্জারে মাধ্যমে যোগাযোগ মেইনটেন করে কার্যক্রম চালিয়েছি। বিগত সরকার তার ফ্যাসিষ্ট চিন্তা ভাবনা থেকে আমাদের কাজ করতে দেয় নাই। কিন্তু আমরা পরিস্থিতি মানিয়ে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছি।
৫ আগষ্টের পরে জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম প্রসঙ্গে বলেন, জুলাই আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের আগেও আমাদের কার্যক্রম চলেছে। তবে ৫আগষ্টের পরে আমরা প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালানোর সুযোগ পেয়েছি। সেই সাথে দলীয় কার্যালয় খুলে সাংগঠনিক নানা কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমরা আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে আমরা দলকে সুসংগঠিত করছি। আমরা যেতে হকের উপর, ন্যায়ের উপর ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন ইসলামকে ফলো করে চলতে পারি সকলে প্রতি সেই আহ্বান জানাই। আমরা নারায়ণগঞ্জ বাসির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যারা জামায়াতকে ভালো বাসেন, দেশের কল্যাণ চান তারা জনসভায় উপস্থিত হয়ে সাফল্য মন্ডিত করবেন। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসমুক্ত,চাদাঁবাজমুক্ত সর্বোপরি পজিটিভ সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলার জন্য আমাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করবেন আমি বিশ্বাস করি।