Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

রূপগঞ্জে বিসমিল্লাহ আড়ৎ দখল নিয়ে রণক্ষেত্র, আহত ৩০

তাণ্ডবে বিএনপির দিপু-মনিরের ছায়া

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

তাণ্ডবে বিএনপির দিপু-মনিরের ছায়া

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকার বিসমিল্লাহ আড়ৎ দখলকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাসুদুর রহমান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলামের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

 নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকার বিসমিল্লাহ আড়ৎ দখলকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাসুদুর রহমান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলামের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল বাসস্ট্যান্ডে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে টানা তিনঘন্টা থেমে থেমে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

এই সময় অনলাইন ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এছাড়া সেখানে থাকা বহু মোটর সাইকেল লুটপাট চালায় দিপু ভূঁইয়া ও কাজী মনির বাহিনীর সদস্যরা। পরে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনিরে ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীরা এ সংঘর্ষে জড়ান। দিপু প্যানেলের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম এবং কাজী মনিরে প্যানেল থেকে ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাসুদুর রহমান। উভয়পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুড়েছেন।

আরো জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহসড়ক সংগলগ্ন সাওঘাট এলাকায় বিসমিল্লাহ আড়ৎ নিয়ে জাপান-বাংলাদেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম প্রধানের সঙ্গে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ভাতিজা আইয়ুব খান ও আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমানের দখলে রয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছেন  বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়ার অনুসারীরা। ব্যবসায়ী মজিবুর রহমানের দাবি, সেলিম প্রধানের মালিকানাধীন জমি তিনি ১০ বছরের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে ভাড়া নেন। পরে সেখানে বালু ভরাট ও সেড নির্মাণ করে কাচাঁবাজারের আড়ৎ গড়ে তোলেন। বর্তমানে পেশী শক্তি খাটিয়ে আড়ৎটি বেদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন সেলিম প্রধান। অপরদিকে, সেলিম প্রধানের দাবি, ভূয়া চুক্তিনামা তৈরী করে জোর পূর্বক জমি দখল করে আড়ৎ গড়ে তোলেন মজিবুর রহমান। এদিকে, আড়ৎটি দখল করতে সেলিম প্রধানের পক্ষ নেয় বিএনপি নেতা কাজী মনিরুজ্জামানের প্যানেলের জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান ও তার লোকজন। অপরদিকে, মজিবুর রহমান ও আড়তের ব্যবসায়ীদের পক্ষ নেয় দিপু ভূঁইয়ার প্যানেল থেকে জেলা সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহবায়ক রফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন। এ সময় রফিকুল ইসলামের পক্ষে দিপু ভূঁইয়ার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ছিলেন শুটার রাসেল, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাহিদ ভূঁইয়ার লোকজন, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওমর, রূপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুল ইসলাম প্রিন্স, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি, মুড়াপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রকিসহ দাউদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারী, ভূলতা ইউনিয়ন বিএনপি, তারাবো পৌরসভা বিএনপিসহ চনপাড়ার এলাকার বহু সন্ত্রাসী।

গতকাল দুপুরে আড়তের পাশে সেলিম প্রধানের বাড়িতে মাসুদুর রহমানের লোকজন অবস্থান নেয়। এ সময় আড়তদার আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবর দিপু ভূঁইয়াকে অবগত করলে আড়তের পাশের সড়ক দিয়ে রফিকুল ইসলাম তার নেতাকর্মীদের নিয়ে মাসুদুজ্জামানকে ভয় দেখাতে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাস বিরোধী হিসেবে নিয়ে আসে। এ সময় সেলিম প্রধানের বাড়ির ভেতর থেকে মাসুদের লোকজন রফিকের লোকজনদের উপরে ইটপাটকেল ছুঁড়লে সেখান থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পরে উভয়পক্ষের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গুলিবর্ষণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এসময় কয়েকজনকে পিস্তল হাতে গুলি করেন। সংঘর্ষে ঘটনায় আহতদের মধ্যে ছাত্রদল কর্মী রাফি আহমেদ ও রাজু ভূঁইয়ার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার রয়েছে। একই সাথে স্বেচ্ছাসেবকদল কর্মী মো. ইমন, মো. রফিকুল ইসলাম, রুহুল আমিন, মনির হোসেন, ইয়ার হোসেন, তরিকুল ইসলাম, বিনয় বাবু, নুরুল ইসলাম ও মো. রাজু স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। সংঘর্ষে সেলিম প্রধানের ব্যবহৃত একটি জিপ গাড়ি জ¦ালিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১০ টি মোটরসাইকেল ভাংচুর চালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এসময় গাউছিয়া মার্কেট তাঁতবাজার, হাজী শপিং কমপ্লেক্সসহ আশপাশের মার্কেট ও হাঁটবাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। জনমনে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছেঁ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম বলেন, একটি আড়ত নিয়ে সেলিম প্রধান ও মজিবুর ভূঁইয়ার মধ্যে বিরোধ। এ নিয়েই সংঘর্ষের সূত্রপাত বলে আমরা জানতে পেরেছি। সংঘর্ষে গুলি ও হাতবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০ রাউন্ড গুলির খোসা ও একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও কাজ শুরু করেছি। তবে, রাত ৮ টা পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন