Logo
Logo
×

ধর্ম ও নৈতিকতা

 কৈলাশে ফিরলেন দেবী দূর্গা

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২৭ পিএম

 কৈলাশে ফিরলেন দেবী দূর্গা


 
 
নারায়ণগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছেন ভক্তকূল। মর্ত্যে ‘বাবার বাড়ি’ বেড়ানো শেষে ঘোড়ায় চড়ে ‘কৈলাসে দেবালয়ে’ ফিরেছেন আনন্দময়ী দেবী দুর্গা। মায়ের কাছে অশুর শক্তির বিনাশের প্রার্থনা করেছেন ভক্তরা। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি ও উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব।

 

 


 
গতকাল রবিবার (১৩ অক্টোবর) দেবীর বিদায়ের পূর্বে মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন নারীরা। সকাল থেকে দেবী দুর্গার চরণের সিঁদুর নিয়ে নিজেদের রাঙিয়ে তোলেন তারা। নগরীর রামকৃষ্ণ মিশন, আমলাপাড়া পূজা মন্ডপ, সাহাপাড়া পূজা মন্ডপ, নতুন পালপাড়া পূজা মন্ডপ, নতুন নয়া মাটি পূজা মন্ডপসহ বেশ কিছু মন্ডপে চলে ভক্তদের আরতি ও রঙের হোলি খেলা।

 

 

পরম ভক্তি নিয়ে নিজ নিজ মনের বাসনা জানিয়ে নারীরা দেবী দুর্গার সিঁথিতে সিঁদুর পরান এবং মিষ্টি মুখ করান। পরে মন্দিরে আগত নারীরা একে অপরের সিঁথিতে সিঁদুর বিনিময় করেন। এরপর বিসর্জনের জন্য সধবা নারীরা দেবীকে সাজান ফুল, সিঁদুর ও নানা অলঙ্কার দিয়ে।

 

 

একদিকে দেবীকে বিদায়ের বিষাদ অন্যদিকে, সিদুর খেলার আনন্দ। সকল পূজা মন্ডপগুলোতে যেন বিষাদ-আনন্দের মিশ্র অনুভূতি বিরাজ করে। প্রতিমা বিসর্জনে বিকেল থেকেই বিভিন্ন মন্ডপগুলো থেকে প্রতিমা বের করা শুরু হয়। বিসর্জন দিতে নানান রকমের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ভক্তরা।

 

 


 
ট্রাক ও ভ্যানে করে প্রতিমা নিয়ে বিভিন্ন মন্ডপ থেকে আনন্দ শোভা বের হয়। এ শোভাযাত্রায় ভক্তদের নাচ-গানে মুখর হয়ে উঠে চারপাশ। রং ছিটিয়ে ও ঢাকঢোল, বাঁশিসহ নানান বাদ্যযন্ত্রের সাথে উলুধ্বনিতে পরিবেশ উৎসবমুখর করে তোলেন। শোভাযাত্রাগুলো নগরীর বিআইডব্লিউটিএ‘র ৩নং ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে গিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয়।

 

 


 
সন্ধ্যার পর থেকে নগরীতে শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রতিমা বির্সজন দেওয়া শুরু হয়। একই সময়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া শুরু হয়। নগরীর বিআইডব্লিউটিএ‘র ৩নং ঘাটে প্রশাসন-পুলিশের নিরাপত্তায় এবং নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার আয়োজন করা হয়। এ ঘাটে প্রথমে রামকৃষ্ণ মিশনের মন্ডপের প্রতিমা বিসজর্ন দেওয়া হয়। একে একে বিভিন্ন মন্ডপ থেকে শোভাযাত্রা এসে, ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।

 

 


 
এসময় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার শিখন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) তরিকুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি নজরুল ইসলামসহ র‌্যাব, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ড, নৌ-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস। সেই সাথে ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট এবং বিভিন্ন পূজা মন্ডপের ভলানটিয়াররা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও, সেনাবাহিনীর একটি দল চারদিক টহলরত অবস্থায় ছিলেন।

 

 


 
প্রতি বছর নগরীর বেশিরভাগ পূজা মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন এই ঘাটে দেওয়া হয়। প্রতিমা বিসর্জন দেখতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এই প্রতিমা বিসর্জন।

 

 


 
এবছর দুর্গোৎসব উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে ২১৪টি পূজা মন্ডপের আয়োজন করা হয়। এবার শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি দুর্গোৎসব উদযাপিত হয়েছে। উৎসবে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে।

 

 

সেনাবাহিনী, র‌্যাব, আনসার, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী প্রতিটি পূজা মন্ডপের নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থান নেয়। এছাড়াও যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতেও তারা প্রস্তুত ছিলেন। রবিবার প্রতিমা বিসর্জনের জন্য জেলার বিভিন্ন ঘাটে নৌ-পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস তৎপর ছিলেন।

 

 


 
দুর্গোৎসবে নারায়ণগঞ্জের পূজা মন্ডপ পরিদর্শনে এসেছিলেন পুলিশের আইজিপি ময়নুল ইসলাম, র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) একেএম শহিদুর রহমান এবং ভারতীয় হাইকমিশনের গকুল ডিকে। সেই সাথে পূজা মন্ডপ দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশী দর্শনার্থীরা নগরীসহ জেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপে ভিড় জমান। মন্ডপে মনোমুগদ্ধকর আয়োজন দেখে প্রত্যেকেই দুর্গোৎসব নিয়ে প্রশংসা করেন।

 

 



এদিকে ফতুল্লার দাপা বালুর ঘাট বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। যাত্রামঙ্গলের জন্য সকালে মন্ডপে মন্ডপে ছিল নারী, পুরুষ ও শিশুদের উপচে পড়া ভীড়। এর পরপরই ফুল, বেলপাতা, ধান ও দুর্বা দিয়ে চলে অঞ্জলী।

 

 

ভক্তরা তাদের কামনা বাসনা পুরণের জন্য মায়ের পায়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী দেয়। স্বামীর সংসারের মঙ্গলার্থে সিদুঁর খেলায় মেতে উঠে। দর্পণ বিসর্জনের আগেই ঢাক-ঢোল আর কাশীর বাজনায় ফুটে ওঠে মা দুর্গার বিদায়ী বার্তা। ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’ এ বাজনায় ভক্তদের মনে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। ধর্মীয় দূর্গোৎসব প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

 

 



সোমবার দুপুর ৩টায় লালপুর বটতলা পূজা মন্ডপ, দাপা ঋষিবাড়ী সার্বজনীন পূজা মন্ডপ, মেঘনা গেইট ঋষিবাড়ি পূজা মন্ডপ ও পিলকুনী পূজা মন্ডপে দূর্গা মন্দিরের প্রতিমা ফতুল্লার দাপা বালুর ঘাট বুড়িগঙ্গা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। বিসর্জনের সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে উৎসব দেখা দিয়েছে। এসময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

 



বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ফতুল্লার দাপা বালুর ঘাটে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ আয়োজিত বিজয়া মঞ্চে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অজিত দাসের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহাদাৎ হোসেন।

 

 

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ শরীফুল ইসলাম, র‌্যাব-১১ এর সার্জেন্ট ইকবাল হাসান, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কাজী মাঈনউদ্দিন, ফতুল্লা পূজা উদযাপন পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাংবাদিক রণজিৎ মোদক, ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোহাম্মদ মাসুম। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, লালপুর বটতলা মন্দির কমিটির সভাপতি নীল রতন দাস।

 

 



এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, কাশিনাথ দাস, পরান দাস, বিধান দাস, বীরেন দাস, সুমন ঘোষ, প্রদীপ দত্ত, সুমিত দাস, প্রদীপ কুমার দ্বীপ, শ্যামল সরকার, বীরেন দাস সহ বিভিন্ন পূজা মন্দির পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ।

 

 



ফতুল্লা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ও সাংবাদিক রণজিৎ মোদক তার বক্তব্যে বলেন, ফতুল্লায় মোট ২৬টি পূজা মন্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা শেষে প্রতিমা সমূহ বিসর্জন দেওয়া হয়। এবারের পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ এলাকাবাসীকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

 

 

এসময় ফতুল্লা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অরুন দাসের আত্মার সদগতির জন্য প্রার্থনা করা হয়। এছাড়াও ফতুল্লা দাপা বালুর ঘাটে একটি স্থায়ী স্নান ঘাটের দাবী জানানো হয়।

 

 



 
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যারূপে’ মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিন শুক্লপক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব।

 

 


 
মহালয়ার মধ্য দিয়ে গত ২ অক্টোবর দুর্গোৎসবের ক্ষণগণনা ও আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর গত বুধবার ষষ্ঠী থেকে পাঁচ দিনের যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, রবিবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ আয়োজন শেষ হয়। এর মাঝে বৃহস্পতিবার নবপত্রিকায় প্রবেশ ও স্থাপনে হয় মহাসপ্তমী।

 

 

পরদিন শুক্রবার সকালে কুমারী পূজার পাশাপাশি মহাঅষ্টমীর বিহিত পূজা ও সন্ধিপূজা হয়। আর তিথির কারণে একই দিনে গত শনিবার দুর্গোৎসবের মহানবমী ও দশমী পূজা হয়েছে। এরপর থেকে মায়ের বিদায়ের সুর বাজতে শুরু করে। অবশেষে রবিবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য নিয়ে বিদায় নেন দেবী দূর্গা।

 

 



প্রসঙ্গত, এবছর নারায়ণগঞ্জ জেলা ২১৪টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে শহরে ৪৩টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।    এন. হুসেইন রনী /জেসি

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন