Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মতি চার খলিফা এখনো তৎপর

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ পিএম

দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মতি চার খলিফা এখনো তৎপর

 

 

 

সরকারী চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গডফাদার শামীম ওসমান স্বপরিবারে দেশত্যাগ করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। শামীম ওসমানের দেশত্যাগের সাথে সাথে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী যুবলীগ নেতা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও দুর্নীতির বরপুত্র মতিউর রহমান মতি ও তার সহযোগীরাও এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।

 

 আওয়ামীলীগের ১৫ বছরের শাসনামলে শামীম ওসমানের শেল্টারে মতি একটি বাহিনী গড়ে তুলে বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশে বিদেশে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে মতির নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সেক্টর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কতিপয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। 

 

তবে, ৫ আগষ্টের পর থেকে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে এক ডজনের মত হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মতিউর রহমান মতি নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুমিলপাড়া এলাকার মৃত বাদশা রাজাকারের ছেলে। দূর্নীতির দায়ে তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলাও রয়েছে।

 

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গডফাদার শামীম ওসমানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে স্থানীয় এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জিম্মি করে দীর্ঘদিন ধরে নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সকল অবৈধ আয়ের উৎস এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মতি। মতি বাহিনীর অন্যতম সদস্যরা হলো ক্যাশিয়ার মানিক মাস্টার, ভাগিনা মামুন, মতির সেকেন্ড ইন কমান্ড তেল চোর সেক্টরের মাফিয়া সোর্স আশরাফ উদ্দিন, নাতিন জামাই কিশোরগ্যাং লিডার ও মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী পানি আক্তার।

 

 বিগত ১৫-১৬ বছরে টানা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সাবেক সাংসদ গডফাদার শামীম ওসমানের ছত্রছায়ায় রাজাকার পুত্র সন্ত্রাসী মতিউর রহমান মতি হয়ে উঠেন বেপরোয়া। তার সাথে বেপরোয়া হয়ে উঠেন আরও চার খলিফা। যারা ইতোমধ্যে দূর্নীতি, লুটপাট, জমি দখলসহ অসংখ্য অপরাধ কর্মকান্ড করে রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। মতি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিল, আদমজী ইপিজেড, ওরিয়ন শিল্প পার্ক, ডাচ্ বাংলা পাওয়ার প্লান্ট, সাত ঘোড়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, মেঘনা ও পদ্মা তেলের ডিপো, রেলওয়ের শত কোটি টাকার সম্পত্তি, শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের বালু-পাথর ব্যবসা, মাদক ব্যবসা ও জমির ব্যবসা।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এসব সেক্টর থেকে মতি গত ১৫ বছরে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। যার মোটা অংকের ভাগ পেতেন গডফাদার শামীম ওসমান ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। লুটপাটের সিংহভাগ অর্থ দেশের বাহিরে পাচার করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছেন। দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতে রয়েছে মতি বাহিনীর সেকেন্ড হোম এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

 

স্থানীয়রা জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দেশী-বিদেশী অস্ত্রসহকারে ছাত্রদের উপর হামলার জন্য সামনে থেকে নির্দেশনা দেন এই রাজাকার পুত্র সন্ত্রাসী মতি। শামীম ওসমানের নির্দেশে ছাত্রদের উপর হামলাও করেছেন এই সন্ত্রাসী ও তার বাহিনীর সদস্যরা। এতে সিদ্ধিরগঞ্জসহ সারাদেশে প্রায় তিন শতাধিক মানুষ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, তারা দীর্ঘদিন লুটপাট করে দূর্নীতি করে শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে এ লুটপাট চালিয়ে গেছেন তারা (মতিউর রহমান মতি বাহিনী)। তাদেরকে আর ছাড় দিবে না ৬ নম্বর ওয়ার্ড বাসী। তাদেরকে এবার শক্তহাতে প্রতিহত করবেন এলাকাবাসী।

 

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আপনারা জানেন আন্দোলনের চাপে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে যাবার পর দেশের অধিকাংশ থানায় হামলা, ভাংচুর, অস্ত্র লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে চলেছে। যারা দূর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত সে যে দলেরই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তালিকা তৈরি করেছেন। অন্যায় করে আর কেউ ক্ষমা পাবে না বলেও জানান তিনি।

 

উল্লেখ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের দায়ে দূর্নীতি দমন কমিশন দুদক কথিত যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামি ছিলেন যুবলীগের এই নেতা। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত বছরের ৬ নভেম্বর মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে শুনানি শেষে সন্ত্রাসী মতিকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন