বিকেএমইএ’র নির্বাচনের জন্য নির্বাচন বোর্ড-আপিল বোর্ড গঠন
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
বিকেএমইএ পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন (২০২৫-২০২৭) পরিচালনার জন্য নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপীল বোর্ড গঠন
অবশেষে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন বিকেএমইএ পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন (২০২৫-২০২৭) পরিচালনার জন্য নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপীল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য গঠিত এই দুটি বোর্ডের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করে চিঠি দিয়েছেন বিকেএমইএ’র বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা ১৯৯৪ এর বিধি ১৪ এবং বিকেএমইএ'র সংঘবিধির অনুচ্ছেদ ১৩ অনুসারে বিকেএমইএ পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন ২০২৫-২৭ পরিচালনার জন্য নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপীল বোর্ড গঠন করার বিধান রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বিকেএমইএ'র বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের (২০২৩-২০২৫) ১১তম সভা গত ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বিকেএমইএ কমপ্লেক্স ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বিকেএমইএ পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন ২০২৫-২৭ পরিচালনার জন্য নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপীল বোর্ড গঠন করা হয়।
নির্বাচনের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) এর সহসভাপতি, এফবিসিসিআই এর সাবেক পরিচালক (এফবিসিসিআই) ও বিজিএপিএমইএ সাবেক সভাপতি সফিউল্লা চৌধুরীকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ইনডেন্টিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিকী এবং বাংলাদেশ এ্যালুমিনিয়াম ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন ও এফবিসিসিআই এর সাবেক পরিচালক (এফবিসিসিআই) ওবায়দুর রহমান।
এছাড়া নির্বাচনের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট আপিল বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে বিটিএমএ এর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর সাবেক পরিচালক জাহাঙ্গীর আলামিনকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ কটন এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আইয়ুব এবং গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড.আওলাদ হোসেন।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে বিকেএমইএ’র সকল কার্যক্রম নিজের দখলে নিয়ে গোটা সংগঠনকে এককথায় নির্বাচনহীন করে রেখেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সভাপতির পদ আকঁড়ে দখল করে ছিলেন সেলিম ওসমান। উপায়ন্তর না দেখে অসুস্থতার কথা বলে ২৪ আগস্ট বিকেএমইএ থেকে পদত্যাগ করেন সেলিম ওসমান। তবে এতেও বাধান বিপত্তি। তাঁর আজ্ঞাবহ নির্বাহী সভাপতি ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাতেমকে পদত্যাগপত্রের চিঠিতে সভাপতি করার নির্দেশ দেন। এনিয়ে এরপর থেকে ব্যাপক তুলকালাম কাণ্ড ঘটতে থাকে। বিশেষ করে ২২ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণভবনে গিয়ে একবক্তব্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে হাতেম। স্বৈরাচারের পতনের পর আবার এই হাতেমকেই সেলিম ওসমান সভাপতি করার নির্দেশ দিলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ব্যবসায়ীরা। বর্তমান পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ ও পরিচালক খুরশীদ আলম তনিম গোয়েন্দা তথ্যের বরাদ দিয়ে হাতেমকে ফ্যাসিস্টদের দোসর উল্লেখ করে পদত্যাগ করেন। পরে হাতেমকে সরাতে ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব বরাবর অভিযোগ দেন। সর্বশেষ জনপ্রিয় একটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য বিকেএমইএর সভাপতি হাতেম যে ফ্যাসিস্টদের দোসর এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এরপরপরই নড়েচড়ে বসেছে বিকেএমইএ। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুধীসমাজের আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকেও হাতেম প্রসঙ্গটি আলোচনায় এসেেেছ। চারিদিকের ব্যাপক সমালোচনার মুখে এখন নির্বাচনের পথে হাঁটে বিকেএমইএ। সূত্র জানায়, গঠিত নির্বাচন বোর্ড এবং আপিল বোর্ড ইতিমধ্যেই নির্বাচনের কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সূত্র জানিয়েছে, বিকেএমইএর নির্বাচনের ৮০ দিন পূর্বে অন্তুত বিকেএমইএর নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হয়। কেননা, নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবেন। বর্তমানে আনুমানিক ৬০০ থেকে ৮০০ জনের মতো ভোটার রয়েছে। তবে ভোটার তালিকা সকল কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচন কমিশনার চূড়ান্ত করবেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে বিকেএমইএর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্র। সূত্র জানায়, যেহুতু মার্চে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। আবার ঈদুল আজহায় অনেক ব্যবসায়ী ভোটার হজে¦ যেতে পারেন। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বিকেএমইএর নির্বাচন দেয়ার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি। তবে এখন মূল বিষয় হচ্ছে নির্বাচন কমিশনার গঠন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা। নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব পাওয়ার পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবেন।
২০১০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বিকেএমইএর সভাপতির পদে ছিলেন সেলিম ওসমান। সর্বশেষ ২০১২ সালে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি হন তিনি। তারপর ২০১৪, ২০১৬, ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালে সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ করে সভাপতি হন সেলিম ওসমান। কিছুদিন আগে বিলুপ্ত জাতীয় সংসদে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সদস্য ছিলেন। বিকেএমইএতে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের কারণে টানা পাঁচবার সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ গঠন করা হলেও সংগঠনের উদ্যোক্তারা চুপচাপ ছিলেন। ২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট সেলিম ওসমান পদত্যাগ করলে নির্বাহী সভাপতি থেকে সভাপতি হন মোহাম্মদ হাতেম। পর্ষদে সহসভাপতি থেকে নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পান ন ফজলে শামীম এহসান। এ ছাড়া পরিচালক থেকে সহসভাপতি হন মো. শামসুজ্জামান। এই পর্ষদে পর্ষদে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হিসেবে আছেন মনসুর আহমেদ। সহসভাপতি পদে আরও আছেন অমল পোদ্দার, গাওহার সিরাজ জামিল, মোরশেদ সারোয়ার সোহেল, আখতার হোসেন অপূর্ব ও মোহাম্মদ রাশেদ। মোহাম্মদ হাতেম দীর্ঘদিন ধরে বিকেএমইএর সহসভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালে তিনি নির্বাহী সভাপতি হন। দীর্ঘদিন পরে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিনা নির্বাচনে নেতা নির্বাচনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসবে বিকেএমইএ।