Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

র‍্যাব ১১'র অভিযানে হত্যা মামলায় মাদক সম্রাজ্ঞী গ্রেপ্তার

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

র‍্যাব ১১'র অভিযানে হত্যা মামলায় মাদক সম্রাজ্ঞী গ্রেপ্তার

র‍্যাব ১১'র অভিযানে হত্যা মামলায় মাদক সম্রাজ্ঞী গ্রেপ্তার

ফতুল্লার লামাপাড়ায় গৃহবধূ লামিয়া আক্তার ফিজা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নুরুনহারকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ফতুল্লা থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব। পরে আদালতে পাঠিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। মহিলা বিবেচনায় রিমান্ড না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় বিজ্ঞ আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে চাঞ্চল্যকর ফিজা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই ইমানুর রহমান। এই নিয়ে লিজা হত্যা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। এরআগে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার আরো দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে ফতুল্লা মডেল থানার চৌকস পুলিশ অফিসার ইমানুর রহমান।   হত্যা মামলায় কুখ্যাত সন্ত্রাসী গোলাম রহমান জিসান দুই দিনের রিমান্ড রয়েছেন। তাছাড়া কারাগারে রয়েছেন এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী তোফাজ্জল হোসেন।

একের পর এক আসামিকে গ্রেপ্তার করায় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, আমার মেয়েকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যেভাবে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনছেন আমি পুলিশ ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।  এই মামলার সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করার আহবান জানাই। আমি আমার মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।

গত ২ জানুয়ারি  ফতুল্লায় স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ার স্ত্রী লামিয়া আক্তার ফিজাকে সংঘবদ্ধ হয়ে হত্যা করে এই পরিবার। পরে ৭ জাুনয়ারি নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ৯। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বাবা মোহাম্মদ  আলী ১২ জনের নাম উল্লেখ করেন এরা হলেন, ১. নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার স্বামী আসাদুজ্জামান ওরফে মুন্না (৩১), পিতা মনির হোসেন মনু ২. আকলিমা বেগম (৫২), স্বামী মনির হোসেন মনু, ৩. তোফাজ্জাল হোসেন (৪৮), পিতা-পুইক্কা, ৪. চুন্নু (৫০), পিতা-পুইক্কা, ৫. মুন্নী,স্বামী মুরাদ ৬.মনির হোসেন ওরফে মনু (৫৮) ৭. আব্দুর রশিদ ওরফে মিঠুন (৫০, পিতা আম্বর আলী, ৮.নূর নাহার (৪৪), স্বামী তোফাজ্জল হোসেন, ৯. রাজ্জাক (৪৫), পিতা আমিরউদ্দিন, ১০. রানা (৪০), পিতা তালেব হোসেন, ১১. রিপন (৪৪), পিতা মৃত আম্বর আলী, ১২. গোলাম রহমান জিসান (২৪), পিতা উজ্জল। তবে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রথমে মামলা না হলেও সোমবার (৬ জানুয়ারি) ফরেনসিক রিপোর্টে উঠে আসে এটা আসলে কোন আত্মহত্যা ঘটনা নয় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। নিহত ফিজার শরীরে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।  আর এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘবদ্ধ হয়ে করা হয়েছে ।  ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই মামলা নেয় ফতুল্লা থানা পুলিশ।

লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী মামলায় উল্লেখ করেন, আমার মেয়ে লামিয়া আক্তার ফিজা (২১) কে বিগত ১৪/০৮/২০২০ ইং তারিখে ১নং আসামী আসাদুজ্জামান ওরফে মুন্না এর নিকট ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিবাহ দেই। বিবাহের পর থেকেই ১নং আসামী পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। আমার মেয়ে তাকে বাধা নিষেধ করায় তাকে মারধর করিত। ০২/১/২০২৫ তারিখ বিকাল অনুমান ৪টা ৫০ ঘটিকার সময় বিবাদীদের বাড়ীর পাশে এক ব্যক্তি আমার বড় ভাই সেন্টুর মোবাইলে ফোন দিয়া জানায় যে উক্ত বিবাদীরা আমার মেয়েকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করিয়া তাদের ঘরের মধ্যে আটক করিয়া রাখিয়াছে। উক্ত সংবাদ পাইয়া আমি আমার স্ত্রী ফাহিমা বেগম (৩৮) সহ পরিবারের লোকজন ইং ০২/১/২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৫টার দিকে ফতুল্লা থানাধীন পূর্ব লামাপাড়া নয়ামাটি মার্কাস মসজিদ সংলগ্ন ১নং বিবাদীর বাড়ীতে গিয়া দেখতে পাই ১নং বিবাদীর রুমে জানালার গ্রিলের সহিত আমার মেয়ে লামিয়া আক্তার ফিজা গলায় ওড়না ও গামছা দ্বারা বাধা পা মাটিতে ডান হাতের আঙ্গুলে এবং বাম হাতের বাহু সহ গলায় লালচে দাগ মৃত অবস্থায় ঘাড় বাকোনো ঝুলিতেছে। পুলিশ সংবাদ পাইয়া বিবাদীদের বাড়ীতে আসে এবং আমার মেয়ের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত শেষে মৃত দেহের ময়না তদন্ত করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করে। উক্ত বিবাদীরা একই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ০২/০১/২০২৫ তারিখ বিকাল অনুমান ৪টা ৫০ থেকে সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৫টার দিকে ঘটিকার মধ্যে যে কোন সময় আমার মেয়েকে শ্বাসরোধ সহ ডান হাতের আঙ্গুলে ও বাম হাতের বাহুতে আঘাত করিয়া হত্যা করিয়াছে।

প্রসঙ্গত, যুগের পর যুগ এক সন্ত্রাসী পরিবারের হাতে জিম্মি ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার জনপদ। ডাকাতি, হত্যা, অস্ত্রব্যবসা, খুন, মাদকব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইলিংসহ সবরকমের রোমহর্ষক অপরাধ ফতুল্লার লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকার এই পরিবারের নিত্যদিনের খেলা। পুলিশ-ডিবি-র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়াকে এই সন্ত্রাসী পরিবার নিছক ছেলে খেলায় পরিণত করেছে। ব্যবসায়িক করিডোর হিসেবে পরিচিত ফতুল্লা থানা এলাকার কুতুবপুর ইউনিয়নের লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকার  মৃত আবু তালেব হোসেন ওরফে পুইক্কার চার ছেলেই সন্ত্রাসী। পুইক্কার চার ছেলে মোফাজ্জল হোসেন চুন্নু, তোফাজ্জল, রানা, উজ্জল। এরমধ্যে সন্ত্রাসী উজ্জল বেবি ট্যাক্সি (সিএনজির পূর্বে ছিল) চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে মারা যায়। জীবিত তিন সন্ত্রাসী ভাই কখনো যুবলীগ আবার কখনো আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমানের ডানহাত মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সন্ত্রাসী শাহনিজামের শেল্টারে ছিলো এই সন্ত্রাসী পরিবারটি। এখন ক্ষমতার পালাবদলে ভোল পাল্টে বিএনপির শেল্টারে গিয়ে আগের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর প্রস্তুতি  নেয় লামাপাড়ার ত্রাস এই সন্ত্রাসী পরিবারটি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন