দল পাল্টানো নেতাদের নিয়ে দল ভারী করার হিড়িক
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
সোনারগাঁয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান দল পাল্টানো নেতাদের নিয়েই দল ভারি করছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। যারা দু:সময়ে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির সুবিধা নিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে পকেট ভারি করেছেন, তারাই আবার বিএনপির সুসময়ে নিজেদের খোলস পাল্টিয়ে এখন তারা বিএনপির নেতা বনে যাচ্ছেন। গত ১০ আগস্ট সকালে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান তার নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তিনি বলেন, সোনারগাঁয়ে দু:সময়ে দল পাল্টানো কোনো নেতাকর্মীকে বিএনপির দলে জায়গা দেওয়া হবে না। দল যদি আরও একশতর বছর ক্ষমতায় না আসে তবেও ঐসকল নেতাকর্মীকে দলে জায়গা না দেওয়ার সিধান্ত নিয়েছে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি।
কিন্তু এঘটনার ৪ মাস পার না হতে দেখা যায় সোনারগাঁ উপজেলায় ঠিক এর উল্টো চিত্র। দল পাল্টানো নেতাদের ই সামনে রাখছেন মান্নান। এতে দলের দু:সময়ের ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টির সোনারগাঁ উপজেলার সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির নেতা শহিদ সরকার, গোলজার হোসেন, আতাউর রহমান সহ আরও অনেকে।
জানা যায়, পিরোজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম(বিডিআর)। তিনি জাতীয় পার্টির সোনারগাঁ উপজেলার সহ সভাপতি ছিলেন গত ১০ বছর। এসময় জাতীয় পার্টির সুযোগ সুবিধা নিয়ে ব্যবসা করে নিজের পকেট ভারি করেছেন। গত ৫ আগষ্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তন হওয়ার পর আবারও ছুটে এসেছেন বিএনপিতে। ইতিমধ্যে মেঘনাঘাট এলাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বানিজ্যের নিয়ন্ত্রন নিয়েছেন। এছাড়া পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিএনপির ব্যানারে প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।
দল পাল্টানো আরেক নেতা পিরোজপুর ইউনিয়নের ভবনাথপুর গ্রামের দলিল লিখক শহীদ সরকার। এই দলিল লিখক আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। এরপর জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় দলিল লিখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হয়ে নানা অপকর্মে জড়ায়।
অভিযোগ রয়েছে গত সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি কাওসার হাসনাত ক্ষমতায় আসার পর লাখ লাখ টাকা দিয়ে অবৈধ ভাবে তিনি আবারও দলিল লিখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। শহীদ সরকার বর্তমানে ক্ষমতার লোভে আবারো বিএনপিতে ফিরে এসে নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন।
ক্ষমতা লোভী আরেক নেতা আতাউর রহমান। জাতীয় পার্টির দলীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে সোনারগাঁয়ের টিপুরদীতে এক জনসভায় জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। জাতীয় পার্টির পুরো সময় জুড়ে তিনি ও তার চাচা গাজী আব্দুস সামাদ মোগড়াপাড়া চৌরাস্তার ফলের দোকান সওজের জায়গা দখল করে চাঁদাবাজী করেছেন।
৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আতাউর রহমান এর নেতৃত্বে তার সহযোগী নিজাম,বাবুল সহ আরো কয়েকজন টিপুরদির মেঘনা ইকোনমিক জোনসহ এর আশেপাশের কয়েকটি শিল্প কারখানা দখল করে জুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে নিয়েছেন। এছাড়া মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা পরিবহন সেক্টর ও ফুটপাত দখল করে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজী করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চাদাঁবাজীর অভিযোগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর যৌথবাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। পরে ৩ অক্টোবরে জামিন পান তিনি।
এছাড়া ক্ষমতা লোভী আতাউর রহমান ছিলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ঘনিষ্ট আত্মীয় হওয়ায় আওয়ামীলীগের আমলেও পকেট ভারি করতে কোনো বাধা পোহাতে হয়নি। এছাড়া তার ভাতিজা হৃদয় প্রদান ছিলেন ফ্যাসিবাদ সরকার আওয়ামী লীগের প্রধান দোসর। আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য কাওসার হাসনাত এর সাথে থেকে সব ধরনের অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। একই পরিবারের সদস্যরা একাধিক নেতা একাধিক দলে বিভক্ত হয়েছেন শুধুমাত্র ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখার জন্য।
জামপুর ইউনিয়নের বস্তল এলাকার দল পাল্টানো আরেক নেতার নাম গোলজার হোসেন প্রধান। আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো শাসন আমলে সোনারগাঁয়ে নবনির্মিত এম্পায়ার স্টিল মিলের জন্য নির্ধারিত জায়গা নিরিহ মানুষের জমি হুমকি দামকি দিয়ে দখল করেন। নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে গোলজার হোসেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা ও আড়াইহাজারের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর বাড়িতে ও অফিসে আসা যাওয়া করতেন। এই দুই এমপির সাথে নানা ধরনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল। সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতির সাথে বর্তমানে তিনি সখ্যতা করে আবারো এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন।
উপজেলা বিএনপির ত্যাগী ও প্রবীণনেতারা বলেন, দল পাল্টানো নেতাদের নিয়ে উপজেলা বিএনপি বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ করতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি খুবই দু:খ জনক। আওয়ামীলীগের দোসর জাতীয় পার্টিতে যোগদান করা এসব নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ করার কারনে উপজেলা বিএনপির ত্যাগী ও প্রবীণ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দল পাল্টানো এসব সুবিধা ভোগীদের অবিলম্বে দলীয় পদ সহ তাদের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য তৃণমূল বিএনপিতে দাবী উঠেছে।
এবিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, আমরা দল পাল্টানো কোনো নেতাকে উপজেলা বিএনপিতে ঠাঁই দেওয়া হবেনা। এবিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছে। উপজেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি রফিকুলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে জাতীয় পার্টিতে ছিলো কিন্তু কয়েক বছর আগে বিএনপিতে যোগদান করেছে।