Logo
Logo
×

সংগঠন সংবাদ

২৯ বছর যাবৎ চেম্বারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন

Icon

লিমন দেওয়ান

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

২৯ বছর যাবৎ চেম্বারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন

নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ ভবন

Swapno

 গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পরে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে শাসন করা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে গেলে। একই সাথে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে একচেটিয়া শাসন এবং শোষন করেছে শামীম ওসমানসহ পুরো ওসমান পরিবার দেশত্যাগ করেন। যাদেরকে গডফাদার, ভন্ডামী, বিশ্ববেহায়াসহ বিভিন্ন উপাদিতে আখ্যায়িত করেছিলেন নগরের রাজনৈতিক বোদ্ধমহল। এ দিকে ওসমান পরিবারের অন্যতম সদস্য সারাদেশে গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমান, তার বড় ভাই সেলিম ওসমান গত ১৭ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স যা দখলে ছিল সেলিম ওসমান তথা ওসমান পরিবারের আজ্ঞাবহ কর্মচারী খালেদ হায়দার খান কাজলের দখলে। এ ছাড়া ১৯৯৬ সনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে এই সংগঠনটির নির্বাচন সর্বশেষ। তখন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এমপি ছিলেন গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমান। এর পরে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে ভোটের মাধ্যমে আর কোন নির্বাচন হয়নি। যাকে ঘিরে ব্যবসায়ী মহলের অভিযোগ বিগত সময়ে ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটি ওসমান পরিবার নির্বাচনকে কুক্ষিগত করে রেখে বিনা ভোটে নিজেদের পছন্দের মানুষকে বসিয়ে লুটপাট, চাদাঁবাজির রামরাজত্ব চালিয়েছে। এদিকে দীর্ঘ ২৯ বছর পর ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পর ওসমান পরিবার পালিয়ে যাওয়ার পর এই সংগঠনটিতে ওসমানদের আধিপত্য মুক্ত হলে ও এই বার ও নির্বাচন পেলো না চেম্বার অব কর্মাস। স্বৈরাচারমুক্ত সংগঠনটিতে এবার ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেতা নির্বাচিত হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।



সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের শাসন আমলে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স যা দখলে ছিল সেলিম ওসমান তথা ওসমান পরিবারের আজ্ঞাবহ কর্মচারী খালেদ হায়দার খান কাজলের। যিনি বিভিন্ন কায়দায় শামীম ও সেলিম ওসমানের নাম বিক্রি করে চেম্বার অব কর্মাসের আওতাভুক্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন নামে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করতেন যেখানে তার সাথে ছিলেন সংগঠনটির আরো দুই সহ-সভাপতি। এর বাহিরে ও ওসমানদের ছত্রছায়ায় বহু সেক্টর নিয়ন্ত্রণে ছিলেন এই কাজল। যাকে ঘিরে শামীম ও সেলিম ওসমানের বিভিন্ন অপকর্মের ভাগ পরে এই কাজলের উপরে। যেই পরিপ্রেক্ষিতে গণঅভুত্থানে পালিয়ে যান তিনি যার কারণে ছন্নছাড়া হয়ে পরে ব্যবসায়ী সংগঠন চেম্বার। যাকে ঘিরে পরের মাসের (৪ সেপ্টেম্বর) চেম্বারের ২০২৩-২০২৫ সালের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল ও সহ-সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া ব্যাক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে  নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামান। পরবর্তীতে যখন দেশে আইনশৃঙ্খলা প্ররিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নির্বাচন পক্রিয়া শুরু হয়। তখনই প্রথমে তারা নির্বাচনী বোর্ড গঠন করে পরে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে মনোনয়ন বিক্রি শুরু করেন। সেই সূত্রে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছিল নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ২০২৫-২০২৭  নির্বাচন। যাকে ঘিরে জেনারেল গ্রুপ, এসোসিয়েট গ্রুপ এবং  ট্রেড গ্রুপের সর্বমোট ১৯টি কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতার জন্য ২৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন জেনারেল গ্রুপ থেকে ১২টি পদে ১৯ জন, এসোসিয়েট গ্রুপের ৬টি পদে ৭ জন এবং ট্রেডগ্রুপের একটি পদে ১ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। যাকে ঘিরে স্বৈরাচার পতনের পর নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ও হোসিয়ারী এসোসিয়েশন নির্বাচনের মতোই উৎসবমুখর নির্বাচনের রূপরেখা দেখলে ও গত ৬ ফেব্রুয়ারী প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কথা থাকলে ও সেদিন নির্বাচন কমিশন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদের ১৯ জন পরিচালক পদপ্রার্থীকে। এর আগে গত বুধবার নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের (২০২৫-২৭) নির্বাচনে ৭ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন বলে জানান নির্বাচন কমিশন।



শেষ সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন যারা তারা হলেন,  জেনারেল গ্রুপের মাসুদুজ্জামান, রতন কুমার সাহা, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. আব্দুল হাই রাজু, মাহফুজুর রহমান খান (মাহফুজ) ও এম নাসির উদ্দীন এবং এসোসিয়েট গ্রুপের মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।



এ ছাড়া ১৯ জন নির্বাচিতরা হলেন, জেনারেল গ্রুপে নির্বাচিত - মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, মোহাম্মদ আবু জাফর, মাহবুবুর রহমান স্বপন, রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, গোলাম মুহাম্মদ কায়সার, মো. সোহাগ, মো. গোলাম সারোয়ার (সাঈদ), মো. মজিবুর রহমান, হোসেন মোহাম্মদ তানিম তৌহিদ, আহমেদুর রহমান তনু, মো. হানিফ মিয়া, আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন।



এসোসিয়েট গ্রুপে রয়েছেন মো. মোরশেদ সারোয়ার, সোহেল আক্তার, খন্দকার সাইফুল ইসলাম, আশিকুর রহমান, আলহাজ্ব মোহাম্মদ জাকারিয়া ওয়াহিদ, মোস্তফা এমরানুল হক। এবং ট্রেড গ্রুপে শ্রী বিকাশ চন্দ্র সাহা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যাকে ঘিরে বর্তমানে সমালোচনার ঝড় বইছে পুরো ব্যবসায়ীদের মাঝে। সকলেই বলছেন, স্বৈরাচার পতনের পরে ও কার ইশারায় এখনো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হচ্ছে কারা ইশারা দিচ্ছেন তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। এদিকে দীর্ঘদিন চেম্বার নির্বাচনবিহীন থাকার পর এবার ভোটের নির্বাচনের আশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা কিন্তু এবার ও ভোটবিহিন নির্বাচন হওয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে ব্যবসায়ী মহলসহ নারায়ণগঞ্জের বোদ্ধামহল।
গত (৮ ফেব্রুয়ারী) ত্বকী হত্যার বিচারহীনতার ১৪৩ মাস পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি অনুষ্ঠানে চেম্বার অব কর্মাসের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন নিয়ে দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ওসমানরা নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে, কিন্তু তাদের দোসররা এখনো নারায়ণগঞ্জে সক্রিয়। চেম্বার অব কমার্সে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়েছে। সেলিম ওসমান এবং মোহাম্মদ আলী যেভাবে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচন করতেন, সেই সংস্কৃতি এখনো চলছে। এসব দোসররা নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম, তদন্ত করুন এবং এসব দোসরদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন।



তিনি বলেন, আপনারা ওসমানদের দোসরদের থামান। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তাদের অপতৎপরতা ঠেকান। না হলে নারায়ণগঞ্জ আবার অশান্ত হয়ে যাবে।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার আজ নিষ্কিয়, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে। ৬ মাস হয়ে গেছে, ওসমানদের একজন দোসরকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। দোসররা ঘুরে বেড়াচ্ছে, খোলস পাল্টে অন্য দল করছে। এসব আপনারা দেখছেন না? এই না দেখার মাসুল আপনাদের দিতে হবে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন