Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

লাগাম টানবে কে

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

লাগাম টানবে কে

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানা এলাকায় শুরু হয় ছিনতাই, ডাকাতি থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড

 গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থ্যানের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয়। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর জনগনের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিলো আর কোনো অন্যায়ের মুখোমুখি হতে হবে না কাউকে। কিন্তু পরিস্থিতি একবারে পাল্টায়নি। গনঅভুত্থ্যানকে পুঁজি করে এক শ্রেনীর মানুষ লেগে পড়ে লুটতরাজে। ৫ আগষ্ট রাতেই নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন অলিগলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তথা বিভিন্ন বাসা বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। যা ছিলো অনাকাঙ্খিত। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে কেউ কেউ নেমে পড়েছিলো চাঁদাবাজী থেকে শুরু করে জবর দখলের দিকেও। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানা এলাকায় শুরু হয় ছিনতাই,ডাকাতি থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কাজে ঠিক মতো যোগদান না করার কারনে এবং অনেকেই চাকুরী করতে অনিহা প্রকাশ করায় থানা গুলোতে অফিসার শূন্যতা দেখা দিয়েছিলো। আর এই সুযোগটিই অনেক দুষ্কৃতিকারী নিয়েছিলো। যদিও দেশের বৃহত্তম দল বিএনপি বা জামায়াত ইসলামীর মতো দল অপরাধীদের অপরাধকে সমর্থণ করেননি । তবুও একদল দিনে রাতে চালিয়ে গেছেন তাদের তান্ডব,লুটপাটসহ নানা অপকর্ম। তবে এর মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছা পোষা অনেকে অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলো। বিশেষ করে ফতুল্লা,সিদ্ধিরগঞ্জ,আড়াই হাজার, রুপগঞ্জের চিত্র ছিলো একেবারেই নাজুক। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছু পাল্টালেও অরাকতা থেমে নেই। বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে চাঁদাবাজী থেকে শুরু করে  জোর জুলুমের রাজত্ব। এছাড়াও ভিন্ন মতের মানুষের উপরও ধর্মের দোহাই দিয়ে চালানো হয়েছে অত্যাচারের স্টিম রোলার। ভিন্নমতকে দমনের সর্বোচ্চ ঢাল ব্যবহার করেছে ধর্মের নামে কিছু মানুষ। ৫ আগষ্টের পরে এখনো ভয়,আতংক,শংকা কাটেনি জেলাবাসীর।

৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ দেশ ছাড়ার খবরের পর নারায়ণগঞ্জ শহরে এক ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করা শুরু করে। এক শ্রেনীর মানুষ দল মত নির্বিশেষে বিভিন্ন ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে হামলা,বাড়িঘরে লুটপাট শুরু করে। যারা কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নয় তাদের বাড়িতেও লুটপাট থেকে শুরু করে অগ্নি সংযোগের মতো ঘটনাও ঘটে। ঐ রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া  থেকে শুরু করে মন্ডল পাড়া সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশনের সড়কে, কয়েক লাখ ইট পাটকেল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পুরো নগর জেনো এক অচেনা নগরে পরিণত হয়ে পড়েছিলো। একই দিন বিকেলে মাসদাইর পুলিশ লাইনে হামলা করে পুলিশের চাল, তেলসহ রেশন লুটপাট করে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ। পুলিশের ডাম্পিং স্টেশনে বিভিন্ন যানবাহনে হামলা ও ভাংচূর চালিয়ে বিভিন্ন মামলায় জব্দকৃত মালামাল লুট করে নেয়া হয় তারা। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র,গুলিসহ মালামাল লুট করে দুর্বৃত্তরা। এরপর পুরো থানা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া শান্তনা মার্কেট,আল জয়নাল টেড্র সেন্টার, ডিআইটি খান সুপার মার্কেটসহ অনন্ত পাঁচটি মার্কেট ভাঙচুর করা হয়। সনাতন ধর্মের কিছু বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও বেশ কিছু অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটে। জেলা পাসপোর্ট অফিসটিকেও পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়।  রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে শহরের নারায়ণগঞ্জের বন্দর সেন্টাল ঘেয়াঘাট,টানবজার ঘাট,৩ নং মাছ ঘাটও দখলে নিয়েছেন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ।

এছাড়াও ১০ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দেড়শতাধিক বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। বাদ যায়নি পৌরসভার দরপত্র এলাকায় একটি খামারের প্রায় ১৭টি গরু লুট পাটেও। তবে এসব ঘটনায় বিএনপির জেলা নেতৃবৃন্দ নিন্দা জানিয়েছেন। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব যারা করেছে তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও নিয়েছেন দলটি। জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকেও এসব ঘটনাকে কোনোভাবে সমর্থণ করা হয়নি। তবে কারা করেছিলো এসব কর্মকান্ড এ নিয়েও নানা  আলোচনা সমালোচনা চলছে জেলা জুড়ে।

১৯ আগষ্ট রাতে সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুরে গ্রামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা,ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা এ সময় ওই ব্যবসায়ীর বাড়ির দরজা-জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় হামলাকারীরা একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পানিতে ফেলে দেয়।
 
১২ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা রেল লাইন বটতলা এলাকায় মাদক সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে মিছিলের উপর গুলি চালানো হয়। এতেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয় অর্ধ শতাদিক ব্যাক্তি। অভিযোগ রয়েছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের সাথে এ হামলারন ঘটনা ঘটে।

৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মোতালেব মিয়া নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তাঁর পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। মারধর করা হয়েছে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে।

২৬ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় শিল্পপতি রেজাউল করিম মালার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রধারীরা মুখোশ পরে জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢোকে। পরে তারা মালার ছেলে ও স্ত্রীর হাত পা-বেধে পিটিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৭ লাখ টাকা ও ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে। ডাকাতদল পালিয়ে যাওয়ার সময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। যাতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফতুল্লার সস্তাপুরের গাবতলা এলাকায় ঢাকা টেক্সটাইলের মালিকের বাড়িতে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

ঢাকা টেক্সটাইলের মালিক রেজাউল করিম মালা জানান, ভোররাতে দোতলা বাড়ির পেছনের জানালার গ্রিল কেটে মুখোশ পড়া ৬ থেকে ৭ জন ডাকাত ঘরে ঢোকে। ডাকাতদের এক জনের হাতে পিস্তল এবং অন্যদের হাতে ধারালো ছুরি ছিলো। এছাড়া ঘরের বাইরেও ডাকাত দলের সদস্যরা পাহারায় ছিলেন।

১ ডিসেম্ববর রাতে নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ অফিসে ডাকাতি, ট্রান্সফরমারসহ বিপুল পরিমাণ তামার লুপ লুট করে ডাকাত দল। সিসি টিভি ক্যামেড়ায় ডাকাতদের হাতে ধারালো অস্ত্র থাকতেও দেখা গেছে। কিল্লারপুল বিদ্যুৎ অফিসের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা রাসেল জানান, রাতে নিরাপত্তাকর্মী ও লাইনম্যানসহ ১৪ জন দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার সাড়ে তিনটার দিকে দেয়াল টপকে ১৬ থেকে ১৭ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল ভেতরে প্রবেশ করে সবাইকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত পা বেঁধে ফেলে। এসময় তাদের সবার সঙ্গে থাকা নগদ ৫২ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন লুটে নেয় ডাকাতরা। পরে ডাকাত দল ট্রাকে করে বড় আকারের একটি ট্রান্সফরমার ও বিপুল পরিমাণ তামার লুপ নিয়ে যায়।

এছাড়াও গত ১০ নভেম্বর রাতে ফতুল্লার পৌষার পুকুর পাড় এলাকায় তামিম সামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে অপর কিশোর গ্যাং সদস্যরা। জুনিয়র সিনিয়রের তর্কে ঐ হত্যাকান্ড সংগঠতি হয়েছিলো বলে জানা গেছে। অপরদিকে গত ৮ ডিসেম্বর ফতুল্লার পাগলা তালতলা এলাকায় নদীর পাড়ে মাদকাসক্তারা সজিব দেবনাথ নামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে মাদকাসক্ত রবি ও  সাজ্জাদ নামের দুই মাদকসেবী। ২০ ডিসেম্বর রাতে ফতুল্লার তক্কার মাঠে কিশোর গ্যাং সদস্যদের দ্বারা আরেক কিশোর গ্যাং সদস্য সিয়াম নিহত হয়েছে।  ২১ ডিসেম্ববর রূপগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর অভিযোগ করায় বীর মুক্তিযোদ্ধা একে এম শামসুল আলমের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। কুপিয়ে আহত করা হয় ৩জনকে।  অপরদিকে বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় বিভিন্ন দলের ব্যানারে ভিন্ন মতকে দমাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে ্কটি পক্ষ। এতেই জনমনে এদ্বগ দেখা দিয়েছে।

তথ্যমতে, ফতুল্লার বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠেছে নতুন নতুন অফিস। এ সমস্ত অফিসের বেশির ভাগই দলীয় ব্যানারে গড়ে উঠেছে। অফিসগুলো থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় ঝুট, সেক্টর থেকে শুরু নানা ধরনের সেক্টর। জেলার প্রতিটি থানা এলাকার চিত্র একই । এভাবে চলতে থাকলে আতংকের পাশাপাশি জনমনে উৎকন্ঠা  বাড়বে বলেও মনে করছেন অনেকে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন