হোসিয়ারী এসোসিয়েশন নির্বাচনে পুনরাবৃত্তি চাননা ভোটাররা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
বিগত দিনে ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের শাসনামলে নারায়ণগঞ্জের সকল সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণে নেন ওসমান পরিবার। ওসমানীয় সাম্রাজ্য তথা সাবেক এমপি শামীম ওসমান তার বড় ভাই সাবেক এমপি সেলিম ওসমান, প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান। তাদের সাথে ২০১৪ সনের পরে যুক্ত হন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে গুলি চালিয়ে কেজিএফ খেতাব পাওয়া শামীম ওসমানের ছেলে ওয়ন ওসমান। তার পুরো পরিবার মিলে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠন গুলোতে আধিপত্য চালিয়ে চাদাঁবাজি, টেন্ডারবাজি চালিয়েছে।
সেই সাথে ব্যবসায়ী সংগঠন গুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিজেদের লোক বসিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ হোসিয়ারি এসোসিয়েশনে গত সাড়ে ১৫ বছর এককভাবে দখল নিয়ে আধিপত্য চালান ওসমান পরিবার। তাদের অনুগত লোক বসিয়ে এখানে কোন নির্বাচন হতে দেয় নাই। যাকে দিয়ে তারা চাদাঁবাজি করতে পেরেছে তাকেই এখানে বসিয়েছে।
তাছাড়া যখনি নির্বাচন আসতো তখনি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন আশ্বাসের বানী শুনাতেন বিগত সময়ের লুটপাটকারীরা। যদিও তারা লুটপাট করে এখন পালিয়ে রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন পর ৫ আগষ্টের পরে বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি। এই নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের লোকদের বর্তমান প্রার্থীরাও ব্যবসাীয়দের এই দিবে, সেই দিবে নানা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ হচ্ছে যারাই চেয়ারে বসেছে তারাই লুটপাট চালিয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
এদিকে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর হোসিয়ারী ব্যবসায়ীদের আস্থার সংগঠন বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশন ছিলো সন্ত্রাসী ওসমানদের নিয়ন্ত্রণে। যাকে ঘিরে বছরের পর বছর ওসমানদের পদলেহনকারী ছিলেন তারাই প্যানেল সাজিয়ে জিম্মি করে রেখেছিলেন হোসিয়ারী এসোসিয়েশন। কোন যোগ্য প্রার্থী বা ব্যবসায়ীদের পছন্দের কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তাকে ডেকে নিয়ে রাইফেল ক্লাব কিংবা স্টিম রোলার চালানো হত। সেই সাথে ওসমানদের অত্যাচার, নির্যাতনের ভয়ে কেউ অংশ নিতে চাইতেন না।
অপরদিকে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশ হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনকে ঘিরে ভুয়া প্রতিশ্রুতি দেয়া শুরু করেছে প্রার্থীরা। যা নিয়ে হোসিয়ারি ব্যবসায়ী মহলে নানা সমালোচনা তৈরী হয়েছে। দুই প্যানেলের প্রার্থীরা ব্যবসায়ীদের নানা আশ্বাস দিচ্ছেন। বিশেষ করে নির্বাচনে জয়ী হলে বন্দরের শান্তির চরের সরকারি জমি হোসিয়ারী সমিতির অর্ন্তভুক্ত করার কথা বলায় বদু প্যানেল এবং স্বতন্ত্র প্যানেলের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর কড়া সমালোচনা করেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগ শাসন আমলে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন নাজমুল আলম সজল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ওসমান পরিবারের সাথে মিলে ফতুল্লার বিসিকে হোসিয়ারী সমিতির শত কোটি টাকার মূল্যের কয়েকটি প্লট গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরির্বতন করেছে। সেই সাথে তাদের পীর শামীম ওসমান সেলিম ওসমানের দরবারে তারা হাদিয়া পাঠাতেন। তাই এখন যারা বন্দরের শান্তির চরের জমি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তাছাড়া স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থী রেজা রিপন নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে ব্যবসায়ীতের আশ্বাস দিয়ে বলেন, বন্দরের শান্তিচরে আমাদের অনেক জায়গা আছে। নির্বাচিত হলে এই জায়গাগুলো কিভাবে আবার হোসিয়ারীতে অর্ন্তভুক্ত করতে পারি সে ব্যাপারে কাজ করবো। আমাদের কাঞ্চনে যেই জায়গা আছে সেইটা ৫ টা বিসিকের সমান। আগের প্যানেল থাকলে কাঞ্চনের জায়গাটাও ভূমিদস্যুদের কাছে বিক্রি করে দিতো।
আমরা নির্বাচিত হতে পারলে এই জমিটা আমরা হোসিয়ারী মালিকদের কাছে অল্প দামে হস্তান্তর করবো।
কিন্তু হোসিয়ারি ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বন্দরের শান্তির চরের জায়গা হোসিয়ারী জায়গা না। এটা সরকারি জমি। সেখানে তিন নদীর মোহনার মাঝে পরিবেশের ক্ষতি করে কখনো আমাদের হোসিয়ারী কারখানা করতে সরকার অনুমতি দিবেনা। এই কথা নেতারাও জানে। তবুও ভোটারদের মন জয় করতে নানা ভাবে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। কেননা ভোটারদের কাছে এসে তাদের কিছু প্রতিশ্রুতি দিতে তাই তারা এগুলো বলে। তাছাড়া হোসিয়ারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই প্যানেলের প্রার্থীদের কেউ এখনো টেকসই কোনো প্রতিশ্রুতি উপস্থাপন করতে পারেনি। ব্যসায়ীদের ভ্যাট, ট্যাক্স, পুলিশের হয়রানী, সঠিক দাম পরিশোধ না করে কারখানা থেকে ঝুট নিয়ে যাওয়া, রাতে শ্রমিকদের টাকা মোবাইল ছিনতাই সমস্যা সমাধানে তারা কি ধরনের পদক্ষেপ নিবের সেদিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। অপরদিকে রেজা রিপন ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তা আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা সেটি নিয়েও বিস্তর সংশয় রয়েছে।
জেনারেল গ্রুপ পরিচালক পদপ্রার্থী ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন বলেন, ভোটারদের মর্যাদা হচ্ছে প্রার্থীরা তাদের কাছে ভোট চায়। ভোটারদের অধিকার হরণের জন্য সিলিকশনের মাধ্যমে চেয়েছিলো হোসিয়ারী নেতৃত্বে বসিয়ে দিতে। বিগত ১০/১২ বছর যাদের জন্য নির্বাচন হয়নি, তারাও আবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিগত দিনে এমনও প্রার্থীকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। বলেছে তুমি জঙ্গি, তোমাকে মামলা দিয়ে দিবো। হোসিয়ারী ভবনে আটকে রেখেছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। আপনারা ভ্যাট দেন ২২শত টাকা, মানি রিসিট পান ১৫০০, বাকি ৭শত টাকা কার পকেটে যায়? ১ কোটি টাকা এফডিআর রয়েছে, এই টাকা দিয়ে যারা কমজোর মালিক রয়েছেন, তাদের বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করবো। ৭২টি প্লট ফেরত আসলে হোসিয়ারী মালিকদের মাঝে ক্ষুদ্র আকারে দেয়া হবে। প্রত্যেক মার্কেটে আলাদা মালিক সমিতি হবে, সমস্যা সমাধানের জন্য। কারখানা মালিকদের ঝুট সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবস্থা নিবো। কমিনিউটি পুলিশ, থানা পুলিশের টহলের ব্যবস্থা থাকবে। পিকনিকের ব্যবস্থা হবে ও কক্সবাজার ভ্রমণ করবো এটা ওয়াদা। আদতে এসব প্রতিশ্রুতি শুধু কথায় সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি বাস্তবায়িত হবে এটি নিয়ে সর্বমহলেই সংশয় কাজ করছে।
জানা গেছে, আসন্ন হোসিয়ারি এসোসিয়েশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুটি প্যানেলের প্রার্থীরা দিন রাত প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকে ঘিরে কে কার থেকে বেশি ভোট টানবেন তা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সচেতন হওয়ায় তারা সঠিক ব্যক্তিকে বেছে নিবেন বলে জানিয়েছেন।