Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

হিরণ-লিটনের বহিস্কারের দাবি জোরালো হচ্ছে

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

হিরণ-লিটনের বহিস্কারের দাবি জোরালো হচ্ছে

বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদ লিটন

সরকার পরির্বতনের পর নারায়ণগঞ্জে বন্দরে শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন সেক্টরে ঝুট সন্ত্রাস, ভূমিদুস্যতা, দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির হাত বদল হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থকতে তাদের দলীয় সন্ত্রাসীরা বন্দরে বিভিন্ন সেক্টরে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে চাঁদাবাজি করত। তাদের পতনের পর এবার বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে নব্য সন্ত্রাসী বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদ লিটন তাদের বাহিনী দ্বারা বিভিন্ন্ শিল্প-কারখানাগুলো দখল ও চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ সেই অঞ্চলের শিল্প-কারখানার মালিকদের। তা ছাড়া এই হিরণ ও লিটন পদের দাপট দেখিয়ে বন্দরবাসীকে নাভিশ^াস অবস্থায় ফেলেছে। বর্তমানে বন্দরে তাদের লুটপাট-চাঁদাবাজি এবং অত্যাচারের মাত্রা এতোটাই বেড়ে গেছে যে বর্তমানে নিজ দলীয় বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা এদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। যাকে ঘিরে কিছুদিন পূর্বে বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদ লিটন পট পরিবর্তনের পর যে হারে লুটপাট, দখলদারিত্বসহ বহু অপকর্ম পরিচালিত করেছে সেই অপকর্মের প্রমানসহ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাড. রুহুল কবির রিজভীর মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন বন্দর উপজেলার আওতাধীন ধামঘর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহসিন, মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহিন শাহ মিঠু, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহম্মেদ, বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানাসহ আরো ৪৩ জন বন্দর বিএনপির নেতাকর্মী। যা নিয়ে বর্তমানে বন্দর উপজেলা জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। বর্তমানে দ্রুত এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বহিস্কারের দাবিতে জোরালো হচ্ছে।



এ দিকে সূত্র জানিয়েছে, বন্দর উপজেলা জুড়ে প্রায় ৬০/৭০টি তৈরি পোশাক ও নিটিং কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার ঝুট কাপড়, সুতার কোন, কার্টুনসহ বিভিন্ন ওয়েস্টেজ পণ্যের ব্যবসা এত দিন নিয়ন্ত্রণ করতেন বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের নামে কিছু লোক ঝুটসহ অন্যান্য পণ্য কারখানা থেকে বিনা মূল্যে বা নামমাত্র দামে নিয়ে যেতেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপি নেতা হিরণ ও লিটন ব্যবসায়ীদের হুমিক-ধমকি দিয়ে এই ঝুট ও ওয়েস্টিজ সেক্টর দখলে নিয়ে নেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ শতাধিক স্থানে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে প্রায় শত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। তা ছাড়া এসএইচকে লেভেল ফ্যাক্টরী ইউনাইটেড ফ্যাশন গার্মেন্টস, মদনপুরে থাকা প্রায় অর্ধশত গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরী বর্তমানে এই মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও হারুন অর রশিদ লিটনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তা ছাড়া বন্দর উপজেলা জুড়ে হেন কোন চাঁদাবাজি-লুটপাট নেই যেখানে তিনি করেন নাই। তা ছাড়া বিভিন্ন জায়গা দখল, কাউন্টার দখল করে চাঁদাবাজিসহ বহু অপকর্মের বিরুদ্ধে বর্তমানে বন্দরে একাট্টা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। সকলেই দাবি করছে দ্রুত যেন বন্দরে বিএনপিকে বদনাম মুক্ত করা যায়। এদিকে পদ বাচাঁতে নানা জায়গায় ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করছেন এই কথিত দুই নেতা হিরণ ও লিটন।



এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দাবী করা তাওলাদ হোসেন যুগের চিন্তাকে বলেন, বন্দর উপজেলা বিএনপিতে বর্তমান যে দুইজন নেতৃত্বে রয়েছে হিরণ ও লিটন এরা বন্দর উপজেলাবাসীকে জিম্মি করে রেখেছেন। তারা উপজেলার আওতাধীন প্রত্যেকটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, হুমকি-ধমকি দিয়ে গার্মেন্টস এর মালামাল নিয়ে আসছেন।



তিনি বলেন, গত ৫ আগষ্টের পর হিরণ ও লিটন দলের পদপদবির দাপটে চাঁদাবাজি, লুটপাট ও জমিদখল সহ বন্দরে উত্তরাঞ্চলে এক নৈরাজ্যের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও মদনপুর এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারি যুবলীগ নেতা অহিদুজ্জামান অহিদ ও তার লোকজন একাধিক আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা  হিরণের ছত্রছায়ায় এখন বহাল তবিয়তে।  বর্তমানে আমরা তাদের বিরুদ্ধে দলীয় হাইকমান্ডের নিকট অভিযোগ করেছি। বন্দর উপজেলায় বিএনপিকে দূর্নাম থেকে রক্ষা করতে এদের দ্রুত বহিস্কারের দাবি জানাচ্ছি।



মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহম্মেদ যুগের চিন্তাকে বলেন, বন্দর উপজেলায় মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটনের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের বিএনপি নেতা বানানো অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া লুটপাট- দখল ও চাঁদাবাজি সহ নানা অভিযোগ রয়েছে তা প্রকাশ্যে। বর্তমানে বন্দরে বিএনপির নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, লুটপাটে ধ্বংস করে ফেলছে। তাদের বিরুদ্ধে দলে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা না করলে আমরা দ্রুত মাঠে নামতে বাধ্য হবো। কারণ বিএনপি গণমানুষের দল, এই দলের নাম ব্যবহার করে যেভাবে বন্দরে হিরণ ও লিটন অপকর্ম করছে সেখান থেকে বন্দরবাসী বিএনপির উপরে ত্যক্ত হয়ে পরছেন যা আমাদের আগামীর নির্বাচনে মাইনাস পয়েন্ট হতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে পদের দাপটে যারা অপকর্ম পরিচালনা করছেন তারা যে দলের হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলবো।



ধামঘর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহসিন যুগের চিন্তা বলেন, বর্তমানে এই হিরণ ও লিটন বন্দরের ত্রাস। এরা আওয়ামী লীগের সাথে মিলে বিএনপিকে ধ্বংসের মিশনে মেনেছে দ্রুত এদের বহিস্কারের দাবি জানাচ্ছি।



মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহিন শাহ মিঠু যুগের চিন্তাকে বলেন, বন্দরে হিরণ ও লিটন মানেই বলা চলে, আওয়ামী লীগ। কারণ তাদের বর্তমানে মূল কাজই হচ্ছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগকে আবারো পূর্নবাসন করা যা দলের সাথে পুরো রূপে বেঈমানি বলা চলে। আর বর্তমানে হিরণ ও লিটন যা শুরু করেছে বিএনপি তাদের ‘বাপের দল’ সেই হিসেবেই তারা বন্দরে বিএনপিকে উপস্থাপন করছে।



তিনি বলেন, বর্তমানে তারা দলের দূর্নাম ছড়াচ্ছে। যার মাধ্যমে আমরা বাসা থেকে বেড় হলেই মানুষ আমাদের নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলছে যা আমরা কখনো শুনবো বলে আশা করিনি। কিন্তু এই হিরণ ও লিটনের অপকর্মের কারণে শুনতে হচ্ছে যে কারণে দলের হাইকমান্ডের নিকট আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত তা কার্যকর হবে।



কলাগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হুমায়ূন কবির যুগের চিন্তাকে বলেন, গত ৫ আগষ্টের পর হিরণ ও চাঁদাবাজি, লুটপাট ও জমিদখলসহ বন্দরে ব্যবসায়ী সমাজ থেকে সকল পর্যায়ের লোকদের নাভিশ^াস বানিয়ে ফেলেছে। যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। আর উনি বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্যে দেন যে উনার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই। মদনপুর, ধামঘর, কলাগাছিয়া, মুছাপুরের বিভিন্ন চায়ের দোকানে ও তাদের নিয়ে সমালোচনা চলে। তা ছাড়া তারা কি কি করেছে সকল ডকুমেন্ট বর্তমানে বন্দর উপজেলাবাসীর কাছে রয়েছে। বর্তমানে এই হিরণ ও লিটনের লাগামহীন চাঁদাবাজি আওয়ামী লীগের দূর্নীতিকে হার মানিয়েছে। এদের অত্যাচার থেকে বন্দরবাসীকে রক্ষা করতে দ্রুত দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ বা এদের বহিস্কারের দাবি জানাচ্ছি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন