Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

শ্বশুর বাড়ির লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে হত্যা করে ফিজাকে

Icon

আরিফ হোসেন

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

শ্বশুর বাড়ির লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে হত্যা করে ফিজাকে

আসামি স্বামী আসাদুজ্জামান ওরফে মুন্না (৩১), নিহত লামিয়া আক্তার ফিজা , আসামি তোফাজ্জাল হোসেন (৪৮), চুন্নু (৫০), রানা (৪০)

ফতুল্লায় স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ার স্ত্রী লামিয়া আক্তার ফিজাকে সংঘবদ্ধ হয়ে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনায় নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ৯। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বাবা মোহাম্মদ  আলী ১২ জনের নাম উল্লেখ করেন এরা হলেন, ১. নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার স্বামী আসাদুজ্জামান ওরফে মুন্না (৩১), পিতা মনির হোসেন মনু ২. আকলিমা বেগম (৫২), স্বামী মনির হোসেন মনু, ৩. তোফাজ্জাল হোসেন (৪৮), পিতা-পুইক্কা, ৪. চুন্নু (৫০), পিতা-পুইক্কা, ৫. মুন্নী,স্বামী মুরাদ ৬.মনির হোসেন ওরফে মনু (৫৮) ৭. আব্দুর রশিদ ওরফে মিঠুন (৫০, পিতা আম্বর আলী, ৮.নূর নাহার (৪৪), স্বামী তোফাজ্জল হোসেন, ৯. রাজ্জাক (৪৫), পিতা আমিরউদ্দিন, ১০. রানা (৪০), পিতা তালেব হোসেন, ১১. রিপন (৪৪), পিতা মৃত আম্বর আলী, ১২. গোলাম রহমান জিসান (২৪), পিতা উজ্জল।



তবে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রথমে মামলা না হলেও সোমবার (৬ জানুয়ারি) ফরেনসিক রিপোর্টে উঠে আসে এটা আসলে কোন আত্মহত্যা ঘটনা নয় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। নিহত ফিজার শরীরে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।  আর এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘবদ্ধ হয়ে করা হয়েছে ।  ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই মামলা নেয় ফতুল্লা থানা পুলিশ।



এ বিষয়ে ফতুল্লা অফিসার ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম যুগের চিন্তাকে জানান, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে। ইতিমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ৩ নং আসামী তোফাজ্জলকে ঘটনার দিনই গ্রেফতার করি। বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।



লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী মামলায় উল্লেখ করেন, আমার মেয়ে লামিয়া আক্তার ফিজা (২১) কে বিগত ১৪/০৮/২০২০ ইং তারিখে ১নং আসামী আসাদুজ্জামান ওরফে মুন্না এর নিকট ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিবাহ দেই। বিবাহের পর থেকেই ১নং আসামী পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। আমার মেয়ে তাকে বাধা নিষেধ করায় তাকে মারধর করিত। তারপরও আমার মেয়ে সংসার করিয়া আসিতেছিল। সংসার করাবস্থায় দাম্পত্য জীবনে মেয়ের গর্ভে একটি পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করে। নাম মোরসালিন বয়স ০২ বৎসর। সন্তান হওয়ার পর ১নং বিবাদী পরকীয়া চালাইয়া আসিতেছিল। আমার মেয়ে অন্যান্য বিবাদীদের নিকট পরকীয়ার বিষয়টি জানাইয়া বিচার চাহিলে তাহারা বিচার না করিয়া বরং আমার মেয়ে কে গালিগালাজ করিত। বিষয়টি আমার মেয়ে আমাকে জানানোর পর পারিবারিক ভাবে বেশ কয়েকবার শালিস মিমাংশা হয়। তারপরও ১নং বিবাদী সংশোধন না হইয়া বরং আমার মেয়েকে সময় না দিয়া অধিক রাত্রে বাসায় ফিরত। এই নিয়ে তাদের মধ্যে মন মলিন্যে চলিয়া আসিতেছিল। আমার মেয়ে তার সন্তানের ভবিষ্যত এর দিক বিবেচনা করিয়া মারধরের বিষয়টি গোপন রাখত। অনুমান ০১ সপ্তাহ পূর্বে আমার মেয়ে পরকীয়ায় বাধা দেওয়ার কারনে অন্যান্য বিবাদীদের ইন্দনে ১নং আসামী আমার মেয়েকে মারধর করে। বিবাদীরা আমার মেয়েকে হুমকি দিত যে মারধরের ঘটনা আমাদের জানাইলে জীবনের তরে শেষ করিয়া ফেলিবে। যে কারনে আমার মেয়ে ভয়ে সমস্ত ঘটনা গোপন রাখত। ইং ০২/০১/২০২৫ তারিখ আমার মেয়ে লামিয়া আক্তার ফিজা আমাদের বাসায় আসার কথা ছিল কিন্তু না আসায় তার জন্য অপেক্ষা করিতে থাকি। ইং ০২/১/২০২৫ তারিখ বিকাল অনুমান ৪.৫০ ঘটিকার সময় বিবাদীদের বাড়ীর পাশে এক ব্যক্তি আমার বড় ভাই সেন্টুর মোবাইলে ফোন দিয়া জানায় যে উক্ত বিবাদীরা আমার মেয়েকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করিয়া তাদের ঘরের মধ্যে আটক করিয়া রাখিয়াছে। উক্ত সংবাদ পাইয়া আমি আমার স্ত্রী ফাহিমা বেগম (৩৮) সহ পরিবারের লোকজন ইং ০২/১/২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৫.৩০ ঘটিকার সময় ফতুল্লা থানাধীন পূর্ব লামাপাড়া নয়ামাটি মার্কাস মসজিদ সংলগ্ন ১নং বিবাদীর বাড়ীতে গিয়া দেখতে পাই ১নং বিবাদীর রুমে জানালার গ্রিলের সহিত আমার মেয়ে লামিয়া আক্তার ফিজা গলায় ওড়না ও গামছা দ্বারা বাধা পা মাটিতে ডান হাতের আঙ্গুলে এবং বাম হাতের বাহু সহ গলায় লালচে দাগ মৃত অবস্থায় ঘাড় বাকোনো ঝুলিতেছে। পুলিশ সংবাদ পাইয়া বিবাদীদের বাড়ীতে আসে এবং আমার মেয়ের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত শেষে মৃত দেহের ময়না তদন্ত করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করে। উক্ত বিবাদীরা একই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ০২/০১/২০২৫ তারিখ বিকাল অনুমান ৪.৫০ ঘটিকা হইতে সন্ধ্যা অনুমান ০৫.৩০ ঘটিকার মধ্যে যে কোন সময় আমার মেয়েকে শ্বাসরোধ সহ ডান হাতের আঙ্গুলে ও বাম হাতের বাহুতে আঘাত করিয়া হত্যা করিয়াছে।



জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ফতুল্লায় কুতুবপুর লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকায় স্বামী মুন্না তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করে শিশু সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গেছে । বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজ বাড়িতেই মুন্না ও তার পরিবাবের লোকজন মিলে সংঘবদ্ধভাবে  তার স্ত্রী মোসা.ফিজাকে হত্যা করে ঘরের জানালার  মধ্যে ওড়না পেচিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। তবে এই ঘটনায় এলাকায় রোষানলে পরে তোফাজ্জল এমনকি এলাকাবাসী তখনই পুলিশের হাতে তুলে দেয় ভূমিদস্য সন্ত্রাসীকে ।  তোফাজ্জলের ভাই সন্ত্রাসী চুন্নু বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের সময় নির্বিচারে গুলি করে হত্যাকাণ্ড ঘটায় । শুধু তাই নয়  তার বিরুদ্ধে ছাত্র হত্যার মামলাও রয়েছে। আরও জানা যায় এই চুন্নু, তোফাজ্জল এলাকায় চিহ্নিত ভূমিদস্য হিসেবে পরিচিত সে বিগত দিনে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের আস্থাভাজন সন্ত্রাসী শাহ নিজামের ঘনিষ্ট হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তবে ৫ আগস্টের পর শামীম ওসমান, শাহ নিজাম পালালেও এই কুখ্যাত তোজাজ্জল ভোল পাল্টে নিজেকে বিএনপি দাবি এলাকায় আবার অপকর্ম করতে থাকে।



হত্যাকান্ডের শিকার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী জানান, প্রায়  ৫ বছর পুর্বে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক কুতুবপুর নয়ামাটি এলাকার মনু মিয়ার  ছেলে আসাদুজ্জামান মুন্নার সাথে তার একমাত্র মেয়ে ফিজাকে বিবাহ দেন। তাদের সংসাওে মোরসালিন নামে ৩ বছরের এক পুত্র সন্তানও রয়েছে। তিনি বলেন,বিয়ের পর থেকেই মুন্নার আচরন ভাল ছিলনা। কারনে অকারনে তিনি তার মেয়েকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো। এ নিয়ে একাধিকবার পারিবারিকভাবে বিচারও হয়েছে। এ নিয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় সাধারনডায়েরী ও অভিযোগও করা হয়েছিলো মুন্নার বিরদ্ধে । প্রায় ৬ মাস পুর্বে আমাদের সবাইকে মুন্না বলে যে,পুর্বের মত আর কোন খারাপ আচরন করবে আমার মেয়ের সাথে। এ কথা বলে আমার মেয়েকে পুনরায় তাদের বাড়িতে নিতে আসেন। আমরা পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে একমাত্র নাতি মোরসালিনের কথা চিন্তা করে আমার মেয়ে ফিজাকে মুন্নার সাথে তাদের বাড়িতে পাঠাই। অদ্য বৃহস্পতিবার বিকেলে আমার মেয়েকে মারধর করে ঘরের গ্রিলের সাথে ওড়না পেচিয়ে ঝুলিয়ে রেখে মুন্না তার মা ও বোনদের নিয়ে এবং আমাদের ৩ বছরের নাতি মোরসালিনকে নিয়ে গা ঢাকা দেয়।

বিষয়ে নিহত ফিজার ভাই বলেন, মুন্নার সাথে আমার বোনের বিয়ে হয় ৪ বছর আগে। বিবাহের সময়ই আমার বোন প্রতারনার শিকার হয় আমার বোনকে বিয়ের আগে ছেলের একাধিক বিয়ে ছিলো এটা জানানো হয় নাই। বিবাহের পর থেকেই বিভিন্ন সময় আমার বোনকে তারা শারীরীক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতো। যখন তার একাধিক বিবাহের কথা সামনে চলে আসে তখন এই নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে সংসার করার চিন্তা করে আমার বোন সবকিছু মেনে নিয়ে। পরবর্তীতে দেখা যায় পর নারীতে আসক্ত হওয়ার কারনে ঝগড়া দিন দিন লেগেই থাকতো। আমার বোন পর্দাশীল ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করতো এবং অনেক স্বামী ভক্ত ছিলো. সে স্বামীকে ভালোবাসতো স্বামীর সব ভূল মাফ করে দিতো। মুন্না একটা সাইকো টাইপের ছেলে ছিলো বাহির থেকে কিছু করে এসেই ঘরেও এসে আমার বোনকে মারধর করতো। সংসার টা টিকিয়ে রাখার জন্যই সব অত্যাচার সহ্র করে থাকতো এবং সবকিছু গোপন রাখতো। হয়তো ভেবেছিলো সন্তার হওয়ার পর হয়তো ঠিক হয়ে যাবে কিন্ত হয়নি প্রতিনিয়তই বিভিন্ন মেয়েদের সাথে তার পরকীয়ায় লিপ্ত হতো আর সেগুলার বাধা দিতে গিয়েই আজ আমার বোনের এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হলো। আমি অবিলম্বে এই হত্যাকারীর গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

অপরদিকে গৃহবধু ফিজাকে হত্যা করে ঘরের জানালার গ্রিলের সাথে ওড়না পেচিয়ে ঝুলিয়ে রাখার পর স্থানীয়রা বলেন, অত্র এলাকার সবচেয়ে খারাপ পরিবার হিসেবেই পরিচিত মুন্নাগং। মুন্নার বাবা মনু মিয়া একজন চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী,তার চাচাতো চুন্নু ও রানা মোল্লা একাধিক মামলা রয়েছে। গত সপ্তাহে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মাহমুদ রনি ১০০ কেজি গাজাঁসহ মুন্নার অপর চাচাতো ভাইকে গ্রেফতার হয়। আমরা চাই গৃহবধু ফিজা হত্যাকান্ডে তার স্বামী মুন্না ও তার পরিবারকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হোক।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন