সাইনবোর্ডে এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রতিনিয়ত মামুন বাহিনীর মহড়া
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
সাইনবোর্ডে এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রতিনিয়ত মামুন বাহিনীর মহড়া
ঢাকাÑচট্টগ্রাম লিংক রোড সাইনবোর্ড এলাকা এমন একটি পয়েন্ট যেইখান থেকে প্রায় সারা বাংলাদেশের প্রতিটা জেলায় যেতে পারে এখান থেকে ৫০ লক্ষ মানুষ পরিবহনে চলাচল করে। আর এই সাইনবোর্ড এলাকায় প্রতিদিন কয়েক লাখ পরিবহন এই সড়কটি ব্যবহার করে থাকে এটি একটি স্ট্যান্ড হওয়ার কারণে প্রতিদিনই এই সড়কটি ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়। আর বিশেষ করে এই সাইনবোর্ড সড়কটি ব্যবহার করে যেই সকল পরিবহন তাদের প্রত্যেক পরিবহন মালিক ও ড্রাইভাররা চাঁদাবাজদের হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। জানা গেছে এই সাইনবোর্ড এলাকা থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা উঠাতো। আর এই টাকার ভাগ পেত এলাকার স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক নেতা,রাজনৈতিক মহলের বড় বড় নেতা সহ পুলিশের অসাধু উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ আরো অনেকেই পেতেন এই টাকার ভাগ।
শুধু তাই নয় সাইনবোর্ড এলাকায় প্রায় ৩০০ মতো দোকান রয়েছে যেই সকল দোকানগুলো সড়ক ও ফুটওভার ব্রিজ দখল করেই পরিচালিত হয়ে থাকে আর এই সকল অবৈধ দোকানগুলো থেকে প্রতিদিনই প্রায় ৫০ হাজার টাকা উঠে যা সম্পূর্ণটা চলে যায় চাঁদাবাজদের হাতে। আরও জানা ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিগত ১৫ বছরের বেশি সময় যাবৎ আওয়ামী লীগ ও পরিবহন শ্রমিক লীগ সহ বিভিন্ন নেতাকর্মীরা এই চাঁদার টাকার ভাগ পেতেন। জানা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি ঢাকায় আসা যাওয়া করে সাইনবোর্ড হয়ে। যাত্রীরা ওঠানামা করায় এখানে সব সময় একটা জটলা বেঁধে থাকে। এই সুযোগটাকে কাজে লাগায় চাঁদাবাজরা। র্যাব ও পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে সোর্স কবির, রহিম বাদশা ও কাইল্লা মাসুদের নেতৃত্বে সাইনবোর্ড এলাকায় গড়ে উঠেছিলো চাঁদাবাজদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। দীর্ঘবছর চাঁদাবাজ চক্রটি সড়কের উপর অবৈধভাবে ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা ও সিএনজি স্ট্যান্ড বানিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতো ।
নির্মাণাধীন ফুটওভার ব্রিজের উপর দোকান বসিয়েও চাঁদা আদায় করতো র্যাবের সোর্স পরিচয়দানকারী কবির ও রহিম বাদশা। সিএনজি থেকে চাঁদা তুলছে কাইল্লা মাসুদ। মাসুদের সহযোগী হিসেবে রয়েছে কামাল ওরফে সিএনজি কামাল, জাহাঙ্গীর ওরফে অটো জাহাঙ্গীর ও মঞ্জু। একাধিক সিএনজি, ইজিবাইক ও অটোরিকশা চালকরা জানায়, দীর্ঘদিন যাবত কবির ও কাইল্লা মাসুদের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি চলতো। তাদের নিয়োজিত লোকজন সিএনজি ও ইজিবাইক থেকে দৈনিক ১০০ টাকা ও অটোরিকশা থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না দিলে সাইনবোর্ড এলাকায় গাড়ি নিয়ে আসতে দেওয়া হতো না । শুধু সাইনবোর্ড নয় তারা শিবু মার্কেট পর্যন্ত সড়কের নিয়ন্ত্রণ করতো এই পরিবহন চঁদাবাজরা । তাদেরকে চাঁদা না দিয়ে লিংকরোডে গাড়ি চালানো সম্ভব হচ্ছিলো না।
তবে গত ৫ ই আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরপরই শেখ হাসিনার যে সকল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছিলো তারাও পালিয়ে যায় এতে করে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি সহ নানান অনিয়ম বন্ধ হয়ে যায়। আর চাঁদাবাজি রুখতে বিভিন্ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয়। এতে করে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এই সাইনবোর্ড এলাকার চাঁদাবাজি। তবে সামপ্রতিক সময়ে সাইনবোর্ড এলাকায় চাঁদাবাজি ,দখলদারিকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি দফায় ,দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, সাইনবোর্ড চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, লুটপাটের রাম রাজত্ব কায়েম করছেন কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন। ৫ ই আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতন হওয়ার পর থেকেই ভুইগড়, রুপায়ন , মাহমুদপুর, সাইনবোর্ড, শান্তি ধারা আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি লুটপাট সহ নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন এই মামুন।
মামুনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ফতুল্লা মডেল থানায় বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজি, লুটপাট ও দখলবাজি অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সাইনবোর্ড এলাকার ভূমিদস্যু খ্যাত আওয়ামী নেতা রাজ্জাক বেপারীর আধিপত্য নিতে তার পালিত সন্ত্রাসীদেরকে নিয়ে সাইনবোর্ড এলাকায় বিভিন্ন পরিবহন এবং দোকানপাট দখল করে চাঁদাবাজির মহোৎসব পরিণত করেছেন। ভুইগড় তথা সাইনবোর্ড এলাকায় যারা প্রকৃত বিএনপির রাজনীতিতে সাথে জড়িত তারা মামুনের এরকম কর্মকান্ডে হতভম্ব হয়ে পড়েছেন । তারা মনে করেন মামুন আসলে দলের কেউ নয় দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু ভূমিদস্যু খেত আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রশ্রয় এবং সেই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীদেরকে সাথে নিয়ে এলাকায় গড়ে তুলেছেন একটি সন্ত্রাসী বাহিনী।
প্রতিনিয়তই সাধারণ মানুষকে হুমকি-ধমকি এমনকি টাকা পয়সা না দিলে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিভিন্ন প্রকার হয়রানির অভিযোগ রয়েছে এই মামুনের বিরুদ্ধে এতগুলো অভিযোগ হওয়ার পরেও মামুনের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত আইনশৃঙ্থলা বাহিনী নিরব এতে করে সাধারণ মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ। আরও জানা যায়, ৫ ডিসেম্বর সাইনবোর্ড শান্তিধারা এলাকায় বাইতুল মোকাররম হকার্স মার্কেট নামের একটি মার্কেটে অফিস তালাবদ্ধ করে দেন সন্ত্রাসী মামুন ও তার বাহিনী। খরর নিয়ে আরও জানা যায় শুধু মামুনই নয় আরো বেশষ কয়েকটি গ্রুপ এই সাইনবোর্ড এলাকার চাঁদাবাজ নিয়ন্ত্রন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।