ওসমান দোসরদের রেখেই হচ্ছে হোসিয়ারী নির্বাচন
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
ওসমান দোসরদের রেখেই হচ্ছে হোসিয়ারী নির্বাচন
দীর্ঘ ১৬ বছর ওসমান দোসরদের হাতে জিম্মি থাকা হোসিয়ারী ব্যবসায়ীদের সব চাইতে বড় সংগঠন হোসিয়ারী এসোসিয়েশনে (২০২৫-২০২৭) এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ভোট গ্রহণ হবে। যার বাকি আর মাত্র ১২ দিন। ইতিমধ্যে প্রার্থীরা ভোটরদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ভোট চাইছেন। কিন্তু সদস্য ভোটাররা নির্বাচনে প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেনি। কারণ ব্যবসায়ীরা বিগত দিনে ওসমাদের অন্যতম দোসর যে সজল-কবির প্যানেলে জিম্মি হয়ে হোসিয়ারী ব্যবসায়ীরা যে হারে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সেই সজল ও কবিরদের আস্থাভাজন ও তাদের প্যানেলের সেই পুরনোদের দিয়েই তৈরি হয়েছে দুটি প্যানেল। এখানে দুই প্যানেল মূল নেতৃত্ব স্থানে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী থাকলে ও বাকি সকলেই ছিলো বিগত দিনে ওসমানদের থেকে সুযোগ-সবিধা নেওয়া অনেকেই।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে বদিউজ্জামান বদুর প্যানেল ওসমান প্যানেলের সাবেক প্রায় ৯ জন রয়েছে যারা বিগত দিনে সাধারণ গ্রুপ ও এসোসিয়েট গ্রুপের বড় বড় পদের দায়িত্বে ছিলেন। একই সাথে স্বতন্ত্র ঐক্য মালিক ফোরামের প্যানেলে ৩ জন ওসমানদের মদদপুষ্ঠ হওয়া প্রার্থী রয়েছে যারা বিগত দিনে ওসমাদের সাথে আতাঁত করে ব্যবসায়ী নেতা বনে ছিলেন। যাকে ঘিরে বর্তমানে সদস্য ভোটারদের মুখে হতাশার সাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সকলেই বলছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ও রাহুমুক্ত হচ্ছে হোসিয়ারী সমিতি।
জানা গেছে, গত ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসা পর থেকে বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন ওসমান পরিবার। ওই সময় প্রয়াত নাসিম ওসমানের পর সেলিম ওসমান আঙ্গুলের ইশারায় করা হয় হোসিয়ারি সমিতি কার্যনির্বাহী কমিটি। ২০১৪ সালে সেলিম ওসমানের ইশারায় হোসিয়ারী সমিতির সভাপতি হন নাজমুল আলম সজল। দেওভোগে ছেলে ও শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন সভাপতি ছিলেন তিনি। যিনি বিগত দিনে একগুচ্ছ করে রেখেছিলেন হোসিয়ারী সমিতি নির্বাচন। হয়নি কোন নির্বাচন সিলেকশনের মাধ্যমেই সজল-কবির বারবারই সভাপতি ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এরা ব্যবসায়ীদের উপর বহু মাত্রায় নির্যাতনের খড়গ চাপিয়ে দিতেন।
এ ছাড়া সেলিম ওসমানের নামে বিভিন্ন কৌশলে চাঁদাবাজি, পিকনিকের নামে চাঁদাবাজি, অনুষ্ঠানের নামে চাঁদাবাজি করে সবই শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান ও সজল-কবিরের পকেটে যেত। বিভিন্ন অপকর্মের ভয়ে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর সজল দুবাই পালায়। সজল ও কবির হোসেনের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন সাঈদ আহম্মেদ স্বপন। তিনি এবার যুবদল নেতা ও সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান বদু প্যানেলের প্রার্থী হয়ে সমালোচিত রয়েছেন। ওসমানদের দোসরদের তালিকা তার নাম রয়েছে বলে ভোটাররা অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া বিগত কমিটিতে ওসমানদের বানানো প্যানেলে ছিলেন যারা বিনা ভোটে নির্যাতনের খড়গ রেখে নির্বাচিত হয়েছেন। সাঈদ আহমেদ স্বপন, আলহাজ্ব মোঃ মনির হোসেন, বৈদ্যনাথ পোদ্দার, আলহাজ্ব মোঃ আবদুল হাই, হাজ্বী মোঃ শাহীন হোসেন, আলহাজ্ব নাছিম আহমেদ, আলহাজ্ব মোঃ নাছির শেখ, আলহাজ্ব মোঃ মিজানুর রহমান, পরিচালক (জেনারেল) মোঃ আতাউর রহমান এর ওসমানদের হাতে বানানো প্যানেলে ছিলেন বর্তমানে এরাব বদিউজ্জাম্মান বদুর প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন। একই সাথে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজা রিপনের নেতৃত্বধীন স্বতন্ত্র মালিক ঐক্য ফেরামে সেই ওসমাদের বিগত দিনের প্যানেলে কমিটিতে স্থান পাওয়াদের মধ্যে রয়েছে ৩ জন রয়েছে। মোঃ আবুল বাশার (বাসেত), সুশান্ত পাল চৌধুরী, বাবুল চন্দ্র দাস। যাকে ঘিরে বর্তমানে হোসিয়ারী সমিতির দুই প্যানেলেই ফ্যাসিবাদীদের দোসরদের লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা নিয়ে ব্যবসায়ী ভোটারদের মাঝে সমালোচনার ঝড় বইছে।
এদিকে ওসমান ভোট নিয়ে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতাকালে শাহজালালের পর নাজমুল আলম সজল হোসিয়ারি সমিতির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ওই সময় থেকে হোসিয়ারি একাধিক প্রভাবশালী মালিকরা ওসমানদের আশ্রয় প্রশয়ে চলে যান। এতে করে বিগত ১০ বছরে হোসিয়ারি সমিতির কমিটিতে ওসমানের সমর্থন নিয়ে সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি সহ-সভাপতি সহ পরিচালক পদে আসীন ছিলেন। বিনা ভোটে বেশিভাগ কমিটি নিয়ে ভোটাররা চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এতে ওসমানদের একাধিক ভোট এখন ফ্যাক্টর হয়ে দাড়িয়েছে। যাকে ঘিরে বর্তমানে দুই প্যানেলেই ওসমানদের ভোট সমান আকারে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছু কয়েকজন হোসিয়ারী ব্যবসায়ী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া একটি বক্তব্যের সুর ধরে বলেন যে, পট পরিবর্তনের পর মাথা পালিয়ে গেছে কিন্ত লেজ রয়ে গেছে। যারা বর্তমানে আবারো একটি সিন্ডিকেটের নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করতে নীল নকশা আকঁছেন। যেখানে বিগত ওসমান দোসর অনেকেই রয়েছেন। আমরা যোগ্য নেতৃত্বের হাতে হোসিয়ারী সমিতি তুলে দিতে চাইলে ও বর্তমানে তা আর হয়ে উঠছে না। বর্তমানে ও দুই প্যানেলেই ওসমান দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে।