ওসমানদের দেখানো পথেই বিকেএমইএ নির্বাচন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

ওসমানদের দেখানো পথেই বিকেএমইএ নির্বাচন
আওয়ামী লীগ শাসনামলের সময় নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি সেক্টর অপরাধ জগতের মাফিয়া পরিবার ওসমান সাম্রাজ্য দখল করে নিজেদের মত করে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এমনকি ব্যবসায়ী সংগঠনে ওসমান পরিবারের সদস্যরাই নেতৃত্ব দিয়েছে। বিশেষ করে বিগত শাসনামলে ব্যবসায়ী সংগঠন গুলোতে কোন ভোটের নির্বাচন হয় নাই। একক প্যানেলের মাধ্যমে নির্বাচনবিহীন কমিটি হয়েছে। যদিও ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টের পরে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরেও ভোটবিহীন নির্বাচন হচ্ছে ব্যবসায়ী সংগঠনে। যা ওসমান দেখানো পথ হিসেবে অনুসরণ করা হচ্ছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী বিশ্লেষকরা।
এদিকে আগামী মাসের ১০ মে নীট পোশাক ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখানেও ঝুট ব্যবসায়ী হাতেমের নেতৃত্বে ৩৫ পদে ৩৯ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছে। তাদের বাহিরে আরও তিনজন প্রার্থী জমা দিলেও তাদের কোন হাক-ডাক নেই। তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবে কি না তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। এর আগে বিকেএমইএ’র সভাপতি পদটি গত ১৪ বছর আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন প্রভাবশালী ওসমান সাম্রাজ্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রক সেলিম ওসমান। প্রতি নির্বাচনেই তার নেতৃত্বাধীন প্যানেল কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচন ঘোষণা হতো। তিনি পালিয়ে থাকার পরেও সেই একই পথ অনুসরণ করা হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক বাস্তবতা পাল্টালেও ভোটহীন নির্বাচনের এই সংস্কৃতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এবারও বিকেএমইএ’র নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই বছরের গত ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসায়ীদের আরেকটি বড় সংগঠন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাচনে একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে ১৯ জন পরিচালক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন এবং পরে তাদের মধ্য থেকেই সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
অন্যদিকে আজ ১৬ এপ্রিল বিকেএমইএর নির্বাচনের প্রার্থীতা যাচাই বাছাই শেষে তালিকা প্রকাশ হবে। যদিও গণআন্দোলনের পর সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক একটি নির্বাচনের প্রত্যাশা জেগেছিল, বাস্তবে তা হতাশায় রূপ নিয়েছে। গত ৯ এপ্রিল ছিল বিকেএমইএ’র নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদের ৩৫টি পদে নির্বাচন হলেও এবার মনোনয়ন জমা পড়েছে ৪২টি। এর মধ্যে বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বাধীন প্যানেল থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৩৯ জন। ফলে প্যানেলবহির্ভূত প্রার্থী মাত্র ৩ জন। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে ১৯ এপ্রিল চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। এর আগে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগও রয়েছে। আগামী ১০ মে ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারিত রয়েছে। তবে চূড়ান্ত মনোনয়নে যদি প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে, তাহলে আগের মতো এবারও বিনা ভোটে নির্বাচিত হবেন পরিচালকরা। পরে এদের মধ্য থেকেই সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচন করা হবে। জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৫৭২ জন।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিকেএমইএ’র শেষ নির্বাচনেও কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। সেই নির্বাচনে পরপর সপ্তমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, যিনি ১৪ বছর ধরে এ পদে ছিলেন। তখন তার প্যানেলের বাইরে কেউ মনোনয়ন জমা দেননি। অভিযোগ রয়েছে, সেলিম ওসমান ‘নির্বাচন নয়, সিলেকশন’-এর মাধ্যমে নেতৃত্ব বজায় রাখতে পছন্দ করতেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে গেলেও বিকেএমইএ’র নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সেই পরিবর্তনের ছাপ পড়েনি। বরং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মতো এখানেও ভোটবিহীন নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে।
বিকেএমইএ’র বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের বিরুদ্ধেও রয়েছে ‘জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতা ও আওয়ামী লীগ সরকারঘেঁষা অবস্থানের’ অভিযোগ। হাতেম এখনও ‘ওসমান পরিবারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন’ বলেও অভিযোগ একাধিক ব্যবসায়ীর। যদিও গত ২৫ আগস্ট সেলিম ওসমানের পদত্যাগপত্রে হাতেমকে সভাপতি করতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেন। এনিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। যদিও এসব ছাপিয়ে তিনি বিগত ৯ মাস ধরে বিকেএমইএ’র নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন এবং এবারও প্যানেলসহ প্রার্থী হয়েছেন। সেই হিসেবে এবারও বিএেকইএ’তে নির্বাচনের কোন আমেজ নেই।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই টানা সপ্তমবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। নির্বাচনে জয়ী ঘোষণা করা হয় সেলিম ওসমান নেতৃত্বাধীন প্যানেলের ৩৫ জন পরিচালক। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর সংগঠনের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সেলিম ওসমান। এরপর গত বছরের ২৫ আগষ্ট বিকেএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পান ঝুট ব্যাসায়ী মোহাম্মদ হাতেম।