মাসদাইরে আ.লীগ-বিএনপি সবই প্রধান পরিবারে জিম্মি
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
মাসদাইরে আ.লীগ-বিএনপি সবই প্রধান পরিবারে জিম্মি
গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমানের খুবই ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মাসদাইরের প্রধান পরিবার। শামীম ওসমান ও ছেলে অয়ন ওসমানের নির্দেশনায় এনায়েতনগর জুড়ে ব্যাপক অপকর্ম পরিচালনা করতেন এই প্রধান পরিবারের সদস্যরা। আর সকল অপকর্ম পরিচালনায় অয়ন ওসমানের পক্ষে নেতৃত্ব দিতেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ আশরাফুল ইসলাম রাফেল।
বিগত দিনে শামীম ওসমান ও ছেলে অয়ন ওসমানের নির্দেশনায় এনায়েতনগরের আওতাধীন বিসিক শাসনগাঁও, মাসদাইর বাড়ভৌগ, খানকার মোড়, বেকারীর মোড়, ছোট কবস্থান, বড় কবরস্থানসহ এর আশপাশের এলাকাগুলোর আওতাধীন সকল প্রকারের মাদকের সিন্ডিকেট, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দলদারিত্ব, জুয়ার আসর, ডিস ব্যবসা, ইন্টার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন মালিক সমিতি, বিভিন্ন্ গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরীর ঝুট নিয়ন্ত্রণ, বিচার শালিশ সবই পরিচালনায় ছিলেন ছাত্রলীগের রিয়াদের নেতৃত্বে প্রধান পরিবারের সকল সদস্যরা।
এদিকে সে সময় এই পরিবারের অনেকেই বিএনপির সাথে জড়িত থাকা সত্ত্বে ভাতিজা-ভাই সম্পর্কে রিয়াদ ও রাফেলে কাছ থেকে ব্যাপক সুবিধা নিয়েছেন। আর যার মাত্র এতোটাই ছিলো যে তারা এলাকায় দাবড়িয়ে বেড়িয়েছিলেন রিয়াদ-রাফেলের ক্ষমতায়। কিন্তু পট পরিবর্তনের পরে ও কোন একটা অসুবিধা হয়নি এই পরিবারের সদস্যদের। এদিকে হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও আশরাফুল ইসলাম রাফেল ছাত্রলীগের পদে আসা এবং অয়ন ওসমানের সহযোগী সবমিলিয়ে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করেন।
সরকারি তোলারাম কলেজে তিনি একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। কলেজ সংসদ নির্বাচন না হলেও তিনি ছিলেন স্বঘোষিত ভিপি। সেইসঙ্গে ছাত্র নির্যাতন ও সাংবাদিক পেটানো সবকিছুতেই তিনি ছিলেন পটু। কলেজের ভেতর টর্চার সেল গড়ে তোলা থেকে শুরু করে অয়ন ওসমানের প্রভাব ব্যবহার করে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ঝুট নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি করে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তারা। এই রিয়াদ ও রাফেল এলাকায় বিগত সময়ে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার জায়গা কিনেছেন।
বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঝুট নামিয়েছেন। এলাকায় রয়েছে ইন্টারনেট ব্যবসা। তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকায় উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা পেতেন রিয়াদ ও রাফেল। তা ছাড়া এই পরিবারের বিগত দিনের ঐতিহ্যে হিসেবে সকলেই আশা প্রধান ডাকাতের পরিবার হিসেবে পরিচিত। এদিকে এই পরিবারের সকল সদস্যই প্রায় হত্যা মামলাসহ মাদকের ডিলার হিসেবে মামলার আসামী রয়েছেন।
সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৮, ১৯ জুলাই রিয়াদ-রাফেলের নেতৃত্বে মাসদাইর থেকে প্রধান পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই শামীম ওসমান ও অয়ন ওসমানের নেতৃত্বে চাপাতি, রামদা, অবৈধ অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতার উপরে ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর সারাদেশে অত্যাচারকারীদের বাড়ি-ঘরে, ব্যবসা বানিজ্যে হামলা পড়লে ও মাসদাইরবাসীকে অত্যাচার করা এই প্রধান পরিবারের সকলের বাড়ি-ঘর এখনো অক্ষত রয়েছে।
আর ব্যবসা বানিজ্যে দেখছেন খালাতো-চাচাতো ভাই-চাচারা যারা বিএনপির সাথে জড়িত ছিলেন। সেই সুবাদে মাসে মাসে মোটা অংকের টাকা পৌঁছে যাচ্ছে রিয়াদ-রাফেলের একাউন্টে। শুধু হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও আশরাফুল ইসলাম রাফেল মালেশিয়ায় পালিয়ে গেলে ও তাদের পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যরা মাসদাইর দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আবার অনেকেই ভোল পাল্টে বিএনপির পদ-পদবী নিয়ে বিএনপি সেঁজে যাচ্ছেন। তা ছাড়া বর্তমানে বিসিক, মাসদাইরের বিভিন্ন গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরীর ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছেন। আবার অনেকে মাদকের আড্ডা, জুয়ার আড্ডায় তৈরি করে রেখেছেন। এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কয়েক গার্মেন্টসের ওয়েস্টিজ, ঝুট নামলে তাদের নাম ও বেকারীর মোড়ের টাকা ভাগের লিষ্টে পাওয়া যায়।
বর্তমানে এই পরিবারের উপরে ক্ষুদ্ধ রয়েছে বিএনপিসহ আওয়ামী-লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এদিকে গত কয়েকদিন পূর্বে নারায়ণগঞ্জে ঘটে যাওয়া নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পোস্টারীং এর সাথে ও এই পরিবারের সদস্য অনিক প্রধান পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যাকে ঘিরে বর্তমানে আলোচনায় এই ওসমান দোসরের ঘনিষ্ঠ প্রধান পরিবারের মাথায় কোন বিএনপি নেতার হাত তা বর্তমানে টক অব দ্যা টাউন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকলের সন্দেহের তীর রয়েছে তাদের এক দূর সম্পর্কের এক বিএনপি এবং যুবদল নেতার দিকে।
সূত্র জানিয়েছে, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেল প্রধানের নির্দেশনায় দীর্ঘদিন বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন প্রধান পরিবারের সকল সদস্যরা। বিগত দিনে এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাসদাইরের বিভিন্ন এলাকাবাসীকে জিম্মি করে মাদক, জুয়া, ছিনতাইয়ের স্পট তৈরি করেছিলেন উভয়ের চাচাতো ভাই অনিক প্রধান যার বাবা এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জসিম প্রধান। এদিকে লিয়াদে আরেক চাচা মিজানুর রহমান প্রধান যিনি ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন। রিয়াদের চাচা গেসু বর্তমানে মহৎজীবী দল নেতা, আরেক চাচা সাইফুল ইসলাম প্রধান, চাচাতো ভাই জিকু প্রধান যুবদল নেতা বনে গেছেন। তা ছাড়া রিয়াদে আরেক চাচা আতাউর রহমান প্রধান যিনি বিগত দিনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদে সাথে আতাঁত করে ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বারসহ শামীম ওসমানের সাথে লিয়াজু করে চলতেন।
বর্তমানে এরা সকলেই সুবিধা ভোগ করছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। তা ছাড়া রাফেলের বড় ভাই রাসেল প্রধানের ইন্টারনেট ব্যবসা এখনো তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যা নিয়ে গত ২ বছর পূর্বে মাসদাইরে রণক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন এই রিয়াদ-রাফেল-রাসেল। এদিকে বর্তমানে এই পরিবারের বিএনপির নেতাকর্মীরা থাকা সত্ব্ েও বিএনপির সভাপতি জসিম প্রধানের ছেলে অনিক প্রধান ও রিয়াদের আরেক চাচাতো ভাই বেকারীর সুমন প্রধান রাতের অন্ধকারে শহরের বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের দেয়ালে শেখ হাসিনাতেই আস্থা পোষ্টারিং করেন ছাত্রলীগের পক্ষে। যা নিয়ে বর্তমানে এই পরিবারের উপর ক্ষুদ্ধ রয়েছে মাসদাইরবাসী।
তা ছাড়া রিয়াদের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম প্রধান, জিকু প্রধান ও চাচা গেসু প্রধানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন রিয়াদ-রাফেলের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিসিকের কয়েকটি গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরী। এছাড়া রিয়াদের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ প্রধান নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করছেন। এদিকে বিগত দিনে ছাত্রলীগের রিয়াদের অস্ত্র ক্যারী করতেন রিয়াদের নামে চাঁদাবাজি করতেন তার আরেক ভাতিজা হিমেল প্রধান ও সিয়াম প্রধান বর্তমানে ছাত্রদল নেতা হিসেবে পরিচিতি পেতে চাইছেন তাদের সেই দূর সম্পর্কের চাচাদের মাধ্যমে।
এদিকে দুর্ধর্ষ রিয়াদের ভাতিজা আনন্দ প্রধান ও অমিত প্রধান বর্তমানে ছাত্রদলের মিছিল মিটিংয়ে আসা শুরু করেছে। তা ছাড়া সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ নেতা রাফেলের বড় ভাই রাসেল প্রধান বর্তমানে বিগত দিনের মতোই দেদারসে জিম্মি করা ইন্টারনেট ব্যবসা অবহৃত রেখেছেন। বর্তমানে একে একে ভোল পাল্টাচ্ছে দুর্ধর্ষ প্রধান পরিবার। এদিকে তারেক রহমানের নির্দেশনাকে অমান্য করে অন্য দলের সদস্যদের বিএনপিতে ঠাঁই দিচ্ছেন মাসদাইরের কিছু কতিপয় বিএনপি নেতাকর্মীরা।