নারায়ণগঞ্জ জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের ‘ফ্যামিলি ডে’ অনুষ্ঠানে বর্ণাঢ্য আয়োজন
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
নারায়ণগঞ্জ জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের ‘ফ্যামিলি ডে’
জীবনে সাফল্য অর্জনে সবচেয়ে বেশি অবদান থাকে পরিবার ও পরিবারের সদস্যদের। ব্যর্থ জীবনেও পরিবার আমাদের আগলে রাখে পরম যত্নে। কিন্ত সাংবাদিকতায় পেশাগত দায়িত্ব পালনে সেই পরিবারের সদস্যদের সময় দেয়াটাই হয়ে ওঠে দূরুহ ব্যাপার। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের বর্ণাঢ্য আয়োজনে নারায়ণগঞ্জে কর্মরত টেলিভিশন সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য গতকাল রোববার (২৯ এপ্রিল) ছিল বিশেষ দিন। নারায়ণগঞ্জ জেলা টেলিভিশন জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি নাফিজ আশরাফ এবং সাধারণ সম্পাদক বৈশাখী টেলিভিশনের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম রফিকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সংগঠনটি টেলিভিশন সাংবাদিক এবং তাদের পরিবার পরিজনদের নিয়ে ‘ফ্যামিলি ডে’ আয়োজন করে। নরসিংদী জেলার পাঁচদোনার চৈতাবাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ড্রিম হলিডে পার্কে সাংবাদিকরা তাদের স্ত্রী, সন্তান ও সহকর্মীদের সাথে প্রাণবন্ত একটি দিন উপভোগ করে। রোববার ভোর সকালে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা নিয়ে সাংবাদিকরা তাদের পরিবার নিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গন্তব্যস্থানের দিকে রওনা করে। যাত্রা শুরুর পর থেকেই গাড়িতে গান, কবিতা, গল্প, উল্লাস আনন্দে হৈ-হুল্লোড় শুরু হয়।
ঘন্টা দেড়েকের মধ্যেই গন্তব্যস্থল ড্রিম হলিডে পার্ক। ৬০ একর জায়গার উপর গড়ে উঠা বিশ্বমানের একটি থিম পার্ক ড্রিম হলিডে পার্ক। আগে থেকেই সাংবাদিকদের জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছিল পার্কটির মায়াবি পিকনিক স্পটটি। এছাড়া ছোট-বড় সবার জন্যই আলাদা আলাদা সব রাইডের বন্দোবস্ত করা ছিল। একদিকে খাওয়া দাওয়া, গল্প, ঘুরাঘুরি এরসাথে বিভিন্ন রাইডে চড়া আনন্দের মাত্রাটা আরো অনেক বাড়িয়ে দেয়। রিভার ক্রজে ঘুরাঘুরি, বুলেট ট্রেনে চড়া, ভূতের বাড়ি দর্শন ফ্যামিলি ডে এর আনন্দ আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। দুপুরে ওয়াটার পার্কে গোসল, হুড়োহুড়িতে দীর্ঘদিনের কর্মক্লান্তি যেন উধাও করে দিল। এরপর আবার পরিবার, পরিজন, সহকর্মীদের নিয়ে একসাথে ভূরিভোজ। খাবারের মেন্যুতে ছিল বিশেষ আকর্ষণ। আয়োজকরা এক্ষেত্রে বুদ্ধিদিপ্ততার পরিচয় দেন, সবাই ভ্রমণস্পটে পৌঁছানোর আগেই বাবুর্চি আর রান্না সকল উপকরণ পৌঁছে যাওয়ার কারণে সারাদিনের ঘুরাঘুরির পর সবাইকে নিয়ে তৃপ্তিসহকারে খাওয়াদাওয়া করেন সকলে। এরপর চলে আবার আড্ডা। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে এরপর শুরু হয় সংগঠনের সদস্যদের পরিবারের সকলকে নিয়ে র্যাফেল ড্র। সদস্যদের প্রত্যেকের স্ত্রীকে দেয়া হয় উপহারও।
ঘুরাঘুরিতে হয়েছে আলোচনা অনুষ্ঠানও। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শফিউদ্দিন বিটু, ছড়াকার ও সিনিয়র সাংবাদিক ইউসুফ আলী এটম, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সমকালের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি শরীফউদ্দিন সবুজ। সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমির হুসাইন স্মিথ, আরটিভির নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি আনোয়ার হাসান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি আতাউর রহমান, গাজী টিভির স্টাফ রিপোর্টার ও সংবাদ চর্চার সম্পাদক মুন্না খান, মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন, বাংলা টিভির নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি হাসান মজুমদার বাবলু, আনন্দ টিভির নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন, আশিকুর রহমান হান্নান, বুলবুল আহমেদ সোহেল, শাহাদাত হোসেন রতন প্রমুখ।
এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দি বিজনেস পোস্ট এর সিনিয়র রিপোর্টার হাসান আরিফ, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক প্রণব কৃষ্ণ রায়, দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার খলিলুর রহমান, দৈনিক যুগের চিন্তার বার্তা সম্পাদক মাহফুজ সিহান প্রমুখ।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘সাংবাদিকরা সবসময়ই বঞ্চিত ও নিগৃহিত হয়ে আসছে। আওয়ামী লীগের সময়কালে সাংবাদিকরা নানা আক্রমনের শিকার হতো, স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হতো। ফ্যাসিস্টদের বিদায়ের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমরা ভিন্ন কিছু আশা করেছিলাম। সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার এক নোটিশে বাতিল করা হল। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সামনেও যে সাংবাদিকদের জন্য এমন কিছু অপেক্ষা করছে না সেটিও বলা যায়না। সাংবাদিকদের কাজ করার একটি স্বাধীন পরিবেশ তৈরি করা দরকার।’
আলোচনা পর্ব শেষে সাংবাদিকদের সন্তানদের বিনোদনের জন্য নানা রাইডের ব্যবস্থা করে আয়োজকরা। এরপর সন্ধ্যায় হালকা স্ন্যাকস পর্ব সেরে নারায়ণগঞ্জে ফেরার পালা। সারাদিন ব্যাপক আনন্দ, উল্লাস আর প্রাণবন্ত একটি দিন উপহার দেয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা টেলিভিশন জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান ফ্যামিলি ডে তে অংশগ্রহণকারী সকলে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে আরেকটি অনুষ্ঠান আয়োজনের আশ^াস দেন আয়োজকরা।