Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

হিরণ-লিটন বন্দরের রাবণ

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

হিরণ-লিটন বন্দরের রাবণ

বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটন

গত বছরের জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তোপের মুখে পরে পদত্যাগ কওে পদশ ছাড়েন সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরথেকেই নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলাকে লুটপাট-চাঁদাবাজি, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন, টাকার বিনিময়ে ভূমিদসূতার মহোৎসবে পরিণত করেছেন সেই উপজেলার সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটন। যাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বন্দর উপজেলার আওতাধীন মদনপুরের শিল্প মালিকরা। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বন্দর উপজেলা জুড়ে যে অত্যাচার লক্ষ্য করা যায়নি এর থেকৈ বেশি গত ৫ মাস যাবৎ এই হিরণ ও লিটনের নেতৃত্বে বন্দরজুড়ে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, পটপরিবর্তনের শিল্পকারখানায় চাঁদাবাজি, ডিস ব্যবসা, ইন্টারনেট ব্যবসা দখল, মদনপুরসহ এর আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নে থাকা বিভিন্ন গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরী থেকে ওয়েস্টিজ ও ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন মালিক সমিতি দখল, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভূমিদূস্যতা, বালু মহল, স্কুল কমিটি নিয়ে পায়তারা, রাস্তার টেন্ডার বাজি, মদনপুর স্ট্যান্ডের দুই লাইনের অটো থেকে চাঁদাবাজি, সেখানকার দোয়েল ও স্বদেশ বাসের কাউন্টার থেকে মাসিক ১ লাখ টাকা চাঁদাবাজি, মোটা অংকের টাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের শেল্টার দেওয়াসহ ডজনে ডজনে অভিযোগ রয়েছে এই হিরণ ও লিটনের বিরুদ্ধে। যেই অভিযোগ শুধু বন্দর বা নারায়ণগঞ্জে সীমাবদ্ধ নেই। এই হিরণ ও লিটনকে রুখবে কে? এমনটাই বলছে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সকলেই দাবী করছেন এদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শীগ্রই বন্দর উপজেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দালালমুক্ত কমিটি গঠনের আবেদন জানিয়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
 
সূত্র জানিয়েছে, মদনপুর দেওয়ানবাগ এলাকার চিহ্নিত জমির দালাল ছিলেন এই মাজহারুল ইসলাম হিরণ। জমির দালালি ও অবৈধ টাকায় ভর করে বনে গেছেন উপজেলঅ বিএনপির সভাপতি একই সাথে এক সময়ের ঔষধ কোম্পানীর সেলসম্যান থাকা এই হারুন অর রশিদ লিটন বর্তমানে বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বনে গেছেন। যা নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। এদিকে গত ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করলে টানা ১০/১৫ দিন বন্দরে গড়ে ওঠা শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আগুনে পোড়ানোর হুমকি-ধমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ শতাধিক স্থানে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে প্রায় শত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। বিশস্ত সূত্র জানিয়েছে, গত (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কামতাল এলাকায় অবস্থিত এসএইচকে লেভেল ফ্যাক্টরী থেকে জোর পূর্বক ঝুট ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া সেখানকার ইউনাইটেড ফ্যাশন গার্মেন্টস থেকে ঝুট ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তা ছাড়া মদনপুরে থাকা প্রায় অর্ধশত গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরী বর্তমানে এই মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও হারুন অর রশিদ লিটনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এদিকে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে কেওঢালা এলাকায় অবস্থিত পারটেক্স বাড মিলের বাউন্ডারি ভেঙ্গে ৩২ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ। গত (৬ আগষ্ট) কুমিল্লার সংসদ সদস্য শামীম আহম্মেদের মালিকাধিন উপজেলা মদনপুর ইউপির কেওঢালা এলাকায় অবস্থিত এসকিউ ক্যাবল তৈরির ফ্যাক্টরীতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজারুল ইসলাম হিরণের ছত্রছায়ায় জেলা জাতীয় পার্টির নেতা জাকার মোল্লা ও তার ভাই শাহজাহান মোল্লা সাজা, মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুন, সহসভাপতি শাহজাহান, গোলাপ, মাহবুবসহ ২০/২৫ জনের একটি দল হামলা চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ। এ সময় নগদ ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন কর্তৃপক্ষ।


একই কায়দায় একই এলাকায় অবস্থিত পোলার গে¬াব ফ্যাক্টরী থেকে ২ লাখ টাকা ও বেঙ্গল গেরেট ওয়েল, টাইলসের গোডাউন থেকে ৬৫ হাজার টাকা ও দুইটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। তা ছাড়া চুনা পাথরের ফ্যাক্টরী থেকে ৫ লাখ, আমজাদ ডাক্তারের বাসায় হামলা ও লুটপাট, একই সাথে ধামগড়ের বাবু মেম্বারের উপরে হামলা চালিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করলে চাঁদা দিতে না চাইলে তার বাসায় হামলা ও তাকে চারটি মামলার আসামী করা হয় বলে জানা গেছে। আরো রয়েছে, ধামগড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও এএসআরএম এর ঠিকাদার শরীফ হোসেনের কাছ থেকে ১০ টাকা হাতিয়ে নেয় হিরণ ও লিটন। ধামগড় ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার ও শেখ রাসেল ক্রীড়া একাডেমীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ভয়-ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নেন এই হিরণ ও লিটন। তা ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ধামগড় ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বারের কাছ থেকে সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান মাকসুদ ৫ লাখ ও মাজহারুল ইসলাম হিরণ ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। ১৩ লাখ টাকার বিনিময়ে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম আহম্মেদকে মামলা থেকে অবহৃতিসহ ছাত্রলীগ নেতা অহিদুজ্জামান, ধামগড় ইউনিয়নের মেম্বার আইয়ুব আলী, ধামগড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শরীফ হোসেন, জাতীয় পার্টি নেতা বাদলকে বিএনপিতে ভিড়ানোর পায়তারা  চলমান এ ছাড়া ও আরো বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিজ এলাকায় পুনর্বাসনের অভিযোগ রয়েছে।


মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ধামগড় ইউপির হালুয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বন্দর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সম্পাদীকা শামীমা আক্তারকে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গত ৩ রা  ডিসেম্বর  ইউএনও  বরাবর অভিযোগ দায়ের করে শিক্ষার্থীরা। এ প্রেক্ষিতে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ১০ ডিসেম্বর প্রধান শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করার পর প্রধান শিক্ষিকাকে আবরো পুনর্বহাল করতে চাপ প্রয়োগ ও হুমকির অভিযোগ রয়েছে মাজহারুল ইসলাম  হিরণের বিরুদ্ধে। এদিকে ধামঘর ইউনিয়নের এক শিল্পপতি সাদেক আলীর একটি জায়গা ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে দখল করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই হিরণ ও লিটনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মদনপুরের দুই পাশের স্ট্যান্ডের প্রায় ৫০০/৬০০ সিএনজি থেকে নিয়মিত ৫০ টাকা করে চাঁদাবাজির অভিযোগসহ মদনপুর স্ট্যান্ডে থাকা স্বদেশ ও দোয়েল বাস কাউন্টার থেকে মাসিক ১ লাখ টাকা চাঁদাবাজি, তা ছাড়া সেখানকার একতা মার্কেটে কোন সদস্য পদ না থেকে ও বিএনপির সভাপতি পদের জোর খাটিয়ে সেই মার্কেটের সভাপতি বনে গেছেন। যা নিয়ে কিছুদিন পূর্বে নারায়ণগঞ্জ কোট প্রাঙ্গনে মদনপুর এলাকার কবিল বাহিনীর দ্বারা মারধরের শিকার হয়েছিলেন এই সভাপতি হিরণ। বর্তমানে শামসুজোহা স্কুল, মালিবাগ স্কুল, শেখ জামাল স্কুলে মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে কমিটি গঠনে পায়তারায় মগ্ন রয়েছেন। আর এছাড়া বর্তমানে কলাগাছিয়া ইউনিয়নে রাস্তার টেন্ডার নিয়ে কয়েকদিন যাবৎ হিরণ-লিটন গ্রুপ ও বন্দর উপজেলা যুবদলের একটি গ্রুপের সাথে বাকবন্ডিতা নিয়ে সমস্যা চলমান যা যে কোন সময় সংঘর্ষে মোড় নিতে পারে। এভাবেই বিভিন্ন কায়দায় বন্দর উপজেলা জুড়ে বাণিজ্যে চালিয়ে যাচ্ছে হিরণ ও লিটন। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ও সচেতন মহল।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন