Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় স্ত্রী ফিজাকে হত্যা করেছে মুন্না

Icon

আরিফ হোসেন

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় স্ত্রী ফিজাকে হত্যা করেছে মুন্না

ফাইল ছবি

# ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে মামলা হবে : ওসি ফতুল্লা
# মুন্নার চাচাতো ভাই সন্ত্রাসী তোফাজ্জল কারাগারে
# বিভিন্ন সময়ই আমার বোনকে টর্চার করা হতো : নিহতের ভাই  


ফতুল্লায় কুতুবপুর লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকায় স্বামী মুন্নার হাতে স্ত্রীকে ফিজা খুন হওয়ার একদিন পার হলেও এখনো মামলা নেয়নি পুলিশ। এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসী তোফাজ্জলকে ইতিমধ্যে  ৫৪ ধারায় জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরপরই নিহত ফিজার স্বামী মুন্না ও মুন্নার বাবাসহ পরিবারের বাকিরা পালিয়ে যান। এই ঘটনায় এখনো কোন মামলা না নেয়ায় সমালোচনা তৈরি হয়েছে।



এ বিষয়ে নিহত ফিজার ভাই বলেন, মুন্নার সাথে আমার বোনের বিয়ে হয় ৪ বছর আগে। বিবাহের সময়ই আমার বোন প্রতারণার শিকার হয় । আমার বোনকে বিয়ের আগে ছেলের একাধিক বিয়ে ছিলো, এটা জানানো হয় নাই। বিবাহের পর থেকেই বিভিন্ন সময় আমার বোনকে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। যখন তার একাধিক বিবাহের কথা সামনে চলে আসে তখন এই নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে সংসার করার চিন্তা করে আমার বোন সবকিছু মেনে নিয়ে। পরবর্তীতে দেখা যায়, পরনারীতে আসক্ত হওয়ার কারণে ঝগড়া দিন দিন লেগেই থাকতো।


আমার বোন পর্দাশীল, অনেক স্বামী ভক্ত ছিলো,  সে স্বামীকে ভালোবাসতো স্বামীর সব ভুল মাফ করে দিতো। মুন্না একটা সাইকো টাইপের ছেলে ছিলো বাহির থেকে কিছু করে এসেই ঘরেও এসে আমার বোনকে মারধর করতো। সংসারটা টিকিয়ে রাখার জন্যই সব অত্যাচার সহ্য করতো এবং সবকিছু গোপন রাখতো আমা বোন। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন মেয়েদের সাথে মুন্না পরকীয়ায় লিপ্ত হতো আর সেগুলার বাধা দিতে গিয়েই আজ আমার বোনের এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হলো। আমি অবিলম্বে এই হত্যাকারীর গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।


এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা না নেয়ায় পরিবার ও এলাকাবাসী অনেকটাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।



তবে মামলার বিষয়ে জানতে ফতুল্লা থানা অফিসার ইনচার্জ শরিফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি যুগের চিন্তাকে জানান, ‘এখনো মামলা হয়নি, তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট দেখার পরপরই মামলা হবে। কারণ সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আগে সেই রিপোর্টটা প্রয়োজন তাই মামলা নিতে সময় নিচ্ছি। তবে ইতিমধ্যেই এই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আমরা একজনকে আটক করেছি এবং তাকে ৫৪ ধারায় জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।’



২ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিকেলে নিজ বাড়িতেই স্ত্রী মোসা. ফিজাকে হত্যা করে ঘরের জানালার গ্রিলের মধ্যে ওড়না পেচিয়ে ঝুলিয়ে রাখে স্বামী মুন্না ও তার পরিবার। এই ঘটনায় এলাকাবাসী সন্ত্রাসী তোফাজ্জলকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আদালতে পাঠানো হলে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।  



হত্যাকান্ডের শিকার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী জানান, প্রায়  ৫ বছর পুর্বে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক কুতুবপুর নয়ামাটি এলাকার মনু মিয়ার ছেলে আসাদুজ্জামান মুন্নার সাথে তার একমাত্র মেয়ে ফিজাকে বিবাহ দেন। তাদের সংসারে  ৩ বছরের এক পুত্র সন্তানও রয়েছে। তিনি বলেন, বিয়ের পর থেকেই মুন্নার আচরণ ভাল ছিল না। কারণে অকারণে তিনি তার মেয়েকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো। এ নিয়ে একাধিকবার পারিবারিকভাবে বিচারও হয়েছে। এ নিয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী ও অভিযোগও করা হয়েছিলো মুন্নার বিরুদ্ধে । প্রায় ৬ মাস পুর্বে আমাদের সবাইকে মুন্না বলে যে, পূর্বের মত আর কোন খারাপ আচরণ করবে আমার মেয়ের সাথে। এ কথা বলে আমার মেয়েকে পুনরায় তাদের বাড়িতে নিতে আসেন। আমরা পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে একমাত্র নাতির কথা চিন্তা করে আমার মেয়ে ফিজাকে মুন্নার সাথে তাদের বাড়িতে পাঠাই। বৃহস্পতিবার বিকেলে আমার মেয়েকে মারধর করে ঘরের গ্রিলের সাথে ওড়না পেচিয়ে ঝুলিয়ে রেখে মুন্না, তার মা ও বোনদের নিয়ে এবং আমাদের ৩ বছরের নাতিকে নিয়ে গা ঢাকা দেয়। এ দিকে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক মো.ইমানুর। তিনি লাশের সুরতহাল দেখে লাশটি পোষ্ট মর্টেম করার জন্য নগরীর ১০০ শষ্যা হাসপাতালে পাঠায়।



স্থানীয়রা বলেন, অত্র এলাকার সবচেয়ে খারাপ পরিবার হিসেবেই পরিচিত মুন্নাগং। মুন্নার বাবা মনু মিয়া একজন চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী, তার চাচা চুন্নু ও রানা মোল্লাসহ গোটা পরিবার কুখ্যাত সন্ত্রাসী পরিবার। গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে ভুরিভুরি মামলা আছে।  গত সপ্তাহে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মাহমুদ রনি ১০০ কেজি গাজাঁসহ মুন্নার অপর চাচাতো ভাইকে গ্রেফতার করেছিলো। আমরা চাই গৃহবধূ ফিজা হত্যাকান্ডে তার স্বামী মুন্না ও তার পরিবারকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হোক।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন