Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

অয়ন ওসমানের সহযোগী সন্ত্রাসী জিসান গ্রেপ্তার

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

অয়ন ওসমানের সহযোগী সন্ত্রাসী জিসান গ্রেপ্তার

অয়ন ওসমানের সহযোগী সন্ত্রাসী জিসান গ্রেপ্তার

 ফতুল্লার লামাপাড়ায় গৃহবধূ লামিয়া আক্তার ফিজা হত্যা মামলার আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী গোলাম রহমান জিসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার পতনের আগ দিন পর্যন্ত জিসান গডফাদার শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের অন্যতম সহযোগী হিসেবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়াতো। মাদকব্যবসা, ছিনতাই, জমি দখল, রাহাজানি, মারামারিসহ আরো কুখ্যাত সব অপরাধের সাথে জড়িত ছিল এই জিসান। জিসানসহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আছে বলে জানিয়েছেন সূত্র। এদিকে জিসান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমামুর রহমান। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টার দিকে লামাপাড়া এলাকা থেকে জিসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে সন্ত্রাসী জিসান গ্রেপ্তার হওয়ায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী। তিনি বলেন, আমার মেয়েকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আসামী জিসানকে গ্রেপ্তার করায় পুলিশ ভাইদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই মামলার সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করার আহবান জানাই। আমি আমার মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এদিকে শুধু সন্ত্রাসী জিসান নয়, লামাপাড়ার আতঙ্ক সন্ত্রাসী পুইক্কা পরিবার। এই পরিবারের সন্ত্রাসীদের হাতে দীর্ঘদিন জিম্মি ছিল লামাপাড়াবাসী। ২ জানুয়ারি  ফতুল্লায় স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ার স্ত্রী লামিয়া আক্তার ফিজাকে সংঘবদ্ধ হয়ে হত্যা করে এই পরিবার। পরে ৭ জাুনয়ারি নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ৯। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বাবা মোহাম্মদ  আলী ১২ জনের নাম উল্লেখ করেন এরা হলেন, ১. নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার স্বামী আসাদুজ্জামান ওরফে মুন্না (৩১), পিতা মনির হোসেন মনু ২. আকলিমা বেগম (৫২), স্বামী মনির হোসেন মনু, ৩. তোফাজ্জাল হোসেন (৪৮), পিতা-পুইক্কা, ৪. চুন্নু (৫০), পিতা-পুইক্কা, ৫. মুন্নী,স্বামী মুরাদ ৬.মনির হোসেন ওরফে মনু (৫৮) ৭. আব্দুর রশিদ ওরফে মিঠুন (৫০, পিতা আম্বর আলী, ৮.নূর নাহার (৪৪), স্বামী তোফাজ্জল হোসেন, ৯. রাজ্জাক (৪৫), পিতা আমিরউদ্দিন, ১০. রানা (৪০), পিতা তালেব হোসেন, ১১. রিপন (৪৪), পিতা মৃত আম্বর আলী, ১২. গোলাম রহমান জিসান (২৪), পিতা উজ্জল। তবে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রথমে মামলা না হলেও সোমবার (৬ জানুয়ারি) ফরেনসিক রিপোর্টে উঠে আসে এটা আসলে কোন আত্মহত্যা ঘটনা নয় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। নিহত ফিজার শরীরে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।  আর এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘবদ্ধ হয়ে করা হয়েছে ।  ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই মামলা নেয় ফতুল্লা থানা পুলিশ।

তখন ফতুল্লা অফিসার ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম যুগের চিন্তাকে জানান, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে। ইতিমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ৩ নং আসামী তোফাজ্জলকে ঘটনার দিনই গ্রেফতার করি। বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী মামলায় উল্লেখ করেন, আমার মেয়ে লামিয়া আক্তার ফিজা (২১) কে বিগত ১৪/০৮/২০২০ ইং তারিখে ১নং আসামী আসাদুজ্জামান ওরফে মুন্না এর নিকট ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিবাহ দেই। বিবাহের পর থেকেই ১নং আসামী পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। আমার মেয়ে তাকে বাধা নিষেধ করায় তাকে মারধর করিত। ০২/১/২০২৫ তারিখ বিকাল অনুমান ৪টা ৫০ ঘটিকার সময় বিবাদীদের বাড়ীর পাশে এক ব্যক্তি আমার বড় ভাই সেন্টুর মোবাইলে ফোন দিয়া জানায় যে উক্ত বিবাদীরা আমার মেয়েকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করিয়া তাদের ঘরের মধ্যে আটক করিয়া রাখিয়াছে। উক্ত সংবাদ পাইয়া আমি আমার স্ত্রী ফাহিমা বেগম (৩৮) সহ পরিবারের লোকজন ইং ০২/১/২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৫টার দিকে ফতুল্লা থানাধীন পূর্ব লামাপাড়া নয়ামাটি মার্কাস মসজিদ সংলগ্ন ১নং বিবাদীর বাড়ীতে গিয়া দেখতে পাই ১নং বিবাদীর রুমে জানালার গ্রিলের সহিত আমার মেয়ে লামিয়া আক্তার ফিজা গলায় ওড়না ও গামছা দ্বারা বাধা পা মাটিতে ডান হাতের আঙ্গুলে এবং বাম হাতের বাহু সহ গলায় লালচে দাগ মৃত অবস্থায় ঘাড় বাকোনো ঝুলিতেছে। পুলিশ সংবাদ পাইয়া বিবাদীদের বাড়ীতে আসে এবং আমার মেয়ের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত শেষে মৃত দেহের ময়না তদন্ত করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করে। উক্ত বিবাদীরা একই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ০২/০১/২০২৫ তারিখ বিকাল অনুমান ৪টা ৫০ থেকে সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৫টার দিকে ঘটিকার মধ্যে যে কোন সময় আমার মেয়েকে শ্বাসরোধ সহ ডান হাতের আঙ্গুলে ও বাম হাতের বাহুতে আঘাত করিয়া হত্যা করিয়াছে।

প্রসঙ্গত, যুগের পর যুগ এক সন্ত্রাসী পরিবারের হাতে জিম্মি ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার জনপদ। ডাকাতি, হত্যা, অস্ত্রব্যবসা, খুন, মাদকব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইলিংসহ সবরকমের রোমহর্ষক অপরাধ ফতুল্লার লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকার এই পরিবারের নিত্যদিনের খেলা। পুলিশ-ডিবি-র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়াকে এই সন্ত্রাসী পরিবার নিছক ছেলে খেলায় পরিণত করেছে।ব্যবসায়িক করিডোর হিসেবে পরিচিত ফতুল্লা থানা এলাকার কুতুবপুর ইউনিয়নের লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকার  মৃত আবু তালেব হোসেন ওরফে পুইক্কার চার ছেলেই সন্ত্রাসী। পুইক্কার চার ছেলে মোফাজ্জল হোসেন চুন্নু, তোফাজ্জল, রানা, উজ্জল। এরমধ্যে সন্ত্রাসী উজ্জল বেবি ট্যাক্সি (সিএনজির পূর্বে ছিল) চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে মারা যায়। জীবিত তিন সন্ত্রাসী ভাই কখনো যুবলীগ আবার কখনো আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমানের ডানহাত মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সন্ত্রাসী শাহনিজামের শেল্টারে ছিলো এই সন্ত্রাসী পরিবারটি। এখন ক্ষমতার পালাবদলে ভোল পাল্টে বিএনপির শেল্টারে গিয়ে আগের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে লামাপাড়ার ত্রাস এই সন্ত্রাসী পরিবারটি।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্র্ধষ এক সন্ত্রাসী এই পুইক্কার চার ছেলে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড হওয়ার পর পুইক্কার চার ছেলের মূলকাজই ছিল মহাসড়কে ডাকাতি করা। শিবু মার্কেট থেকে জালকুড়ি পর্যন্ত পুইক্কার দুই ছেলে চুন্নু ও তোফাজ্জল ডাকাত বাহিনী নিয়ে ডাকাতির নেতৃত্ব দিতো। খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, জমি দখল, জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, মাদকব্যবসা, ছিনতাই, অস্ত্রব্যবসা, সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যামামলাসহ ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে পুইক্কার ছেলে মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুর বিরুদ্ধে। কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বা ভোল পাল্টে একের পর এক কুখ্যাতসব অপরাধ কর্মকাণ্ড যুগের পর যুগ চালিয়ে যাচ্ছে চুন্নু ও তাঁর ভাইয়েরা। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেই যে পুইক্কা পরিবারের এক সময় যার নুন আনতে পান্তা ফুরাতো, এখন বিশাল বিত্ত বৈভবের মালিক, সাথে অস্ত্রভাণ্ডারে সজ্জিত এক বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী।

সূত্র জানিয়েছে,  চুন্নুর হাতে রয়েছে বিশাল অস্ত্রের ভাণ্ডার। লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকার এক সময়ের ত্রাস ও মূর্তিমান আতঙ্ক রেকমত ও ফজল হকের ক্রসফায়ারের পর তাদের অবৈধ অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা, ডাকাত সর্দার ও ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতা পুইক্কার ছেলে মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুর হাতে। ক্রসফায়ারে রেকমত বাহিনীর প্রধান রেকমত নিহতের পর তাঁর অস্ত্রের ভাণ্ডার হাতে পেয়ে গোটা লামাপাড়া এলাকায় দুর্র্ধষ সন্ত্রাসীতে পরিণত হয় চুন্নু। শুধু দুই ভাই তোফাজ্জল ও রানার নেতৃত্বে সব ধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিশাল বাহিনী গড়ে তোলে। গডফাদার শামীম ওসমানের ক্যাডার সন্ত্রাসী শাহ নিজামের শেল্টারে আরো দুর্র্ধষ হয়ে ওঠে এই চুন্নু। গোটা লামাপাড়ায় ক্রসফায়ারে নিহত রেকমতের মতোই আতঙ্ক তৈরি করে চুন্নু ও তার দুই ভাইয়ের বাহিনী। বারবার র‌্যাব পুলিশের হাতে অস্ত্র, মাদকসহ গ্রেফতারও হয়েছিলো চুন্নুসহ তার সন্ত্রাসী ভাইয়েরা। তবে প্রতিবার গ্রেফতারের পর সে আরও বেশি দুর্ধর্ষ হয়ে ফিরে আসে এলাকাতে। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাঁকে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মিছিল নিয়ে যোগ দিতে দেখা গেছে। লামাপাড়া এলাকায় সাংসদ শামীম ওসমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুনও টাঙিয়েছিলো সে নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করে। সেসব ফেস্টুনে সাঁটানো ছিলো তাঁর নিজেরও ছবি।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পুরোটা সময় স্থানীয় মিল ফ্যাক্টরীর ঝুট সেক্টর থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসার একচ্ছত্র অধিপতি ছিল এই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী চুন্নু। এছাড়াও এলাকার শীর্ষ ভূমিদস্যু হিসেবেও তাঁর কুখ্যাতি ছিল। এছাড়াও বিদেশী মদ থেকে শুরু করে ইয়াবার পাইকারি ব্যবসায়ীও সে। তাঁর রয়েছে মাদকের বিশাল নেটওয়ার্ক। নিজ বাড়ি পুরোটাই সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এছাড়াও তাঁর বাড়ির পথের দিকে বেশ কিছু স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি খুব সহজেই সে অনুমান করতে পারে। আর এভাবেই গোটা পরিবার নিয়ন্ত্রণ করে  অপরাধ জগতের এই সাম্রাজ্য।

৩০টির বেশি মামলা থাকলেও একের পর এক অপরাধ করে বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে নির্ভার ছিল চুন্নু ও তার গোটা সন্ত্রাসী বাহিনী। সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের গত ২০ এপ্রিল রাতে চুন্নুকে কুতুবপুর নয়ামাটি এলাকার তার নিজ বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় চুন্নুকে ছাড়িয়ে নিতে তার বাহিনীর সদস্যরা পুলিশ উপর হামলা চালালে ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। তাদেরকে খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এর আগে বিদেশী পিস্তল, ম্যাগাজিন, ৬ রাউন্ড গুলি ও বিদেশী মদ বিয়ারসহ ২০১৫ সালের ৩ মার্চ ফতুল্লার লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকা থেকে মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১।

ওই সময় পুরাতন কোর্ট এলাকার র‌্যাব-১১ এর সিপিসি-১ এর এএসপি মাসুদ আনোয়ার জানিয়েছিলেন, চুন্নু একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনী দ্বারা সে ভূমি দখল ও মাদক বিক্রি করাতো। চুন্নু গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর অস্ত্র  ভাণ্ডারের সন্ধানে নামে র‌্যাব-১১। এর আগেই র‌্যাব জানতে পেরেছিলো চুন্নু  তাঁর স্ত্রীর মাধ্যমে তাঁর অস্ত্র নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছে।

এরপরই একই বছরের ১৪ মার্চ র‌্যাব-১১ চুন্নুর শ্যালিকা সুমাইয়া আক্তার মুন্নির চোধুরী বাড়ি এলাকার বাড়িতে অভিযান চালায় এবং সেখান থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ৮ রাউন্ড গুলি ও চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করে।

২০১৭ সালের ৩ আগস্ট চুন্নু ও তাঁর বাহিনীর  বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন লামাপাড়া এলাকার  মো. হাবিব মিয়া। এখানে হাবিব মিয়া দাবি করেছিলেন চুন্নু ও তাঁর বাহিনী অস্ত্র নিয়ে তাঁর উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং তাঁর কাছ থেকে নগদ টাকাসহ মোবাইল ফোন লুটে নেয়।

একই বছরের ১০ নভেম্বর ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আতাউর রহমান চুন্নুকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়। এসময় চুন্নুর বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে তাঁকে আটক করলেও তাঁর সহযোগিরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে তাঁকে ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় চুন্নু পালিয়ে গেলেও তাঁর সহযোগি আরফান মাদবরকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনার ঠিক সাড়ে তিন বছর আগে চুন্নুর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড রাফেদ আলীকে একই থানার এসআই জিন্নাহর উপর হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছিলো চুন্নু বাহিনী। পরে ২৫ অক্টোবর এই রাফেদ আলীকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের ২ নম্বর ঢাকেশ্বরী এলাকার আবু বক্করের নির্মাণাধীন বাড়ির দোতলা থেকে মাদক সেবনরত অবস্থায় চুন্নুকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ।

এর আগে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় ফতুল্লার লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী মোফাজ্জাল হোসেন চুন্নুকে (৪৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।  

এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল, চুন্নু ও তার দুই ভাই তোফাজ্জল ও রানা বাহিনীর  অত্যাচারে এলাকায় কোন সাধারণ লোক অথবা ব্যবসায়ীরা নয়ামাটি এলাকায় শান্তিতে বসবাস করতে পারেন না। নয়ামাটি এলাকায় কেউ বাড়ি করলে সেই বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়। কেউ ব্যবসা করলে প্রতিমাসে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে কাউকে শান্তিতে বসবাস করতে দেয় না তারা। চুন্নুর কারণে নয়ামাটি, লামাপাড়া এলাকায় কেউ নতুন বাড়ি করতে সাহস পায়না। তাকে ও তাঁর বাহিনীকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা না দিলে কেউ বাড়ি বা ফ্যাক্টরীতে একটি ইটও লাগাতে পারেনা। নতুন জমি বেচাকেনাতেও চুন্নু বাহিনীকে মোটা অংকের টাকা দিতে হত। আশেপাশের এলাকায় জমির দাম বাড়লেও চুন্নু বাহিনীর চাঁদাবাজীর কারণে এই এলাকায় এখনও জমির দাম অনেক কম। এরকারণ চুন্নু ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী। আওয়ামী লীগের পতনের পর এখন ভোল পাল্টে আবারো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে মৃত পুইক্কার সন্ত্রাসী পরিবারটি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চুন্নু সাম্রাজ্যে পতনের পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেন নয়ামাটি-লামাপাড়া এলাকাবাসী।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন