Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

দুই কালেই সেন্টুর আধিপত্য

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

দুই কালেই সেন্টুর আধিপত্য

মনিরুল আলম সেন্টু

 বৈষম্যে বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেশ ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় কয়েকটি  হত্যা মামলার আসামী মনিরুল আলম সেন্টু মামলা নিয়ে এলাকায় ঘুরছে প্রশাসন এখনো কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। জানা যায়, চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু জুলাইয়ে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রকাশ্যে ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং শেখ হাসিনার ও শামীম ওসমানের পাশে থেকে আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। এমনকি আওয়ামী লীগের আমলে আওয়ামী লীগের তার ছিলো কুতুবপুরে একক আধিপত্য তবে গত ৫ আগষ্টে আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পর তার আরো এলাকায় আধিপত্য বেড়ে যায়। হত্যা মামলায় কিছুদিন এলাকা থেকে পালিয়ে থাকলেও সাপ্রতিক সময়ে এলাকায় এসে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। তবে ছাত্র হত্যা মামরায় এখনো গ্রেফতার না হওয়াতে অনেকেই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। 


জানা যায়,  নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু যিনি কুতুবপুর থেকে চার চারবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। তবে তিনি এই ইউনিয়নে এতো বছর চেয়ারম্যানী করার পরেও কুতুবপুরে মেলেনি কাঙ্খিত উন্নয়ন। চেয়ারম্যান হয়ে যতটা সুনাম কামিয়েছে র্তা থেকে বেশি দুর্নাম কামিয়েছে তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।


একসময় কুতুবপুরের এই চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু বিএনপির রাজনৈতির সাথে জরিত ছিলেন। ছাত্র  অবস্থায় বিএনপির রাজনৈতির সাথে  যুক্ত হন এবং রাজপথে থেকে বিএনপির সাথে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যান। আর আস্তে আস্তে তিনি এক সময় ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি হয়ে যান। তবে তার এই পদ বেশিদিন আর ধরে রাখতে পারেনি বিতর্কিত এই মনিরুল আলম সেন্টু। জানা যায়, ২০১৮ জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম ওসমানের নির্বাচনী প্রচারনায় নেমে ভোট চাওয়াতে সেই সময় ফতুল্লা থানা বিএনপির সহ সভাপতি মনিরুল আলম সেন্টুকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়।


বহিস্কার হওয়ার পরে দলের প্রতি কোন রকম ক্ষমাপ্রার্থী না করে সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। একদিকে এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দুই দিকের নিজের অবস্থান ধরে রাখেন। এমনকি নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়তে থাকে এক সময় তিনি সেই শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শামীম ওসমানের আর্শিবাদ নিয়ে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় বনে যান আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান।


আরও জানা যায়, জুলাই- আগষ্ট গণঅভূথ্যানের আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে সেই  বক্তব্যে দিয়েছিলেন এই আলোচিত- সমলোচিত চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু। শুধু তাই নয় শামীম ওসমানের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করার ঘোষনাও করেন।


তবে সেই কথা পাল্টে ফেলেন ৫ আগষ্টের পর আবার সুর পাল্টে ফেলেন এই বিতর্কিত চেয়ারম্যন সেন্টু বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সাথে ঢেকে নিজের পরিচয়ের জানান দেন এমনকি বলতে থাকেন আমি তোমাদের সাথেই ছিলাম আর তোমাদের সুখে দুঃখে পাশে থাকতে চাই। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুর বিরুদ্ধে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। এর পরপরই তিনি কুতুবপুর ছেড়ে অনেকটাই লাপাত্তা হয়ে যান। কিন্ত পরিস্তিস্থি বুঝে আবারো এলাকায় ফিরে আসেন। গত ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের বেশ কয়েকটি প্রেগ্রামেও তিনি অংশগ্রহন করেন। এমনকি তার বেশ কিছু অনুসারীরা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং ও তারেক রহমানের ছবি ও চেয়ারম্যান সেন্টুর ছবি এক করে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ব্যানার করেন যেটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।


এই ঘটনার পরপরই ফতুল্লা থানা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি আসে । মনিরুল আলম সেন্টু কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। শামীম ওসমানের রাজনৈতিক শীষ্যত্ব গ্রহনকারী সেই  সেন্টু বিএনপির কেউ নন। এমন দাবি করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ফতুল্লা থানা বিএনপি। একই সাথে তার সঙ্গে দলের কোনো নেতাকর্মীকে কোনো রকম যোগাযোগ ও সম্পর্ক না রাখার জন্য ওই বিজ্ঞপ্তিতে আহ্বান করা হয়েছে। ৯ জানুয়ারি থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল বারী ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রেরনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুলতান মাহমুদ মোল্লা ও অ্যাড. বারী ভূঁইয়া।


ফতুল্লা থানা বিএনপির প্যাডে প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল  আলম সেন্টুর সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। তিনিও বিএনপির কেউ নন।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে গডফাদার শামীম ওসমানের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাওয়ায় বিএনপির হাই কমান্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কেন্দ্রীয়  বিএনপি তাকে দলের প্রাথমিক  পদসহ সকল পদ থেকে বহিস্কার করে। ফলে তার সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে বা গোপন সম্পর্ক পুরোপুরিভাবে দলের সিদ্ধান্ত  ও নীতিনৈতিকতা পরিপন্থি।


 বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মনিরুল আলম সেন্টু স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমানের অন্যতম দোসর। বিগত দিনে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার পাশাপাশি জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সন্ত্রাসী তাণ্ডব  উল্লেখ করে ছাত্র-জনতাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে বক্তব্য রাখেন যা ভিডিও আকারে সর্বত্র প্রচারিত । ফলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারুণ্যের অহঙ্কার জনাব তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ব্যবহার করার কোনো প্রকার এখতিয়ার তার নেই।

তারপরও অদ্য ৯ জানুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখে কুতুবপুর ইউনিয়নের মুন্সিবাগ এলাকায় তাকে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি উল্লেখ্য করে প্রধান অতিথি করা হয়েছে যা অত্যন্ত  দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। একই সঙ্গে আরও দুঃখজনক এই যে ওই অনুষ্ঠানে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের কিছু বিপদগামী নেতাকর্মীও উপস্থিত ছিলেন যা দলীয় গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। আমরা এসব নেতাকর্মীদের সতর্ক করার পাশাপাশি বিশেষভাবে অনুরোধ করছি, আওয়ামী লীগের দোসর মনিরুল আলম সেন্টুর সঙ্গে কেউ কোনো প্রকার যোগাযোগ বা সাংগঠনিক সম্পর্ক স্থাপন করবেন না।


বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, অপরদিকে কুতুবপুর বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি মনিরুল আলম সেন্টু ভবিষ্যতে যাতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারুণ্যের অহঙ্কার জনাব তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ব্যবহার করতে না পারে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহনের  জন্য আপনাদের অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।


তবে থানা বিএনপির এমন বিজ্ঞপ্তির পরেও থেমে নেই সেই সেন্টুর কর্মকাণ্ড জানা গেছে বেশ কয়েকদিন যাবৎ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক সহ বিভিন্ন ভাবে প্রচার করা হচ্ছে চেয়ারম্যান সেন্টুর বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে যেন আবারো বিএনপিতে রাখা হয় এমনটিই প্রচার করা হয়। আর এটা ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় ব্যপকভাবে হাস্যরসের সৃষ্টি হয় এবং বিএনপির তৃনমূলের অনেক নেতাকর্মী মনে করেন এটি পাগলের পোলপ ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা আরও বলেন, সে এখনো আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান নৌকা নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন তিনি কিভাবে বলেন তার বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য। তারা এটাও মনে যারা বিএনপির পদধারী নেতা হয়েওে তাকে সাপোর্ট করে যাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।



Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন