সাড়ে ছয় কোটি টাকার সড়ক নির্মাণে দেয়া হচ্ছে খালের পলিথিন মিশ্রিত কাদামাটি

সোনারগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

সোনারগাঁয়ে ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় সড়ক নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসমত এন্ড ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে।
সোনারগাঁয়ে ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় সড়ক নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসমত এন্ড ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার প্রাণকেন্দ্র মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় ড্রেন নির্মাণ কাজে কার্যাদেশ মেনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ করছেন না। ড্রেনের মাটি সরিয়ে তা অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান । ড্রেনের দুপাশের দেয়াল ঢালাইয়ের পর ফাঁকা অংশে ড্রেন থেকে তোলা মাটি ব্যবহার করে ভরাট করার কথা থাকলেও তা পাশ্ববর্তী খাল থেকে এনে পলিথিন ও আবর্জনা মিশ্রিত কাদা মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। ড্রেন নির্মাণ কাজে ৬ ইঞ্চি স্রাব ও ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ৫ইঞ্চি। ১২মিলি রড ব্যবহার করার উল্লেখ থাকলেও সেখানে ব্যবহার হচ্ছে ১০মিলি রড। ড্রেনের সলিংয়ে তিন ইঞ্চি সিসি ঢালাইয়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র এক ইঞ্চি।
গত কয়েকদিন ধরে হাসমত এন্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শুরু করে। সড়কের ড্রেন নির্মাণে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখা গেলে এ ঠিকাদার সড়ক নির্মাণে কি করবে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। তবে নির্মাণ কাজে কোন অনিয়ম হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন হাসমত এন্ড ব্রাদার্সের তাই স্বত্বাধিকারী হাসমত আলী হাসু। কার্যাদেশ মেনে নির্মাণ কাজ হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
তথ্য সুত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় পানি নিষ্কাষনের জন্য ফুটওভার ব্রীজ থেকে শুরু করে শহীদ মজনু পার্ক পর্যন্ত ড্রেন ও গুরুত্বপূর্ণ ৪টি স্থানে আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য দরপত্র আহবান করে। পরে হাসমত এন্ড ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় কার্যাদেশ পান। কার্যাদেশ পাওয়ার পর গত ২০দিন ধরে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নির্মাণ কাজের শুরু থেকে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজে অনিয়ম করে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ মেনে যেভাবে কাজ করার কথা সেভাবে কাজ করছেন না। ৭-৮টি গ্রামে পানি নিষ্কাশনের জন্য এ ড্রেন ব্যবহার করা হবে। নিন্মমানের কাজ করা হলে অল্প সময়ের মধ্যে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টান কাজের সঠিক নজরদারি করলে অনিয়ম করতে পারবে না।
বাড়ি মজলিশ এলাকার ইমরান হোসেন বলেন, ঢালাইয়ের পর কিউরিং না করেই ময়লা আবর্জনা দিয়ে ঢালাইয়ের ফাঁকা স্থান ভরাট করছেন। ময়লা আবর্জনার দুগর্ন্ধে আশপাশে বসা যাচ্ছে না। এমন দূর্নীতিবাজ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
মোগরাপাড়া এলাকার আবুল মেম্বার জানান, ড্রেন নির্মাণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি শেষ হবে। তবে নির্মাণ কাজে অনিয়ম থাকলে ড্রেনটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম রোধে প্রশাসনের নজরদারি দরকার।
হাসমত এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী হাসমত আলী হাসু বলেন, কার্যাদেশ মেনে নির্মাণ কাজ করছেন। নির্মাণ কাজে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। ড্রেনের মাটি সরিয়ে কাজের অন্য সাইডে নেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশে ঢালাইয়ের ফাঁকা অংশে বালুর ব্যবহার উল্লেখ নেই। তবে সঠিক নিয়মে তার প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান বলেন, বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে অবগত হয়েছি। সওজের কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অনিয়মের প্রমাণ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আল রাজী নিলয় বলেন, ঠিকাদারী কাজে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। কার্যাদেশ মেনেই কাজ করতে হবে। অনিয়মের প্রমান পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।